নাজিরারটেকের শুঁটকি রপ্তানির লক্ষ্য ৪০০ কোটি টাকা

Passenger Voice    |    ১১:২১ এএম, ২০২৫-১২-০৪


নাজিরারটেকের শুঁটকি রপ্তানির লক্ষ্য ৪০০ কোটি টাকা

কক্সবাজারের নাজিরারটেকে শুরু হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকির মৌসুম। সমুদ্রতীরের বিস্তীর্ণ বালুচরে সারিবদ্ধ বাঁশের মাচায় দিনভর শুকাতে থাকে বিপুল পরিমাণ মাছ। নভেম্বর থেকেই জমে ওঠা এই মৌসুম চলবে আগামী জুলাই পর্যন্ত। মৌসুমজুড়ে নাজিরারটেক ও জেলার অন্যান্য উপকূলীয় মহাল থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদন ও বিদেশে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার রপ্তানির আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠা মহালে কাজ করেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক। এদের অধিকাংশ নারী। শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রধানত শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে বৃষ্টি না থাকলে অন্য সময়ও কিছু উৎপাদন হয়। সাগর থেকে ধরা তাজা মাছ তিন-চার দিন সূর্যের তাপে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি হয়। এরপর সেগুলো দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। কিছু শুঁটকি রপ্তানির জন্য প্যাকেটবন্দি করা হয়। নাজিরারটেক ছাড়াও নুনিয়ারছড়া, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, সোনাদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া, টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনে আরও তিন শতাধিক শুঁটকিমহালে সমানতালে উৎপাদন চলছে।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর)  নাজিরারটেক মহালে গিয়ে দেখা গেছে, ৫০টির বেশি মহালে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, ফাইস্যা, নাইল্যাসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে মাছ এনে মহালে বিক্রি করেন। রশিদা খাতুন (৩২) bfcm এক শ্রমিক বলেন, ‘ভোরে বাসা থেকে এসে সারা দিন মাছ ধুয়ে মাচায় সাজাই। কাজটা কষ্টের হলেও মৌসুমে ভালো আয় হয়। এই আয়ে সংসার চলে, বাচ্চাদের পড়ানোও হয়।’ নুরুল আমিন (৪১) বলেন, ‘গভীর সাগর থেকে মাছ এনে মহালে দেওয়া হয়। কখনো সাগরে যাওয়া কঠিন হয়, কিন্তু মাছ ভালো থাকলে সবাই লাভবান হয়। শুঁটকি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি আয় হয় আমাদের।’

আয়েশা বেগম (২৮) বলেন, ‘প্রতিদিন রোদে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়। তার পরও আমরা খুশি, কারণ নারী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বেশি। মৌসুমে প্রতিদিন যা পাই, তা দিয়ে ঘরের সব খরচ চলে যায়।’ ছাবের আহমদ (৪৫) বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি মাছ শুকায়। শ্রমিকের কাজ অনেক, কিন্তু অভিজ্ঞ হলে দ্রুতই করতে পারি। সবাই মিলে কাজ করি, তাই উৎপাদনও বেশি হয়।’ ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নাজিরারটেকে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙর, ফাইস্যা, নাইল্যা মাছসহ ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির শুঁটকি তৈরি হয়।’

বাজারে লইট্যা শুঁটকি প্রতি কেজি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ছুরি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০, পোয়া ৫০০ থেকে ৮০০, মাইট্যা ৮০০ থেকে ১ হাজার ৬০০, কোরাল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ আর রূপচাঁদা ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আ. ক. ম. নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘প্রায় ১০০ একর জায়গাজুড়ে অর্ধশতাধিক আড়ত ও প্রায় দুই হাজার ব্যবসায়ী যুক্ত। এখান থেকে প্রতিদিন ২০০ টন শুঁটকি উৎপাদিত হয়।’ কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওসমান গণি টুলু বলেন, ‘গত বছর হংকং, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় পোপা শুঁটকি রপ্তানি করে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আয় হয়। এ বছর উৎপাদন ভালো হলে রপ্তানি আয় ৪০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।’