লোকোমোটিভ সংকটে ভুগছে রেলওয়ে,সরকার ফের অনুদান চায় চীনের কাছে

Passenger Voice    |    ০৪:৪৮ পিএম, ২০২৫-১০-০৬


লোকোমোটিভ সংকটে ভুগছে রেলওয়ে,সরকার ফের অনুদান চায় চীনের কাছে

দীর্ঘদিন ধরে লোকোমোটিভ সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বর্তমানে রেলবহরে থাকা বেশিরভাগ ইঞ্জিনই পুরোনো এবং রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার চীনের কাছে অনুদান হিসেবে চেয়েছে ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ।

সরকারের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কাস্টমস শুল্ক, ডিডি ও ভ্যাট বাবদ খরচও যেন চীন বহন করে। তবে বেইজিং সত্যিই এ অনুদান দেবে কি না, এ ব্যাপারে এখনো কোনো লিখিত নিশ্চয়তা মেলেনি।

চীনা লোকোমোটিভ নিয়ে আশঙ্কার বড় কারণ হলো রক্ষণাবেক্ষণ। চীন নিজ দেশে মিটারগেজ লোকোমোটিভ চালায় না, বরং সীমিত শিল্পাঞ্চল বা খনিতে ব্যবহার করে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রাংশ পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১৩ সালে চীন থেকে ৬৫৩ কোটি টাকায় কেনা ২০ সেট ডেমু ট্রেন মাত্র ছয় বছরের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়ে। এগুলোর আয়ু ধরা হয়েছিল ২০ বছর। সেই ব্যর্থ অভিজ্ঞতা থেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

বুয়েটের অধ্যাপক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘অনুদান পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়, আসল বিষয় হলো, এগুলো ব্যবহারযোগ্য হবে কি না। যদি চালাতে সমস্যা হয় বা যন্ত্রাংশ না মেলে, তবে এগুলো বোঝা হয়ে দাঁড়াবে ‘

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নীতিগত অনুমোদন ছাড়াই সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে ইআরডির মাধ্যমে চীনের কাছে অনুদানের আবেদন করা হয়েছে।

তবে বৈদেশিক অর্থায়ন প্রকল্পের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনের প্রাথমিক অনুমোদন নেওয়ার নিয়ম থাকলেও এই প্রকল্পে তা অনুসরণ হয়নি। ফলে প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

গত ১৪ জুলাই প্রকল্প যাচাই কমিটির বৈঠকে ‘২০টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ’ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। সেখানে খুচরা যন্ত্রাংশ, রক্ষণাবেক্ষণ ও অন্তত ১০ বছরের সার্ভিস সুবিধা প্রস্তাবে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রেল সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম বলেন, ‘চীন অনুদান দেবে কি না, লিখিতভাবে জানায়নি, তবে মৌখিকভাবে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে এখনো কোনো কনক্রিট সিদ্ধান্ত হয়নি।’

রেলওয়ের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বহরে ৩০৬টি লোকোমোটিভ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৪টি মিটারগেজ ও ১৩২টি ব্রডগেজ। তবে মিটারগেজ লোকোমোটিভের ৭১ শতাংশেরই বয়স ২০ বছরের বেশি।

এর মধ্যে ৬৮টি ইঞ্জিন টানা ৪০ বছর ধরে চলছে। এসব পুরোনো ইঞ্জিনের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাড়ছে এবং যন্ত্রাংশ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

রেলওয়ের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী, ধাপে ধাপে মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনুমান করা হচ্ছে, অন্তত ২০৫৫ থেকে ২০৬০ সাল পর্যন্ত মিটারগেজ লাইন চালু রাখতে হবে। তাই নতুন মিটারগেজ লোকোমোটিভ আনা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ইঞ্জিন আনার ক্ষেত্রে সার্ভিস ওয়ারেন্টি, রিপেয়ারিং প্লান্ট এবং অন্তত পাঁচ বছরের সার্ভিস গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ডেমুর মতো অর্থ অপচয়ের ঘটনা আবারও ঘটতে পারে। সূত্র যায়যায় দিন