লক্কড়-ঝক্কর গাড়িকে না দেখে ফিটনেস প্রদান

বিআরটিএর ৪ ঘুষখোর কর্মকর্তার দুর্নীতির জবাবচাই আদালত

Passenger Voice    |    ০১:৫৫ পিএম, ২০২১-০২-২৭


বিআরটিএর ৪ ঘুষখোর কর্মকর্তার দুর্নীতির জবাবচাই আদালত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ অবৈধ ঘুষ লেনদের মাধ্যমে পরির্দশন ছাড়া যানবাহনের ফিটনেস দিচ্ছে বিআরটিএর বেশ কয়েকজন মোটরযান পরিদর্শক এমন কিছু তথ্য নিয়ে প্যাসেঞ্জার ভয়েস বিভিন্ন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। প্যাসেঞ্জার ভয়েসের প্রতিবেদনে এই সব ফিটনেস প্রদানে গাড়ি প্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ পাওয়া যায় বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারী বিআরটিএর চেয়ারম্যানের আদেশকেও দেখিয়েছে বৃদ্ধাঙ্গুলি “মোটা টাকার ঘুষ নিয়ে গাড়ির ফিটনেস দেয় ঝিনাইদহ বিআরটিএর পরিদর্শক মঈদুর” শিরোনামে বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিআরটিএর কতিপয় মোটরযান পরিদর্শকদের এমন অনিয়মের  বিষয়টি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নজরে পৌছিয়েছেন। বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গত ১১ ফেব্রুয়ারী সকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)তে এখনো দালালদের দৌরাত্ম্য থাকায় দুঃখজনক । সেতুমন্ত্রী বলেন, অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে বাইরের সুবিধাভোগীদের সখ্যাতায় গড়ে উঠেছে এ চক্র। তাই যেসব কর্মকর্তা এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে চেয়ারম্যানকে নির্দেশদেন তিনি। প্যাসেঞ্জার ভয়েসে প্রতিবেদন প্রকাশ ও সেতুমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পর বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলের এইসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে ও সচ্চতা ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত কল্পে এবং সংস্থাটির ভাবমুর্তি রক্ষায় বিআরটিএর এনফোর্সমেন্ট শাখাকে নির্দেশনা প্রদান করে।

নির্দেশনা অনুযায়ী বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ তাছলিমা আকতার ঢাকা মহানগরীতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে তিনি দেখেন ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৬৭২৩ নং গাড়িটি দ্রতগামী পরিবহনের ব্যানারে পরিচালিত হয়ে আসছে। এই গাড়ির রুট পারমিট আছে মহাখালী, শরিষাবাড়ী, ভায়া আশুলিয়া, কালিয়াকৈর, টাঙ্গাইল পর্যন্ত। গাড়িটির ফিটনেস দিয়ে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান।  রুট পারমিটের শর্ত ভঙ্গ করে গাড়িটি কিভাবে সিরাজগঞ্জ বিআরটিএ সার্কেলের ফিটনেস দিয়েছে এই বিষয়ে মোটরযান পরিদর্শক মো. মেহেদী হাসানের কাছে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে উপযুক্ত ব্যাখা চেয়েছে আদালত ৯ এর এই ম্যাজিস্ট্রেট। 

এদিকে বিআরটিএর চেয়ারম্যানের আদেশের তোয়াক্কা না করে রাজধানীর নগর পরিবহনের  সবচেয়ে বেশি বাসকে ফিটনেস দিয়েছে বিআরটিএ বগুড়া সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক এস এম সবুজ ও মোটরযান পরিদর্শক মো. হাসান। ঢাকা মহানগরীতে চলাচলরত পরিস্থান এবং বসুমতি পরিবহনের ব্যানারে পরিচালিত ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৮১৫৬ এবং ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৭১১২ নং গাড়ি দুইটি মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, টেকনিক্যাল, মিরপুর-০১, মিরপুর-২, খিলক্ষেত, এয়ারপোর্ট, আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত চলাচলের রুট পারমিট দিয়েছে বিআরটিএ। অথচ এই গাড়ি গুলো কোন রকম পরিদর্শন ছাড়ায় ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে বিআরটিএর বগুড়া সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক এস এম সবুজ ফিটনেস প্রদান করে।  এদিকে প্রজাপতি পরিবহনের ব্যানারে পরিচালিত চলাচলের অনুপযোগী ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৮৮৪২ নং গাড়িটি গত ১ সেপ্টেম্বর ফিটনেস দিয়েছে একই সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মো. হাসান। এই গাড়িটির চলাচলের জন্য পারমিট আছে বসিলা, আসাদগেইট, শ্যামলী, কল্যাণপুর, মিরপুর ১-২-১০-১১, কালশী, ইসিবি চত্বর, এয়ারপিার্ট, কামারপাড়া পর্যন্ত। এমনকি এই গাড়িটি চলাচলের অনুপযোগী নয় বলে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে জানিয়েছে আদালত ৯ এর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ তাছলিমা আকতার । 

একই ভাবে চলাচলের অনুপযোগী বলাকা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব-১৫-৫৬০২ নং গাড়িটি বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক এফ এইচ এম মঈদুর রহমান গত ২ সেপ্টেম্বর ফিটনেস প্রদান করেছেন। এই গাড়িটি সায়েদাবাদ, মগবাজার, নাবিস্কো, মহাখালি, কাকলী, এয়ারপোর্ট, আজিমপুর হয়ে গাজিপুর পর্যন্ত চলাচলের রুট পারমিট দিয়েছে বিআরটিএ।  এই ৪ জন মোটরযান পরিদর্শকে  ১০ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে উপযুক্ত ব্যাখা প্রদানের নির্দেশনা দিয়েছে বিআরটিএর আদালত-৯ এর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ তাছলিমা আকতার।

সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর ৩৫.০০.০০০০.০২০.২২.০৪১.১৮-৬৯৯ নং সংক্ষক প্রজ্ঞাপন জারি করে রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোটরযানের ফিটনেস যে কোন সার্কেল থেকে করার অনুমতি দিয়েছিল বিআরটিএ। এই আদেশের পরে বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলের কতিপয় দুর্নীতিবাজ মোটরযান পরিদর্শক যানবাহন পরিদর্শন না করে মোটা টাকার ঘুষের বিনিময়ে লক্কর, ঝক্কর গাড়িকে ফিটনেস প্রদান করা শুরু করেছিল। এইসব দুর্নীতিবাজ মোটরযান পরিদর্শকদের বেপরোয়া স্বভাব দেখে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ৩৫.০৩.০০০০.০০৩.২৫.০৩৬.১৯-২৬৯৮ নং স্বারকে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এই কর্মকর্তাদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেছে বিআরটিএ। তবে এমন নির্দেশনা মানতে নারাজ বিআরটিএর কতিপয় ঘুষখোর কর্মকর্তা। গত কয়েকবছর আগে চলাচলের অনুপযোগী এমন গাড়িতে ঘুষ গ্রহনের মাধ্যমে মিরপুর বিআরটিএতে ফিটনেস প্রদান করায় দীর্ঘদিন বরখাস্ত ছিল মোটরযান পরিদর্শক আনিছুর রহমান এছাড়া এই সংস্থাটির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কোন দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা নজির নেই ফলে চরমভাবে বেপরোয়া হয়ে যায় তারা। 

২০২০ সালের ৪ অক্টোবর বিআরটিএর চেয়ারম্যানের আদেশে স্পষ্ট উল্লেখ্য ছিল যে, যে গাড়িটির রুট পারমিট যে রুটে রয়েছে ওই গাড়িটি চলাচলের রুটের যে কোন সার্কেল উক্ত গাড়ির ফিটনেস প্রদান করতে পারবে। রুটে চলাচলের বাধ্যবাধকতা লঙ্গিত হচ্ছে এমন কোন গাড়ি অন্য সার্কেল ফিটনেস প্রদান করার কোন সুযোগ নেই। বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী নগর পরিবহনের এই বাস ও মিনি বাস ঝিনাইদহ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এলাকায় যাওয়া কোন ভাবে সম্ভব নয়। প্যাসেঞ্জার ভয়েসের সূত্র বলছে এই যানবাহন গুলো পরিদর্শন না করে প্রতি গাড়ি প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহনের মাধ্যমে ফিটনেস সনদ ইস্যু করেছে বিআরটিএর এইসব সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শকগণ। তবে এমন অপকর্ম করে কোন ভাবে অনুতপ্ত নন তারা। তাদের ভাষ্যমতে বিআরটিএতে চাকরী, বদলী, পদায়ন সবকিছুতে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করতে হয়। সে টাকা ইনকামে দায়িত্ব পেয়ে মরিয়া হয়ে উঠে তারা। 

এদিকে সরকারী চাকরির বিধিমালায় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারী আদেশ অমান্য করণে সরকারি কর্মকর্তার শাস্তির বিধান। এমন অপরাধে উক্ত কর্মকর্তার Compulsory retirement, removel from service, dismissal from service, reduction to a lower post or time-scale এমন সাজাও হতে পারে।