চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক: দখলে সংকুকোচন, এক মাসে ২২ দুর্ঘটনা, ২৭ প্রাণহানি

Passenger Voice    |    ০১:১৯ পিএম, ২০২৫-১১-১৫


চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক: দখলে সংকুকোচন, এক মাসে ২২ দুর্ঘটনা, ২৭ প্রাণহানি

যত্রতত্র হাটবাজার ও সড়কের উভয় পাশে সওজের জায়গা দখল করে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে রয়েছে শতাধিক আঁকাবাঁকা বিপজ্জনক বাঁক। ফলে ব্যস্ততম এই মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। 

হাইওয়ে পুলিশের তথ্য বলছে, গত অক্টোবর মাসেই চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার ৪৪ কিলোমিটার অংশে ঘটেছে অন্তত ২২টি ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ২৭ জন ও আহত হয়েছে শতাধিক। 

কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির জন্য স্থানভেদে ৬০ থেকে ১০৪ ফুট পর্যন্ত জায়গা অধিগ্রহণ করা থাকলেও দুই লেনের মূল সড়কটি ২৪ ফুটের। বর্তমানে সড়কের দুপাশে অবশিষ্ট সব জায়গা দখল হয়ে গেছে। এরই মধ্যে চকরিয়া অংশে আজিজনগর থেকে ডুলাহাজারা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কে ৫৯৩টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ৩৫০ দখলদারকে সরে যেতে চিঠি দিয়েছে সওজ। 

স্থানীয়রা বলছেন, দখলদারদের সরে যাওয়ার জন্য একাধিকবার সুনির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করলেও উচ্ছেদ অভিযান তেমন একটা হয় না। সড়ক বিভাগ কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ১৫৫ কিলোমিটার অংশে শতাধিক বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। ‘মৃত্যুফাঁদ’ হয়ে থাকা বাঁকগুলো এতই বাঁকানো যে, একদিক থেকে গাড়ি চলাচল করলে অন্যদিকে দেখা যায় না।  

মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের দাবিতে স্থানীয়দের গঠিত চকরিয়া উপজেলা কমিটির সভাপতি ও চকরিয়া আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি লুৎফুল কবির বলেন, মহাসড়কের চকরিয়া অংশে সড়ক দুর্ঘটনা যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী। মহাসড়কের চকরিয়া অংশে ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিদিন কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে অকালে জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে অনেক মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করা এখানকার মানুষের প্রাণের দাবি। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। 

স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কটি ছয় লেন না হওয়া পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। কারণ সারাদেশ থেকে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের উদ্দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। কিন্তু দুই লেন হওয়ায় যেমন তীব্র যানজট হয়, তেমনি সংকুচিত সড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে চলছে। 

একাধিক গাড়িচালক দাবি করেন, এ মহাসড়কে প্রতিদিন লবণভর্তি ট্রাক চলাচল করে। লবণের গাড়ি থেকে গলে পড়া পানিতে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

চকরিয়া উপজেলার মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, গত এক মাসে মালুমঘাট হাইওয়ের আওতাধীন (চকরিয়া দক্ষিণাঞ্চল ফাসিয়াখালী থেকে খুটাখালী নতুন অফিস পর্যন্ত) এলাকায় ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া অনেক যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা প্রতিনিয়ত সব স্তরের যানবাহন চালককে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে নির্দেশনা দিই।

চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি আরিফুল আমিন বলেন, গত অক্টোবরে চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার আওতাধীন (চকরিয়ার উত্তরাঞ্চল পৌর শহর থেকে উত্তর হারবাং আজিজনগর পর্যন্ত) এলাকায় মোট ১০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া অসংখ্য যাত্রী আহত হয়েছেন। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালানোর বিষয়ে চালকদের নির্দেশনা দেওয়া দরকার যানবাহন মালিকদের। 


প্যা.ভ.ম