ভূতের হাতে চুরি কনটেইনার!

Passenger Voice    |    ১২:১৯ পিএম, ২০২৫-১১-০৬


ভূতের হাতে চুরি কনটেইনার!

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ড থেকে প্রতিনিয়ত কনটেইনার গায়েবের ঘটনা ঘটছে। নিলাম থেকে পণ্য ক্রয় করে ডেলিভারি নিতে গেলে পাওয়া যাচ্ছে না ওই কনটেইনার। এতে চরম হতাশায় পড়তে হচ্ছে নিলামে অংশগ্রহণকারীদের। এ নিয়ে কাস্টম ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে বিডারদের। এর আগে দুটি কনটেইনার খোঁজে না পাওয়ায় আলোচনায় আসে বিষয়টি। চলতি সপ্তাহে আরও একটি গার্মেন্টস পণ্যের (ফেব্রিক্স) কনটেইনার খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে রীতিমতো গায়েব হয়ে যাচ্ছে পণ্য ভর্তি কনটেইনার। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা চরম হয়রানি ও হতাশার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার ই-অকশন ৮/ ২০২৫, লট নং ওবিপিসি ১/২৩১৮/২১ এর কনটেইনার নং এমএসকেইউ ১০৬৮১৫০ এক্স ৪০, চল্লিশ ফুটের এ কনটেইনারটি খোঁজে পায়নি ডেলিভারির জন্য।

নিলামে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ফারজানা ট্রেডার্স এ চল্লিশ ফুট ফেব্রিক্স পণ্যের কনটেইনার ক্রয়ের পর শুল্ককরসহ ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে কাস্টম হাউসকে। গত ২২ অক্টোবর-এ কনটেইনার ডেলিভারি নিতে জে-আর ইয়ার্ডে গেলে দেখা যায় ওই কনটেইনার ইয়ার্ডে নেই।
এ বিষয়ে জে আর ইয়ার্ডের কর্মকর্তারা ফারজানা ট্রেডার্সকে কোনো সুরহা দিতে না পারায় পরদিন ২৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম কাস্টম কমিশনার বরাবর ওই নিলাম বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।

এরপর এ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা। অপরদিকে ফারজানা ট্রেডিংয়ের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ম্যানেজার ও পরিচালক নিরাপত্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে ফারজানা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সেলিম দেশীয় সংবাদমাধ্যম খবরের কাগজকে বলেন, আমাদের একটি কনটেইনার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিলামে ক্রয়ের পর ডেলিভারি নেওয়ার সময় জানতে পারি কনটেইনারটি নেই। এখন উলটো কাস্টম ও বন্দরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে সুরহার জন্য। অথচ এ বিষয়ে আমাদের সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন টাকা ফেরত পাবো নাকি কনটেইনার পাবো এ নিয়ে চরম চিন্তিত।

এদিকে এর আগে, দেড় কোটি টাকার কাপড়সহ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে গায়েব হয়েছিল দুটি কনটেইনার। নিলামের পর সব শুল্ককর পরিশোধ করে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারির সময় খবর আসে কনটেইনার দুটি উধাও। প্রায় ৯ মাস আগে এ ঘটনা ঘটলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা ফেরত পেতে বন্দর ও কাস্টম্‌সে চিঠি চালাচালি করলেও অগ্রগতি নেই। সেসময় ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কাস্টম্‌সের নিলামে ৮৫ লাখ টাকায় প্রায় ২৭ টন ফেব্রিক্সের কনটেইনার কেনেন শাহ আমানত ট্রেডিংয়ের মালিক সেলিম রেজা। তিনি প্রথমে কনটেইনারের পণ্য পরিদর্শন করেন, পরে এক কোটি সাত লাখ টাকায় শুল্ক, দাম এবং বন্দরের চার্জ পরিশোধ করেন। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাক নিয়ে ইয়ার্ডে গেলে জানানো হয়, কনটেইনারটাই নেই। এ
ঘটনার ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো হদিশ মেলেনি।

ভুক্তভোগী বিডার মো. সেলিম রেজা জানান, কাস্টম্‌সের কমিশনার বরাবর ৩টি চিঠি দিয়েছি। আমাদের যে ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আর্থিক ক্ষতি ১ কোটি টাকার উপরে। বারবার চিঠি দেওয়ার পরেও আমার টাকা ফেরত পাইনি।’

অপর কনটেইনারটি নিলামে ক্রয় করেছিলেন তপন সিংহ নামে একজন বিডার (নিলামকারী)। তিনিও ৪২ লাখ টাকা শুল্ককর পরিশোধ করেও কনটেইনার পাননি।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলামকারী ব্যবসায়ীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (বিডার) মো. ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, ‘পরপর কনটেইনার গায়েব হওয়ার ঘটনায় আমরা খুবই উদ্‌বিগ্ন। বন্দর ইয়ার্ডের মতো সুরক্ষিত স্থান থেকে কীভাবে কনটেইনার গায়েব হয় তা আমাদের প্রশ্নে আসে না। বাহিরে পণ্য থাকলে চুরি হবে কিন্তু বন্দরে এরকম সুরক্ষিত দেয়ালের ভেতর কীভাবে চুরি হয়। আর্মি, নৌবাহিনী, বন্দরের নিজস্ব সিকিউরিটি থাকার পরেও এ পণ্য কীভাবে বাহিরে যায়। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে জনগণের সামনে পরিষ্কার করা দরকার। কারণ এমন বিষয় মেনে নেওয়ার মতো নয়। এ ধরনের সত্যই যদি ঘটে তাহলে বহির্বিশ্বের আমাদের বন্দর সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়বে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ বলেন, কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে না থাকা খুব আশ্চর্যজনক ব্যাপার। কনটেইনার হয়ত অন্য কোনো ইয়ার্ডে স্থানান্তরিত হতে পারে। গায়েব হয়ে যাওয়া এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। আমরা প্রথমে বন্দরে চিঠি দিয়ে পণ্য পাওয়া যায় কি না জানতে চাইব। পণ্য না পাওয়া গেলে রিফান্ড প্রক্রিয়া শুরু হবে। নিলামে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ওই টাকা ফেরত পাবেন।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, আগের দুটি কনটেইনার মিসিংয়ের তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নতুন করে আরও একটি কনটেইনার মিসিং হওয়ার খবর আমার কাছে জানা নেই। তবে কনটেইনারগুলো পাওয়া যাবে আশা করছি।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কনটেইনার রয়েছে। এর মধ্যে হ্যান্ডলিংয়ের সময় হয়ত একটি কনটেইনার যে স্থানে থাকার কথা সেখানে নেই। অন্য কোথাও ঠিকই রয়েছে। খোঁজা হচ্ছে। মিসিং হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাওয়া গেলে জানানো হবে।


প্যা.ভ.ম