টেকনাফে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যানবাহনের ডেটাবেজের উদ্যোগ

Passenger Voice    |    ০৫:৩৬ পিএম, ২০২৫-১০-০৫


টেকনাফে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যানবাহনের ডেটাবেজের উদ্যোগ

মাদক, মানবপাচার ও অপহরণের জন্য কুখ্যাত কক্সবাজার জেলার সীমান্ত শহর টেকনাফে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত টমটমচালকদের একটি ডেটাবেজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়েছেন চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের মতে, ডেটাবেজ চালু হলে প্রকৃত চালকরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন, আর অপরাধে জড়িতদের সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

সীমান্ত শহরের চ্যালেঞ্জ, ভৌগোলিক কারণে টেকনাফ একটি সংবেদনশীল এলাকা। স্থানীয়দের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ভাষা ও চেহারার মিল থাকায় অপরাধীরা সহজে মিশে যেতে পারে। প্রায়ই স্থানীয় পরিবহনব্যবস্থাকে ব্যবহার করে মাদক, মানব পাচার ও অপহরণের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। টমটম ও সিএনজিচালিত  অটোরিকশাচালকদের ছদ্মবেশে রোহিঙ্গা বা অপরাধীরা জড়িয়ে পড়ায় প্রকৃত চালক ও যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসীম উদ্দীন বলেন, ‘টেকনাফ মাদক পাচারের প্রধান রুট। পাশাপাশি প্রায়ই অপহরণের ঘটনাও ঘটে। আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, অনেক টমটম ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক এসব অপরাধে জড়িত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব অপরাধ ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে আমরা ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালকরাই এই ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এতে প্রকৃত চালকদের সহজে শনাক্ত করা যাবে এবং অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।’

চালকরা জানান, তাদের মধ্যে ভালো ও খারাপ দুই ধরনের চালকই আছেন। ডেটাবেজ চালু হলে প্রকৃত চালকরা চিহ্নিত হবেন এবং নিরপরাধরা আর হয়রানির শিকার হবেন না। অনেক সময় অপরাধীদের কারণে নিরীহ চালকরা পুলিশের সন্দেহে পড়েন। তাদের মতে, সরকার যদি ডেটাবেজ তৈরি করে পরিচয়পত্র দেয়, তবে নিরপরাধরা নিরাপদে কাজ করতে পারবেন।

স্থানীয় বাসিন্দারাও মনে করেন, শুধু চালক নন, গাড়ির মালিক, পরিবহন সমিতি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডেটাবেজের আওতায় আনা উচিত। এতে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচল সীমিত হবে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আরও কার্যকর হবে।

অপরাধে জড়িত উখিয়ার থ্যাংখালী পালংখালী এলাকার সিএনজিচালিত  অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ জাবেদ স্বীকার করেছেন, ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে লোকজনকে পাচারকারী পেজা ফারুকের আস্তানায় পৌঁছে দিতেন। তিনি জানান, এক মাস ধরে টাকার লোভে এ কাজে যুক্ত ছিলেন।

গত ২ অক্টোবর রাতে টেকনাফের বাহারছড়ার কচ্ছপিয়া পাহাড়ি এলাকায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে ৩৯ জন অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় মানবপাচার চক্রের দুই সদস্য উখিয়ার মোহাম্মদ জাবেদ (৩০) ও মুসলেম উদ্দিনকে (৩০) আটক করা হয়। দুজনই সিএনজিচালিত  অটোরিকশাচালক।

টেকনাফে মাদক ও মানবপাচার দমনে দীর্ঘদিন নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পরিবহনব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পুলিশের নতুন এই ডেটাবেজ উদ্যোগকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। সংশ্লিষ্টদের আশা, এটি বাস্তবায়ন হলে টেকনাফে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বড় অগ্রগতি আসবে এবং প্রকৃত চালকরা নিরাপদ ও হয়রানিমুক্তভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।