বাহন সংকট কিংবা করোনা ঠেকাতে পারেনি ঈদযাত্রা

Passenger Voice    |    ০১:৩৫ পিএম, ২০২১-০৫-১০


বাহন সংকট কিংবা করোনা ঠেকাতে পারেনি ঈদযাত্রা

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আসলাম মিয়া। ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ফুটপাতে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। পরিবারের সবাই গ্রামের বাড়িতে থাকে। সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধের কারণে ঈদের বাজারে জমজমাট বিক্রি না হওয়ায় বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

পূর্বপরিকল্পনা মতে শুক্রবার সেহরি খেয়েই ফজরের নামাজের পর সকাল পাঁচটায় বের হোন মাওয়ার উদ্দেশে। পিকআপে করে গুলিস্তান থেকে মাওয়া পৌঁছান দেড়শ টাকার বিনিময়ে। সকাল ৬টায় ফেরিতে ৩০ টাকা দিয়ে এক ঘণ্টায় যাত্রা শেষে নদী পার হোন। পরে সিএনজিতে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে আড়াই ঘণ্টা পর বরিশালের নথুল্লাবাথ বাস ষ্টেশনে পৌঁছান। এরপর বাসযোগে গ্রামের বাড়ি যান।

এতো কষ্ট করে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে যেন স্বর্গ সুখের অনুভূতি আসলাম মিয়ার। ডাবল ভাড়া ও কষ্টের যাত্রায়ও নেই তার কোনো অভিযোগ।

তিনি বলেন, ঢাকা থেকেই বা কি করব? কোনো বিক্রি নাই। বরং আয়ের চেয়ে কষ্ট বেশি। এর চেয়ে কম খাই, বেশি খাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছি, এতেই শুকরিয়া। করোনার ভয়ে আর কতো কষ্ট করব।

আসলাম মিয়ার মতো অনেকেই করোনাকালীন ঈদে রাজধানী ছাড়ছেন। এই ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় পথে পথে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ বা তিনগুণ। তাতেও থেমে নেই নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে সব স্তরের মানুষের বাড়ি যাওয়া। এদের অধিকাংশরই ধারণা করোনা গরিবের হয় না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান যেন তাদের কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।

ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন বাদল। তার বাড়ি বরিশাল পেরিয়ে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায়। গত বছর রোজার ঈদে বাড়ি যাননি। তাই এবার আগেই ছুটি নিয়ে বাড়ি যাবেন বলে ঠিক করেন। ফেরি বন্ধ শুনেও রোববার ইফতার শেষে রাতে যাত্রা শুরু করেন। লোকমুখে শোনা রাতে ফেরি চলে, সেই ভরসায় যাত্রা শুরু। মাওয়া পৌঁছান রাত ৯টায়। ঘাটে নেমেই দেখলেন মালবাহী ট্রাক ও অন্যান্য বাহন পার করতে ফেরি চলছে। সেই ফেরিতেই নদী পার হলেন। বিপত্তি ঘতে আরেক জায়গায়। রাত সাড়ে ১০টায় বরিশাল যেতে বাদলকে সিএনজি ভাড়া গুনতে হয়েছে ৫০০ টাকা। অর্থাৎ দিনের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া।

তিনি বলেন, সরকার লকডাউন দিলেও ঈদে মানুষের যাত্রা থেমে নেই। শুধু কি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বাড়ি যাচ্ছে? ঢাকা থেকে বহির্গমনের সব পয়েন্টেরই একই অবস্থা। মানুষ মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার কিংবা মালবাহী ট্রাকে বাড়ি যাচ্ছে। দূরপাল্লার বাস চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও গভীর রাতে কিছু বাস যাচ্ছে বলেও শুনেছি। এদিকে রাতে রাজধানী থেকে বের হওয়ার পয়েন্টগুলোতে নজর দিলেই মিল পাওয়া যায় বাদলের কথায়।

রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী, সায়দাবাদ ও যাত্রাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গণপরিবহন না থাকলেও ঘরে ফেরা মানুষ গন্তব্যে যাচ্ছেন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলে। ভাড়াও গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি। কুমিল্লা যেতে সাধারণ সময়ের ২০০ টাকার ভাড়া এখন গুনতে হচ্ছে ৬০০ টাকা। ফেনীর ৩০০ টাকার ভাড়া দিতে হচ্ছে ১২০০ টাকা। নোয়াখালী যেতে ৭০০ টাকার ভাড়া বর্তমানে দুই হাজার টাকা।

রোববার সকাল থেকেই থেমে থেমে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে ফেরি ছাড়তে দেখা গেছে। সকালে ও দুপুরে ফেরি শাহপরান ও ফেরি ফরিদপুর বাংলাবাজার ঘাটে পৌঁছায়। যদিও বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ম্যানেজার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এমনকি বিজিবি মোতায়েনের পরও রোববার সকাল থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল ছিল। বিজিবি সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে নানা কৌশলে যাত্রীরা ঢুকে পড়েন ঘাট এলাকায়। সারাদিনই দফায় দফায় হাজারো যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটেও রোববার সকাল থেকে উপচে পড়া ভিড় ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। ফেরি বন্ধের ঘোষণার পরও হাজার হাজার মানুষ ঘাটে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। যাত্রীদের অনেকই রাতে ফেরি চলার অপেক্ষায় করে, অ্যাম্বুলেন্স কিংবা মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে ফেরিতে উঠে নদী পার হয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বিআইডব্লিউটিসি) সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের বেলায় ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। তবে জরুরি সেবা এবং অ্যাম্বুলেন্স পরিবহনের জন্য আলাদাভাবে ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। এসব ফেরিগুলোতে লোকজন বেপরোয়াভাবেও উঠে যায়। এ জন্য বিজিবি মোতায়েন রয়েছে।’