দেখা মেলে না শীতলক্ষ্যা ও দুরন্ত পরিবহন,অটোরিকসার দখলে এখন সড়ক

Passenger Voice    |    ১১:১৯ এএম, ২০২৫-১১-২৭


দেখা মেলে না শীতলক্ষ্যা ও দুরন্ত পরিবহন,অটোরিকসার দখলে এখন সড়ক

নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে বেশ পরিচিত নাম শীতলক্ষ্যা ও দূরন্ত পরিবহন। কম খরচে সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে শহরে যাতায়াতে যাত্রীদের মূল বাহন ছিল এ দুটি বাস। তবে এখন আর সড়কে দেখা মেলে না বাসগুলোর। সময়ের ব্যবধানে ঝুঁকি নিয়েই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। তবে অসংখ্য অটোরিকশার কারণে যানজটে নাকাল হন যাত্রীরা। কর্মঘণ্টা নষ্টের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে মানুষ।

এক সময় শিমরাইল-আদমজী-নারায়ণগঞ্জ সড়কের যাত্রীদের কম খরচে যাতায়াতের সহজ মাধ্যম ছিল দূরন্ত-শীতলক্ষ্যা পরিবহন। যা করোনা মহামারির সময় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগে সড়কটি দখলে নেন থ্রি-হুইলার চালকরা। এরপর থেকে শহরে অটোরিকশার দাপট বাড়তে থাকে। বর্তমানে এ সড়কে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজারের বেশি অটোরিকশা চলাচল করে। যা রীতিমতো মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, বন্ধ ঘোষণার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দূরন্ত কোম্পানির ৪৯টি এবং শীতলক্ষ্যার ২৭টি বাস যাত্রীসেবায় নিয়োজিত ছিল। যাতায়াতে দূরন্ত কর্তৃপক্ষ চিটাগাংরোড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত ১৮ টাকা ও শীতলক্ষ্যা বাসের চিটাগাংরোড থেকে কালিরবাজার পর্যন্ত ২৫ টাকা ভাড়া নির্ধারিত ছিল। আর বর্তমানে অটোতে একই স্থান থেকে চাষাঢ়া ও কালিরবজার পর্যন্ত ৩০ টাকা গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। মাঝেমধ্যে বাড়তিও আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বন্ধু পরিবহন নামের একটি বাস চিটাগাংরোড থেকে চাষাঢ়ায় যাত্রী পারাপারে নিয়োজিত রয়েছে। এটি এখনো চালু আছে। গাড়িটি বর্তমানে ২৮ টাকা ভাড়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড হয়ে লিংক রোড দিয়ে চাষাঢ়ায় পৌঁছায়। পূর্বে কোম্পানিটির গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৩২ গাড়ি চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

দূরন্ত ও শীতলক্ষ্যা বাস কাউন্টারের একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের আগ পর্যন্ত অবৈধ থ্রি-হুইলারের সংখ্যা তেমন বেশি ছিল না। করোনা আসতেই ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এতে তাদের বাসের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাসগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে মালিকপক্ষ বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হয়।

অটোতে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ভাষ্য, তাদের কাছে ভাড়া বাড়তির চেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে যানজট। শুক্রবার ব্যতীত অন্য দিনগুলোতে সকাল ৭টা থেকে সোয়া ৮টা এবং রাত ৭টা থেকে ১০ পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বেশি বেকায়দায় পড়েন অসুস্থ রোগীরা। মানুষ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা লাগে।

সড়কে চলা অটোরিকশার লাইনম্যানের দায়িত্বে থাকা রবিন নামের এক যুবক জানান, আমরা চিটাগাংরোড থেকে আদমজী পর্যন্ত যানজট নিরসনের কাজে নিয়োজিত রয়েছি। এ সড়ক দিয়ে আদমজী ইপিজেড ছুটি এবং গার্মেন্টসকর্মীরা অফিসে যাওয়ার সময় অন্তত ২ হাজার অটো চলাচল করে থাকে। তাছাড়া অন্য সময় ১৫০০’র মতো চলে।

কথা হয় শিমরাইল মোড় শীতলক্ষ্যা কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা মো. আক্তার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবহন চালু হওয়ার দু’বছর পর আমি এখানকার দায়িত্ব নিই। তখন আমরা খুব ভালো অবস্থায় ছিলাম। আমাদের প্রতিটি গাড়ির মূল্য ছিল ৩০-৩৫ লাখের মতো। ডিএনডি প্রকল্পের কাজের জন্য সাময়িকভাবে সড়ক বন্ধ হওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ইজিবাইকের সংখ্যা দিনদিন বাড়ার কারণে আর চালু করা সম্ভব হয়নি। বন্ধ হওয়ার পর গাড়ি মালিকরাও হতাশ হয়ে গাড়িগুলো ভাঙারির দামে বিক্রি করে দেন।

মো. রিপন নামে দূরন্ত বাসের এক মালিক জানান, যখন এ সড়কে গাড়ি চলতো, তখন আমার নিজেরই তিনটা গাড়ি ছিল। ১০ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা দরে গাড়ি কিনেছিলাম। তবে যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন ৭০-৮০ হাজার টাকায় গাড়িগুলো বিক্রি করেছিলাম। এই রাস্তায় এখন অটো ছাড়া কোনো বাস চলাচল করে না।

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব-কমার্সের পরিচালক আহমেদুর রহমান তনু বলেছেন, এই সড়কে অসংখ্য অটোরিকশা রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণে না আনা পর্যন্ত আমরা অন্য ট্রান্সপোর্ট নিয়ে ভাবছি না। আমাদের আপাতত ফোকাস হচ্ছে সড়কের খানাখন্দ সংস্কার করা। তবে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন অটোরিকশাকে প্লেট নম্বরের আওতায় আনার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা এরই মধ্যে পাস হয়েছে। এটা কার্যকর হলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সোহেল রানা বলেন, দূরন্ত-শীতলক্ষ্যা বাস সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। তবে আমরা এ সড়কটিতে মানুষের ভোগান্তি কমাতে চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমইএর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছি। মূলত অটোর লাইসেন্সগুলো আমাদের হাতে হয় না, এটি সিটি করপোরেশন দেখে। তবে আমরা যেমনটা জানি যে আদমজী ইপিজেড অংশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যার জন্য আমরা সেখানে একটা ট্রাফিক বসানোর পরিকল্পনা করছি।