শিরোনাম
Passenger Voice | ১১:৫৫ এএম, ২০২৫-১২-০৩
বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা। গ্রীষ্মের শেষে মে-জুন মাস থেকে শুরু করে শীতের শুরুতে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগরে একের পর এক ছোট-বড় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। এর কোনোটি বিধ্বংসী হয়ে উঠে, আবার কোনোটি স্থলভাগের কাছাকাছি আসার আগেই শক্তি হারিয়ে ফেলে। বঙ্গোপসাগরের ঠিক বিপরীতে ভারতের পশ্চিম উপকূলে রয়েছে আরব সাগর। সেখানে বিষয়টা অন্যরকম। আরব সাগরেও মাঝেমধ্যে ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধে। তবে তা সংখ্যায় এত বেশি নয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার বিশেষ কারণ রয়েছে।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে পর পর দুটি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে অনেক দূরে দক্ষিণ প্রান্তের এই ঝড়গুলো বিস্তর বিপর্যয় ঘটিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ারকে সরাসরি ‘বিরল’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি ইন্দোনেশিয়া এবং থাইল্যান্ডে তাণ্ডব চালিয়েছে। দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৬৫০। সেনিয়ার শান্ত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধে ঘূর্ণিঝড় দিটওয়া। এর প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থলভাগে আছড়ে না পড়েই ভারতের দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রে ৩৫০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পরে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উপকূলের সমান্তরালে ক্রমে উত্তরে এগিয়েছে এবং এক পর্যায়ে শক্তিও হারিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বঙ্গোপসাগরে বেশি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার মোট পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান: বঙ্গোপসাগর তিন দিক দিয়ে ভূমি দ্বারা বেষ্টিত। তাই সমুদ্রে উৎপন্ন হওয়া জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু অন্য কোনো দিকে যেতে পারে না। সাগরে আটকে পড়ে। পানির ওপর থাকতে থাকতে বায়ুর শক্তি বাড়ে এবং ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। ক্রমে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। আরব সাগরের উত্তর এবং পূর্ব দিকে স্থলভাগ থাকলেও বাকি দুই দিক খোলা। তাই এখানে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু আটকে পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।
পানির উষ্ণতা: ঘূর্ণিঝড় তৈরির অন্যতম প্রধান কারণ সমুদ্রের পানির উষ্ণতা। আরব সাগরের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের পানি অনেক বেশি উষ্ণ। এখানে পানির তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এর ফলেও ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা বঙ্গোপসাগরে বেশি হয়।
আর্দ্র বায়ু: ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্র বায়ু বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। আরব সাগরের ক্ষেত্রে তা হয় না। তার চারপাশে পশ্চিম এশিয়ার মতো শুষ্ক স্থলভাগ রয়েছে। সেখান থেকে শুষ্ক বায়ু আরব সাগরের ওপরে আসে। তাতে আর্দ্রতা বেশি থাকে না।
খামখেয়ালি মৌসুমি বায়ু: দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু দ্বারা তুলনামূলক বেশি প্রভাবিত হয় বঙ্গোপসাগর। এই বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প বয়ে আনে। মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি স্বভাবের কারণে গোটা অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিস্থিতি অস্থির, অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। এর ফলে বাতাসের গতিবিধি বেশি হয়, যা ঘূর্ণিঝড় তৈরি করে।
পশ্চিমা ঘাট পর্বত: আরব সাগরের দিকে ভারতের পশ্চিম উপকূল জুড়ে রয়েছে বিশাল পশ্চিমঘাট পর্বত। পশ্চিম দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম প্রতিবন্ধক এই পর্বতমালা। বলা যায়, পশ্চিম উপকূলের রক্ষাকর্তা পশ্চিমঘাট। তার ফলে আর্দ্র বাতাস বাধা পায় এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। যদিও বর্তমানে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞানীদের হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে। আরব সাগরেও আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং অনেক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে। তবে বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি বদলায়নি।
বঙ্গোপসাগরের একেবারে পূর্ব প্রান্তে রয়েছে মালাক্কা প্রণালি। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের ভূখণ্ডকে বিচ্ছিন্ন করে ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রণালি। এর ঠিক পশ্চিমে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের পূর্বাংশ যা আন্দামান সাগর নামেও পরিচিত। কিছু দিন আগে এখানে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার। বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হলেও মালাক্কা প্রণালিতে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া অত্যন্ত বিরল। বিজ্ঞানীরা তাই বিস্মিত হন। ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার ইন্দোনেশিয়ার দিকে এগিয়ে সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছে। থাইল্যান্ডেও ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এই বিরল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে। মলাক্কা প্রণালি থেকে দূরে শ্রীলঙ্কার উপকূলের কাছে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় দিটওয়া। এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত