টাঙ্গাইলে কাজ না করেই ৫ কোটি টাকা ভাগাভাগি

Passenger Voice    |    ০২:৫১ পিএম, ২০২৫-১০-১৩


টাঙ্গাইলে কাজ না করেই ৫ কোটি টাকা ভাগাভাগি

টাঙ্গাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ বুঝে না নিয়েই প্রায় ৫ কোটি টাকার আগাম বিল দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে ফরিদপুরের জিন্নাত হোসেন বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেই দেওয়া হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। আর এই টাকা ভাগ করে নিয়েছেন জামালপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান, টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খানসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োজিত জেলা সওজের সিন্ডিকেটের মূল হোতা সুমন এবং মনোজ খান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) আওতায় ৮৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাউশি-গোপালপুর সড়কের সংস্কার কাজ পায় ফরিদপুরের মো. জিন্নাত হোসেন বিশ্বাস নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর এই কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের সুমন ও মনোজকে। তবে এই সড়কে কোনো কাজ না করেই গত ২৩ জুন কাজ শেষ দেখানো হয়। এরপর প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের নির্দেশে টাঙ্গাইলের নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজের সম্পূর্ণ বিল দিয়ে দেন। এরপর গত ১ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ সমাপ্তির সনদপত্র দেওয়া হয়।

সড়কে মাটি পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত সুরুজ আলী খানসহ কয়েকজন শ্রমিক জানান, বুধবার থেকে তারা এই সড়কে কাজ শুরু করেছেন। তবে ঠিকাদার কে তারা কেউ জানেন না। 

সড়কের পাশের বাড়ির মাহবুবুল ইসলাম তালুকদার জানান, এই সড়কে গত ১০-১২ বছরে কোনো কাজ হয়নি। তবে গত বুধবার থেকে কয়েকজন শ্রমিককে সড়কের পাশের ময়লা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।

একই চিত্র এলাসিন-দেলদুয়ার সড়কের। এই সড়কেও করা হয়নি কোনো সংস্কারকাজ। তবে ৮৮ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়েছে মো. জিন্নাত হোসেন বিশ্বাসকে। এ ছাড়া মধুপুর-কালিহাতী সড়কে কোনো কাজ না করেই ৯০ লাখ টাকা বিল তুলে নিয়েছে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মির্জাপুর থেকে করটিয়া বাইপাস পর্যন্ত টপড্রেনের কাজ না করেই তুলে নেওয়া হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। মির্জাপুর সড়কে সিলকোডের কাজ না করেই হাসমত ব্রাদার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তুলে নিয়েছে ৬০ লাখ টাকা। আর এসব কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন সুমন ও মনোজ নামে টাঙ্গাইলের দুই ঠিকাদার।

অন্যদিকে পাথর ও ইট সাপ্লাই না করেই আত্মসাৎ করা হয়েছে তিন ধাপে পর্যায়ক্রমে ১৮ লাখ, ১২ লাখ এবং ২৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া পুরোনো মালামাল বিক্রির নামে টাঙ্গাইলে ২২ লাখ, মির্জাপুরে ২৫ লাখ এবং মধুপুর থেকে ১৭ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।

মো. জিন্নাত হোসেন বিশ্বাস ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুজন আহমেদ বলেন, ‘আমরা আসলে লাইসেন্স ভাড়া দিয়ে চলি। এ কারণে কোনো কাজ সরেজমিনে গিয়ে আমরা তদারকি করি না।’

মধুপুর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘জুনে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল না দিতে পারলে বরাদ্দ ফেরত পাঠাতে হয়। স্যাররা ঠিকাদারদের আগাম বিল দিয়েছেন। এখন ঠিকাদাররা ওইসব সড়কের কাজ শুরু করবেন।’ এ বিষয়ে প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামানের মোবাইল নম্বরে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।