কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন, তবুও চালুর অপেক্ষা

Passenger Voice    |    ১২:৫৩ পিএম, ২০২৫-১০-০৫


কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর প্রস্তুতি সম্পন্ন, তবুও চালুর অপেক্ষা

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ঘোষণার পরও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হতে আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পাওয়ায় সব প্রস্তুতি নিয়েও ‘উদ্বোধনের তারিখ’ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কক্সবাজার-কলকাতা-ঢাকা রুটে সাপ্তাহিক একটি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এখনো টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারেনি সংস্থাটি। বিমানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকায় যাত্রী বুকিং প্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর কবে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক হবে- এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা পাইনি। সে কারণেই কলকাতা রুটের টিকিট বিক্রি শুরু করা যায়নি।’

সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় বেবিচক

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান বলেন, বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছে ইতোমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

৫ অক্টোবর প্রস্তাবটি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন পাওয়া যাবে।

মেহবুব খান আরও বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থাকে (আইসিএও) বিষয়টি অবহিত করেছি। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরুর দায়িত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সই নেবে।

তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে।

কাস্টমস-ইমিগ্রেশন প্রস্তুত, রানওয়ে সম্প্রসারণে ধীরগতি

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পরিচালক গোলাম মুর্তজা হোসেন বলেন, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সুবিধা ইতোমধ্যে প্রস্তুত রয়েছে। নতুন টার্মিনালের আগমন বিভাগ চালু হলেও যাত্রীরা এখনো পুরোনো ভবন দিয়েই প্রস্থান করবেন।

টার্মিনাল ও রানওয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া জানান, নতুন টার্মিনাল ভবনের প্রায় ৮৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার আশা করছেন তিনি। বর্তমানে ভবনের অভ্যন্তরে টাইলিং, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপনের কাজ চলছে।

৩৬২ কোটি টাকার এ টার্মিনাল নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ ও ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ভবনের বাইরের কাচের প্যানেল স্থাপন প্রায় শেষ, বোর্ডিং ব্রিজ ও গাড়ি পার্কিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে।

অন্যদিকে, এক হাজার ৭৯৪ কোটি টাকার রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের অগ্রগতি তুলনামূলক ধীর। চীনের সিওয়া আইডব্লিউইবি ও সিসিইসি যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে, যা শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় ২০২৬ সালের ডিসেম্বর।

এদিকে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কুতুবদিয়ার দেশবরেণ্য আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব হজরত শাহ আব্দুল মালেকের নামে নামকরণের দাবি উঠেছে।

কক্সবাজার নাগরিক ফোরামের সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘হযরত মালেক শাহ ছিলেন কক্সবাজারের কীর্তিমান অন্যতম শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক পুরুষ। তার নামেই কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হলে সাধারণ জনগণ খুশি হবে।’

পর্যটন ও অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের আশা

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের শহর কক্সবাজারে সরাসরি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে বিদেশি পর্যটক আগমন বহুগুণে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে পর্যটন শিল্পের পাশাপাশি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন ও স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলবে। 

হোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হলে পর্যটন ব্যবসায় গতির সঞ্চার করবে, দেশের পাশাপাশি বিদেশিদের কাছে কক্সবাজার জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠবে বলে আমরা আশাবাদী।

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্মেলন, করপোরেট ইভেন্ট ও সাংস্কৃতিক আয়োজন সহজ হবে—যা স্থানীয় কর্মসংস্থান ও অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করবে। সূত্র ঢাকা পোস্ট