শিরোনাম
Passenger Voice | ০২:৫৫ পিএম, ২০২৫-১০-২৭
ঢাকার সাভারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। রাতভর দফায় দফায় সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলেও এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে বিরুলিয়ার খাগান এলাকায় অবস্থিত ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল সন্ধ্যার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেলের পাশে বসেছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির বেশ কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের এক শিক্ষার্থী থুথু ফেললে অসর্তকতাবশত তা মোটরসাইকেলে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে পড়ে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের প্যারাডাইস হোস্টেলে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
পরে এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হলে উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢুকে সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ও প্রশাসনিক ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তখন রাত প্রায় ১২টা বাজে। আমরা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হুট করে চিল্লাচিল্লি শুনে আমরা জানালা দিয়ে দেখি যে, আমাদের মেয়েদের হোস্টেলে ক্যান্টিনের গেটের দিক থেকে ঈদ পাটকেল নিক্ষেপ করছে। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করতেছে। ওই সময় ওখানে যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইয়েরা না থাকতো তাহলে মনে হয় ওরা হোস্টেলের গেট ভেঙে আমাদের টেনে বের করে ফেলত। আমাদের ক্যান্টিন প্রশাসনিক ভবনে ওরা ভাঙচুর চালিয়েছে।’
‘যখন হামলা চালায় আমরা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো ধরনের সাহায্য পাইনি। ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আমাদের ভার্সিটির ক্যান্টিন ও মেয়েদের হলসহ সব জায়গায় তাণ্ডব চালিয়েছে। এমনকী আমাদের অ্যাকাউন্টস অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুরসহ নথিপত্র ও টাকা লুট করেছে তারা। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে’, বলেন তারা।
সিটি ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান সজিব বলেন, ‘গতকাল তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী তাদের ক্যাম্পাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বলতে গেলে তারা সারারাত তাণ্ডব চালিয়ে আমাদের পুরো ক্যাম্পাস তছনছ করেছে। আমাদের পাঁচটি বাস, তিনটি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাসে অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রশাসনিক ভবন ও ক্যান্টিনে ভাঙচুরসহ লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় প্রতিহত করতে গিয়ে আমাদের প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমাদের তিন থেকে চারজন শিক্ষকও আহত হয়েছেন। তারা নিকটস্থ বিভিন্ন হাসপাতালসহ রাজধানীর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল অসর্তকতাবশত সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর ফেলা থুথু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। সেখানে ‘সরি’ বলার পর বিষয়টি সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু রাতে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এসে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের মেসে ভাঙচুরের ঘটনাটি কাম্য নয়। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়ার বলেন, এখনো আমাদের ৯ জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে সেটি এখনো আমরা নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা হতে পারে না। এটি পরিকল্পিত। আমাদের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্যা/ভ/ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত