শিরোনাম
Passenger Voice | ০১:০৭ পিএম, ২০২৫-১২-০৯
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার জন্য পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইজারা নেওয়ার পর পরই অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করছে তারা। ৫ প্রতিষ্ঠানকে ৫টি জোনে বালু উত্তোলনের ইজারা দিলেও তারা বালু উত্তোলন করছে তাদের ইচ্ছেমতো।
ফলে সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পট গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ধ্বংস হচ্ছে বন ও পরিবেশ। চরম হুমকির মধ্যে পড়ছে উপজেলা উপকূলে বসবাসকারী জেলে পল্লীর বাসিন্দারা। জানা গেছে, সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলনের কখনো কোনো অনুমোদন ছিল না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সাগরের গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। এ কারণে কমতে পারে মাছের প্রজনন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাগর থেকে উত্তোলন করা বালু প্রতি ঘনফুট ৫ থেকে ৭টাকা পর্যন্ত করে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫টি বাল্কহেড ও ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। আর বালুগুলো সাগর পথে নিয়ে যাওয়া হয় ভোলা, বরিশাল, খুলনা, হাতিয়া ও নোয়াখালী চরাঞ্চল এলাকায়।
কুমিরা ফেরিঘাট সংলঘ্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, একাধিক স্ক্যাভেটর দিয়ে কৃষি জমি কাটা হচ্ছে। এস্কক্যাভেটর ড্রাইভার বলেন, সাগর থেকে বালু উত্তোলন করে এখানে রাখার জন্য কৃষি জমিগুলো কেটে গর্ত করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলাউদ্দিন বলেন, এই জমিগুলো সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজের। জোর করে জমিগুলো দখলে নিয়ে কেটে বালু রাখার জন্য প্রস্তুত করছে বন্দর থেকে বালু উত্তোলনকারী একটি প্রতিষ্ঠা ন। এ ছাড়া পরিত্যক্ত শীতল নামক একটি শিপইয়ার্ড সংলঘ্ন এলাকায় বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে সাগর থেকে উত্তোলন করা বালু।
সম্প্রতি বালু উত্তোলনের ১৩টি বাল্বহেড জব্দ করেছে সীতাকুণ্ডের কুমিরার নৌ-পুলিশের টিম। জব্দ করা এসব বাল্কহেডের কোনো অনুমোদন বা নিবন্ধন নাই বলে জানিয়েছে নৌ-পুলিশ। কুমিরা নৌ পুলিশ জব্দ করা অবৈধ বালু উত্তোলনের যন্ত্রগুলো আদালতে প্রসিকিউশন দিলেও পরবর্তী সময়ে মালিকরা বাল্বহেডগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আবার বালু উত্তোলন করছে সাগর থেকে।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্বে পাহাড় ও পশ্চিমে সাগর। এক কিলোমিটার জায়গার মধ্যে যদি সাগর থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে তাহলে পরিবেশ ধ্বংস হবে আর স্থানীয় বসতিরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী-পরিচালক রিসার্চ অফিসার মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বালু উত্তোলনের অনুমতি ডিসি অফিস দেয়। তবে আমরা বালু উত্তোলন এলাকায় কোনো পরিবেশের ক্ষতি হলে তা পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দিতে পারি।
বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটটি প্রথমে তাদের কাছেই অনুমতির জন্য আসে। তারা মূলত চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ড অংশ থেকে বালু তোলার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু এই এলাকা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, কারণ এর বড় অংশজুড়ে রয়েছে জাহাজভাঙা শিল্প এবং একই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপের কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। উন্মুক্তভাবে বালু তোলার অনুমতি দিলে চার প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য বাল্কহেড নৌপথে অবস্থান করবে, যা জাহাজভাঙা শিল্পের বিচিং কার্যক্রম এবং নৌযান চলাচলকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে ফেলবে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মিরসরাই পর্যন্ত পোর্ট লিমিট বৃদ্ধির ফলে পুরো এলাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্দরের আওতায় এসেছে। বন্দরের অভ্যন্তরীণ এলাকায় নাব্যতা ধরে রাখতে ড্রেজিং করা নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ। তারই ধারাবাহিকতায় টেন্ডারের মাধ্যমে পৃথকভাবে ৫ প্রতিষ্ঠানকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত