পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Passenger Voice    |    ০৪:২৯ পিএম, ২০২৫-১১-২৮


পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিস সরাফাত, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা, ছেলে সারাফাত চৌধুরীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ১৬১৩ কোটি টাকার অর্থপাচারের মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার সহযোগী ডক্টর হাসান তাহের ইমামকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৮ সালে রেইস ম্যানেজমেন্ট পিসিএল নামে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানীর লাইসেন্স গ্রহণ করেন। এরপর ২০১৩ সালের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি ১০টি মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে সম্পদ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির অধীনে ১৩টি ফান্ড রয়েছে। এই ফান্ডগুলোকে অবৈধভাবে সরাফাত ও তার সহযোগীরা ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়া, সরাফাতের স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শহীদ ও তাহের ইমামের সঙ্গে মিলে ফান্ডের অর্থ দিয়ে তৎকালীন ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) শেয়ার কেনেন। পরবর্তীতে ব্যাংকটির পর্ষদের পরিচালক পদ পান। এমনকি চৌধুরী নাফিস সরাফাত তার স্ত্রীকে সাউথইস্ট ব্যাংকেরও পরিচালক বানান। 

এতে আরও বলা হয়, এরপর অভিযুক্তরা ফান্ডের টাকায় একটি ব্রোকার হাউজ ক্রয় করেন। সেটির ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রতারণা করে ফান্ডের অর্থ হাতিয়ে নেন। এছাড়াও সরাফাত পদ্মা ব্যাংকের টাকা দিয়ে পদ্মা ব্যাংক সিকিউরিটিজসহ তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি নামের ফান্ড ক্রয় ও বিনিয়োগ করেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাল-জালিয়াতি করে হিসাব বিও  ও অন্যান্য ব্যাংক হিসাব খোলা ও পরিচালনাসহ রাজউক থেকে একাধিক প্লট হাতিয়ে নেন। সেখানে প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে বিদেশে অর্থ পাচারের পথ সুগম করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরাফাত ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বেস্ট হোল্ডিংসের বন্ডে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চাপ প্রয়োগ, বিদেশে অর্থ পাচার এবং একাধিক বাড়ি–ফ্ল্যাট ক্রয়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে।

অনুসন্ধানকালে সরাফাত, তার স্ত্রী  আঞ্জুমান আরা, ছেলে রাহীব সাফওয়ান সারাফাত চৌধুরী এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ৭৮টি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়। সেই একাউন্ট থেকে প্রায় ১,৮০৯.৭৫ কোটি টাকা জমা এবং প্রায় ১৮০৫.৫৮ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের নামে ২১টি হিসাব চলমান রয়েছে।

সিআইডি আরও জানায়, অনুসন্ধানে সরাফাত ও তার স্ত্রীর নামে কানাডা, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে কয়েকটি কোম্পানি পাওয়া গেছে। এছাড়া আঞ্জুমান আরার নামে সিঙ্গাপুরে ১৫টি যৌথ হিসাব রয়েছে। সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমান টাকা জমা রয়েছে। তাছাড়া সারাফাত চৌধুরীর নামে বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ৭৬টি একাউন্ট হিসাব পরিচালনার তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তার নামে দুবাইয়ে ৩ রুমের ফ্ল্যাট ও ৫ রুমের একটি ভিলা রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরে তাহের ইমামের মালিকানায় থাকা কোম্পানিরও ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করার সাক্ষ্য–প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে বাংলাদেশে তাদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। 

প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে পাওয়া এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে চৌধুরী নাফিস সরাফতসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় ১৬১৩ কটি টাকা পাচারের মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।