শিরোনাম
Passenger Voice | ০৪:২৭ পিএম, ২০১৯-১১-২৩
রাজধানীর গণপরিবহনে চাঁদাবাজির ঘটনা দীর্ঘ দিনের। সড়ক সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ন্ত্রণে চলা চাঁদাবাজির টাকায় একেকজন শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সম্প্রতি শুরু হওয়া দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যেও তাদের তৎপরতা থেমে নেই। তবে গডফাদাররা বেশ সতর্কতার সঙ্গেই চলছেন। ঢাকার টার্মিনালগুলো থেকে প্রতিদিনই প্রায় দুই কোটি টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্ট চলে এই চাঁদাবাজি। দীর্ঘদিন ধরে নীরবে চাঁদাবাজির ঘট’না ঘটলেও সরকার ঘোষিত শুদ্ধি অভিযানের পর থেকে বিদ্যমান একাধিক পক্ষ একে অপরকে দোষা’রোপ করছে চাঁদাবাজির জন্য। গত এক সপ্তাহে সড়ক সংশ্লিষ্ট দুই সংগঠন পরপর সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজদের তথ্য প্রকাশ করে।
শুধু তাই নয়, ঢাকার সড়কের গডফাদারদের নামও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। সড়ক সংশ্লিষ্ট সংগঠনের ওই নেতাদের ভাষ্যে, মালিক সমিতির এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক তকমা লাগিয়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। তার অনুসারী সন্ত্রাসী বাহিনী সকাল থেকে রাত অবধি বাস থেকে চাঁদা আদায় করে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের বাস চালকদের প্রতিদিন ১ হাজার ২শ থেকে ২ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হয়। বিশেষ করে ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, গাবতলী, আব্দুল্লাহপুরসহ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা আদায় করে। একেক রুট থেকে ৬ থেকে ৭ ধাপে চাঁদার টাকা তোলা হয়। পরিবহন শ্রমিকরা জানান, টঙ্গী পেরিয়ে ঢাকার সীমানায় প্রবেশ করলেই প্রতি বাস থেকে টাকা আদায় শুরু হয়। এই রুট থেকে সদরঘাট আসা পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিভিন্ন অংকের চাঁদা দিতে হয়। শুধু তাই নয়, অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশও এই টাকায় ভাগ বসান। চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মালিকরাও।
এসব চাঁ’দাবাজি বন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে সম্প্রতি প্রেসক্লাবে সড়ক-পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে নয় দফা দাবির কথাও উল্লেখ করেন। ঢাকার সড়কে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রকের নাম প্রকাশ করতে গিয়ে সংগঠনটির সদস্য সচিব ইসমাইল হোসেন বাচ্চু বলেন, একজন ‘গডফাদার’ সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি গত কয়েক বছরে নিজস্ব পরিবহন সংস্থার ব্যানারে শত শত বাস নামিয়েছেন। মালয়েশিয়া, কানাডা ও থাইল্যান্ডে বিপুল সম্পদ পাচার করেছেন। সাংবাদিকরা ওই গডফাদারের নাম জানতে চাইলে তিনি সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যার কথা উল্লেখ করেন।
এই সদস্য সচিব আরো দাবি করেন, এনায়েত উল্ল্যাহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তিনি বলেন, এখনও পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের হাতে। তারা সায়েদাবাদ, মহাখালী, গাবতলী ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনাল কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাও রয়েছেন। তাদের অপসারণ করা না গেলে পরিবহন খাতে নৈরাজ্য দূর হবে না। এই সদস্য সচিব অভিযোগ করেন, গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে পুলিশ প্রতিদিন চালক-মালিকদের হয়রানি করছে। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বিরুদ্ধে সীমাহীন চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজুল হক বলেন, চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ বাস মালিকরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই দুর্দশা দেখার কেউ নেই। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সমিতির প্রভাবশালীদের ভয়ে সাধারণ মালিক, শ্রমিকরা মুখ খুলতে সাহস পান না। বাস টার্মিনালগুলোতে চাঁদাবাজি বন্ধ ও দুর্নীতিবাজ মালিক-শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বাড্ডা হয়ে ভিক্টর ক্লা’সিক নামের একটি বাস যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি হাত উঁচিয়ে সংকেত দিলে ধীরগতি করে বাসের কন্ডাক্টর টাকা বের করে দেন। একই চিত্রের দেখা মেলে মিরপুর থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বাস ইউনাইটেড-এ। মিরপুর ১২ থেকে ছেড়ে আসার পর কাজীপাড়ায় বাসটির কন্ডাক্টরকে দেখা যায় পকেট থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। মিরপুর মতিঝিলে রুটে শিকড়, সময় নিয়ন্ত্রণ ও দিশারীসহ কয়েকটি পরিবহনের প্রায় এক হাজার বাস চলাচল করে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি দিন একটি বাসের মালিককে কমপক্ষে সাড়ে ৮শ’রও বেশি টাকা গুনতে হয়। এর মধ্যে টার্মিনাল চাঁদা ৪৫০ টাকা এবং সিরিয়াল ও সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দিতে হয় ৩৩০ টাকা। সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের অনেকে গণপরিবহনে নৈরাজ্যের পেছনে ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া চাঁদাবাজির কথা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেছেন, যখন যে দল সরকারে আসে চাঁদার নিয়ন্ত্রণ সেই দলের পরিবহন সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও তাদের ক্যাডারদের হাতেই থাকে। সাধারণ পরিবহণ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পরিবহন চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে রাজধানীতে খুনোখুনির ঘটনাও কম হয়নি। কিন্তু পরিবহন চাঁদাবাজি কখনো থেমে থাকেনি। এর মধ্যে আরেক খবর হলো চাঁদাবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী পরিহবনগুলোর কয়েকটি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে দিতে দেউলিয়া হয়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। গত দুই বছরে এক ডজনের মতো নতুন বাস নেমেছে শহরের বিভিন্ন রুটে।
এসব রুটের নিয়ন্ত্রণ ও পরিবহনগুলোর মালিকানা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হাতে। দলীয় পরিচয় ছাড়া নতুন কোনো ব্যবসায়ী এসব রুটে বাস নামাতে চাইলে প্রথমেই তাদের সংশ্লিষ্ট রুট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ধার্য করে দেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। আর প্রথম ধাক্কায় মোটা অংকের টাকার কথা শুনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন নতুন ব্যবসায়ীরা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাজীপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক, কাজলসহ বেশ কয়েকজন নিয়ন্ত্রণ করেন। সেখানে কোনো বাস থেকে ট্রিপ প্রতি ৩০ টাকা, কোনো বাস থেকে ৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলেন তারা। আবার এই রুটেই বাড্ডায় আসলে ফজলু নামের এক নেতা নেন ২২০ টাকা। গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের ইজারা বাবদ ১৩০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে প্রতি বাস থেকে ৩৩০ টাকা করে দিতে হয় চালকদের। অন্যদিকে সদরঘাট গেলে প্রতি বাস থেকে দিনে ৪৫০ টাকা নেন আশরাফ নামের এক পরিবহন নেতা। অনুসন্ধানে জানা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালে চাঁদা আদায় করে আতিক এবং মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে দুটি গ্রুপ। মহাখালী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সাদেকুর রহমান হিরু ও শহীদুল্লাহ সদুর হাতে।
সায়েদাবাদে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণে আছে আবুল কালাম আজাদ, নয়ন, করম আলী, মনির চৌধুরী, আলী রেজা ও আমির হোসেনের হাতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর বেশ কয়েকটি রুটের পরিবহন মালিক জানান, বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক ক্যাডার ও পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে লাভের টাকা মালিকের পকেটে যাওয়ার আগে পথেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। তারা আরও বলেন, পরিবহন সংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি এখন চাঁদা দিতে হয় এলাকাভিত্তিক পলিটিক্যাল ক্যাডারদেরও। নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের স্থান না থাকায় রাতে সরকারি রাস্তায় গাড়ি রাখলেও থানা পুলিশের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক পলিটিক্যাল ক্যাডারদের নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। সাধারণ মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, চাঁদার নির্ধারিত এ টাকা দিতে না পারলে রাস্তায় গাড়ি নামানো যায় না। বরাবরে বাসের চালক ফারুক বলেন, আমরা তো রাস্তায় থাকি , যত কষ্ট আমাদের।
একদিন বাস না চালালে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামলেই জায়গায় জায়গায় টাকা ছাড়তে হয়। না হলে বাস আটক করে রাখে। টাকা দিতে না চাইলে গ্লাস ভাঙে। আবার মাঝে মধ্যে মারধরও করে। আবার আমরা বাস না চালাইলে মালিকেরও সমস্যা। তাকে যে টাকা দেই সেটা থেকে আবার কোম্পানির লোকজনদের দিতে হয়। সমিতিতে টাকা পয়সা দিতে হয়। সারাদিন যা ইনকাম হয় সেখানে মালিকের খুব বেশি টাকা থাকে না। সব মানুষের পেটে চলে যায়। একই চাঁ’দাবাজির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার তুরাগ পরিবহনের এক চালক জানান, সকালে বাস নামাইলেই স্ট্যান্ডে ৫০ টাকা দিয়া গাড়ি স্টার্ট দিতে হয়। নাইলে গাড়ি চালাইতে দেয় না। রামপুরা আসলে দিতে হয় আরো টাকা। প্রতিদিন যে টাকা ইনকাম হয় তার বেশিরভাগ চলে যায় রাস্তার খরচে।
এনার মালিক এনায়েত উল্লাহ
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ রাজধানী ও এর আশেপাশে বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৫ হাজার বাস থেকে দৈনিক ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁ’দা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমন অভিযোগ বাস চালক ও মালিকদের। তারা বলেন, দেশের পরিবহন খাত এনায়েত উল্লাহর কব্জায় জিম্মি। এ দশা থেকে মুক্তি পেতে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার দাবি ও তাদের। তিনি গত জোট সরকারের সময়েও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তখন এই সংগঠনের সভাপতি ছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বর্তমানে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। বর্তমানে বিএনপি নেতা সেই খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ভোল পাল্টে নব আওয়ালীগ সেজে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সারাদেশে চাঁদাবাজি করছে। এতে মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। মহাজোট সরকারকে বিব্রত করার জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ৬৫ বার পরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে।
সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মোজাহারুল ইসলাম সোহেল জানান, পরিবহন খাতে দৈনিক যে চাঁদ ওঠে। মাসে এই চাঁ’দার পরিমান দাঁড়ায় ৩২ কোটি টাকায়। যার পুরোটাই যাচ্ছে সিন্ডিকেটের কাছে। এই সিন্ডিকেটে আবার আওয়ামী লীগ বিএনপি ও জামায়াত মিলে একাকার। এর মধ্যে সরকার দলীয় প্রভাবশালীরা প্রথমে একটি কোম্পানি খোলেন। এরপর বিভিন্ন বাস মালিকরা বাস চালাতে দেন। এ জন্য বাস প্রতি দিতে হয় দুই থেকে বিশ লাখ টাকা।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় থাকলেও বাংলাদেশের পরিবহন সেক্টরের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পরিচালিত হচ্ছে জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি হালাল করার জন্য তারা এই ফেডারেশনে মাত্র ২/১ জন আ’লীগ ও সমমনা দলের প্রতিনিধি রেখেছেন। জামায়াত-বিএনপির নেতৃত্বাধীন এই ফেডারেশন প্রতিদিন রাজধানীর ৪টি বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে। এসব অভিযোগে সম্বলিত একটি অভিযোগ পত্র প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওই অভিযোগ অনুযায়ী জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই জামায়াত-বিএনপির। এই ফেডারেশনের অন্তর্ভূক্ত সংগঠন পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ প্রতিদিন রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে। অভিযোগকারীদের দাবি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও বাংলাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনও পরিবহন শ্রমিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার নীচপনুয়া গ্রামের বাসিন্দা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। তিনি ১৯৮৪ সালে গুলিস্তান মিরপুর রোডে একটি মিনিবাস দুইজনে পার্ট’নারে ক্রয় করে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন। যার মূল্য ছিল মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। সেই এনায়েত উল্লাহ বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাসের হাত মিলিয়ে ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর সেই সময়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মির্জা আব্বাস ও খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
আরও অভিযোগ আছে বর্তমানেও মির্জা আব্বাস, সাইফুল, বাতেনসহ বিএনপি’র নেতা কর্মীদের লাখ লাখ টাকা গোপনের ডোনেশন দিয়ে আসছেন। কারণ বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবারও ভোল পাল্টে দল বদল করে পুনরায় ক্ষমতা পাওয়ার লোভে। এছাড়াও ঢাকা পরিবহন, গাজীপুর রোডে, ঢাকা চাকা, গ্রিন ঢাকা নামক শহরে প্রায় ১৫টি রোডে চলাচলকৃত গাড়ি ও কুমিল্লা রোডে প্রিন্স ও মতলব পরিবহন, নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও সাইফুল এবং এই সকল পরিবহনের উপার্জিত অর্থ চলে যাচ্ছে বিএনপি ও ক্যাডারদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। এরপরও এই সকল কোম্পানির গাড়ি ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।
জানা যায়, নিহত পরিবহন শ্রমিক হ’ত্যা মামলার অন্যতম আসামী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী এড. মামনুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে পুলিশ গ্রেফতার করলে তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করে মহাজোট সরকারকে নাজেহাল করার চেষ্টা করে এই এনায়েত উল্লাহ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ তাদের অভিযোগে আরো উল্লেখ করে জয় বাংলার বিরুদ্ধে অবস্থানকারী বামপন্থী নেতা নিজে স্বাক্ষর করে সরকারের বিভিন্ন জায়গা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ বাতিল করার আবেদন করে এবং গত ১০ নভেম্বর ২০১৪ পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগকে প্রতিহত ও প্রতি’রোধ করারও ঘো’ষণা দিয়েছিলেন।
সেই এনায়েত উল্লাহই আবার ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মকবুল সাহেবের হাতে পায়ে ধরে স্ব-পদে বহাল থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পরে বর্তমানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দায়িত্বগ্রহণ করেন এনায়েত উল্যাহ।
খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন টার্মিনালের দক্ষ শ্রমিক নেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে *দিয়ে অদক্ষ গাড়ীর শ্রমিক ও অদক্ষ শ্রমিক নেতা দ্বারা পরিচালিত করছেন ঢাকা শহরের সব কয়টি বাস টার্মিনালে। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এবং সেইসাথে চলছে পরিবহনে মাত্রাতিরিক্ত চাঁদাবাজী। গাড়ী প্রতি নেয়া হচ্ছে এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকা চাঁদা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, খন্দকার এনায়েত উল্লাহর দেশে-বিদেশে নামে-বেনামে অবৈ’ধ সম্পদের বিশাল পাহাড়। ধানমন্ডিতে একটি ও গুলশানে কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে।
পূর্বাচল সংলগ্ন ৩০০ ফিট রাস্তার পার্শ্বে প্রায় শত বিঘা জমি। সারাদেশে এনা পরিবহন প্রায় আটশ’র উপরে গাড়ি রয়েছে। প্রতিটি গাড়ির মূল্য প্রায় এক থেকে দেড় কোটি টাকা। সিলেটে কয়েক বিঘা জমির উপরে এনা পরিবহনের নিজস্ব গাড়ীর টার্মি’নাল। ময়মনসিংহ, ভালুকায় রয়েছে ২৩ বিঘা জমির উপর এনা ফুডস নামের বিশাল ফ্যাক্টরি। মালয়েশিয়া ও কানাডায় রয়েছে সেকেন্ড হোম। ময়মনসিংহে প্রায় শত বিঘা জমি। মিরপুর রয়েছে বহুতল ভবনের ৭টি বাড়ী। কক্সবাজার কুয়াকাটাতে আবাসিক হোটেল। হবিগঞ্জ-মাধবপুরে কয়েক বিঘা জমির উপর হোটেল। ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে খন্দকার ফুড নামে একটি বিশাল রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মহাখালীতে নিজস্ব জায়গায় বিশাল এনা পরিবহনের অফিস।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, চাঁ’দাবাজীর জন্য পরিবহন কোম্পানিগুলো দায়ী। তিনি দাবি করেন, আমি বা আমার সংগঠনের নাম মাত্র চাঁ’দা নেন। যা ব্যবহার করা হয় সংগঠনের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.