শিরোনাম
Passenger Voice | ০২:০৫ পিএম, ২০২৫-১২-০৮
রাজধানী ও রাজধানীর আশপাশে চলাচলকারী বাসগুলোর রুট পারমিট ইস্যুতে কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে ঢাকা মেট্রো যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি (আরটিসি)। ঢাকার সড়কে হযবরল অবস্থায় চলতে থাকা বাসগুলোকে শৃঙ্খলায় আনতে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে এই কমিটি। পাশাপাশি সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন কমাতে এসি বাস নামানোর নানা তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কার্যালয়ে আরটিসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপস্থিত পরিবহন সংস্থা এবং পরিবহনমালিকদের সঙ্গে কথা বলে গতকাল রবিবার এসব তথ্য জানা গেছে।
রুট পারমিট ইস্যুতে কড়াকড়ি
রাজধানীর সড়কে ২৭৮টি রুটে চলাচলের অনুমোদন পাওয়া ১১ হাজার ৩১৫টি বাসের রুট পারমিট বাতিল করার কথা জানিয়েছিল আরটিসি। কারণ এসব বাস রুট পারমিট না নিয়েই ঢাকার সড়কে চলাচল করছে। আরটিসির হিসাবে ৯৫টি বাস রুটের অনেকটি এখন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব রুটে মিনিবাস নামিয়ে রুট চালু করতে অনেক বাসমালিক আরটিসিতে আবেদন করেছেন। আরটিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনারের (ট্রাফিক) নেতৃত্বে আরটিসি একটি পরিদর্শন কমিটি গঠন করে দেবে।
এই কমিটি ঢাকার অচল রুটগুলো নিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন জমা দেবে। পাশাপাশি সচল থাকা ৯৫টি রুটে পারমিটবিহীন বাস চলাচল করছে কি না, তাও এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।
অনুমোদন নেওয়ার পরও যেসব রুটে বাস চলাচল করে না, তার কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট বাস কোম্পানিকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হবে। যৌক্তিক কারণ না দেখাতে পারলে ওই রুট বাতিল হয়ে যাবে।
রুট পারমিট পাওয়ার প্রক্রিয়া এবার কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আরটিসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, রুট অনুমোদনের ছয় মাসের মধ্যে পারমিট গ্রহণ না করলে অনুমোদন বাতিল হবে। বাসের সামনে ও উইন্ডশিল্ডে রুট নম্বর ও কোম্পানির নাম প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয় এ সভায়।
আরটিসি কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রুট পারমিট পেতে হলে মোটরযানটি অবশ্যই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধিত হতে হবে। নতুন রুট পারমিট পেতে হলে আবেদন করা বাস কোম্পানির বাসগুলোকে অটোডোর সিস্টেমের হতে হবে। ই-টিকেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে বাস সার্ভিস পরিচালনা বাধ্যতামূলক করা হবে। বাসের ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা থাকতে হবে। বাস পরিচালনার জন্য সব কাগজপত্র হালনাগাদ থাকতে হবে। বাসগুলো চলাচলের উপযোগী কি না (বডি, রং, সিট ইত্যাদি), সরেজমিনে পরিদর্শন করতে হবে মালিক পক্ষকে। সংশ্লিষ্ট মালিক মাসিক বেতন নির্ধারণ করে চালককে নিয়োগপত্র দিতে বাধ্য থাকবেন। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই হালনাগাদ করা থাকতে হবে। একই কোম্পানির সব বাসের রং একই হতে হবে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-অ্যাডমিন) মো. সরওয়ার সভায় বলেন, রুট পারমিট পেতে বাসমালিকরা যেসব আবেদন করেছেন, তার অনেকটিই অসম্পূর্ণ। সেসব আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
ব্যক্তিগত যানবাহন কমাতে এসি বাস নামাতে চায় আরটিসি
ঢাকায় ব্যক্তিগত যানবাহন কমাতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাস নামানোর পরিকল্পনা নতুন কিছু নয়। তবে এসি বাসগুলো ঢাকার কোন রুটে চলবে, ভাড়া কেমন হবে, এ নিয়ে বিতর্ক থামছে না। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আরটিসি সভাতেও এ নিয়ে কথা হয়েছিল বিস্তর। আরটিসি সভাপতি এবং ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী সভায় বলেছেন, ঢাকায় এসি বাস সার্ভিস চালু করলে ব্যক্তিগত প্রাইভেট কারের পরিমাণ কমে আসবে।
তার ওই বক্তব্যের পর এসি বাস চালানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সভায় বিআরটিসির একজন প্রতিনিধি বলেন, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) করিডর দিয়ে এখন ফার্মগেট থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী পর্যন্ত ১০টি বিআরটিসি এসি বাস চলাচল করছে। এই রুটে যানজট থাকায় যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারেন না।
বিআরটিসি বিভিন্ন রুটে নন-এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করলেও এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেনি। দুই ধরনের ভাড়া নিয়ে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে বিআরটিসির এসি বাসচালকের সহযোগীদের তর্ক বাধে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম বলেন, বিভিন্ন রুটে এর আগে এসি বাস চলেছে। কিন্তু একেক রুটে ভাড়া ছিল একেক রকম। এতে যাত্রীরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। এ ছাড়া এসি বাস পরিচালনার ব্যয় নন-এসি বাসের তুলনায় অনেক বেশি। এসি বাস সড়কে নামানোর আগে তাই এর ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) একজন প্রতিনিধি ওই সভায় বলেন, ঢাকা মহানগরে একটি বাস সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত চলাচল করে। বাসে যাত্রী পূর্ণ থাকে ৮-৯ ঘণ্টা। বাকি সময়ে যাত্রী না পাওয়ায় বাসমালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ রকম পরিস্থিতিতে এসি বাস সার্ভিস চালু করতে হলে সরকারকে বেসরকারি বাসমালিকদের সাবসিডি দিতে হবে।
টার্মিনালের বাইরে কোনো বাস নয়
ঢাকা মহানগরীর তিনটি আন্তজেলা বাস টার্মিনালসংলগ্ন সড়কে বিভিন্ন কোম্পানির বাস বিশৃঙ্খলভাবে পার্কিং করে রাখা হয়। এতে সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালীতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। টার্মিনালের বাইরেও বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির টিকিট কাউন্টার রয়েছে। আরটিসি সভায় এসব কাউন্টার অপসারণ করতে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, বাইরের জেলাগুলোর যেসব বাস ঢাকায় প্রবেশ করছে, সেসব বাসের রুট পারমিট আন্তজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত ইস্যু করতে হবে। ওই জেলা বা উপজেলাগুলো থেকে ঢাকা পর্যন্ত রুটে কত বাস চলাচল করে, বাসমালিকদের তা জানাতে হবে আরটিসিকে।
আরটিসি সভায় পরিদর্শন করে কালো ধোঁয়া নির্গমন করা ফিটনেসবিহীন রংচটা গাড়ির তালিকা প্রস্তুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো গাড়ি ফিটনেস হারিয়ে থাকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা অপসারণ করতে বাসমালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে।
প্যা.ভ.ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত