শিরোনাম
Passenger Voice | ০৪:০২ পিএম, ২০২৫-১০-২৯
বিগত চার বছরের মধ্যে চলতি মৌসুমে ইলিশ আহরণ সবচেয়ে কম। এমন পরিসংখ্যান ইলিশ সম্পদ নিয়ে অশনি সংকেত দেখাচ্ছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বরিশালের নদীতে জাল ফেলে আশানুরূপ মাছ পাচ্ছেন না জেলেরা। জেলেদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার সময়ে শিকার করায় এবার ইলিশ সংকট দেখা দিয়েছে।
সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসকে ইলিশের ভরা মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের ওই তিন মাসে আহরিত হয়েছে ৭৯ হাজার ৩১০ মেট্রিক টন ইলিশ—যা গত বছরের ১ লাখ ৩ হাজার ৬৪৭ টন থেকে ২৪ হাজার ৩৩৭ টন কম, অর্থাৎ প্রায় ২৩ শতাংশ হ্রাস।
২০০৩ সালে আহরিত হয়েছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৭৯৭ টন, ২০২২ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ টন। ধারাবাহিকভাবে আহরণ কমতে থাকায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ইলিশ সম্পদের জন্য অশনিসংকেত।
এ বছরের জুলাই ও আগস্টে ইলিশ আহরণ ২০২৪ সালের তুলনায় যথাক্রমে ৩৩ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৪৭ দশমিক ৩১ শতাংশ কমেছে। দুই মাসে আহরিত হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৯৪ টন, যা আগের বছরের তুলনায় ২২ হাজার ৯৪১ দশমিক ৭৮ টন কম, শতাংশের হিসাবে ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ হ্রাস।
নিষেধাজ্ঞা শেষে হতাশা
প্রতি বছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা ও অমাবস্যার মধ্যবর্তী ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ বছর ৪ অক্টোবর শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা ২৬ অক্টোবর (শনিবার) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে অনেকেই খালি হাতে ফিরেছেন।
জেলেদের দাবি, এ বছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযান কার্যত সফল হয়নি। তাদের অভিযোগ, ডিম ছাড়তে আসা মা ইলিশও ধরা পড়েছে জালে, যার ফলেই নিষেধাজ্ঞা শেষে জালে ইলিশ মিলছে না।
পোর্ট রোডের ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, আগে নিষধোজ্ঞা শেষ হলে শত শত মণ ইলিশ বাজারে আসতো। এবার ১০ মণও আসেনি। যেজন্য দাম কমেনি।
ভোলা থেকে মাছ নিয়ে আসা জেলে জালাল মিয়া বলেন, মাছ নদীতে নাই। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মৌসুমি জেলেরা মাছ ধরে নিয়েছে। তা ছাড়া, এবার প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে ঢিলেঢালা।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য এ দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। তারা বলছেন, বিগত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর অভিযান চালানো হয়েছে এ বছর।
অভিযান ও আইনি ব্যবস্থা
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে বরিশাল বিভাগে ৩ হাজার ৫৩১টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে—যা গত বছরের তুলনায় বেশি। ২০২৪ সালে অভিযান হয়েছিল ৩ হাজার ৩৯৪টি, ২০২৩ সালে ২ হাজার ৮৩৭টি ও ২০২২ সালে ২ হাজার ৮৬৫টি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এ বছর ৮৯৩ জেলে কারাদণ্ড পেয়েছেন, যেখানে ২০২৪ সালে ছিল ৬৮১ জন, ২০২৩ সালে ৮০৮ জন ও ২০২২ সালে ৭১৬ জন। এবার জব্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ মিটার কারেন্ট জাল, যা গত বছরের ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ মিটার থেকে অনেক বেশি।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কান্তি ঘোষ বলেন, এবারের নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই কিছু অসাধু জেলে আক্রমণাত্মক ছিলেন। বিভিন্ন স্থানে বাধার মুখোমুখি হয়েছি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা কেবল শেষ হলো। কয়েকদিন পরই আশানুরূপ ইলিশ বাজারে পাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মত
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাজেদুল হক বলেন, এবার জেলেদের সঙ্গে অভিযানের সংঘর্ষ ছিল উদ্বেগজনক। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। জেলেদের প্রণোদনা বাড়াতে হবে, সচেতনতা তৈরি করতে হবে—যাতে তারা বুঝতে পারেন, মা ইলিশ রক্ষা পেলে ভবিষ্যতে তারা আরও বেশি ইলিশ ধরতে পারবেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত