নদীতে ছুটছে রাহাতের ‘ল্যাম্বরগিনি’

Passenger Voice    |    ০৩:৫৬ পিএম, ২০২৫-০৯-৩০


নদীতে ছুটছে রাহাতের ‘ল্যাম্বরগিনি’

রাস্তা ছেড়ে এবার গাড়ি ছুটছে নদীপথে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহাত খন্দকার তৈরি করেছেন এক অভিনব ভাসমান যান। যা বানানো হয়েছে বিলাসবহুল স্পোর্টস কার ল্যাম্বরগিনির আদলে। নৌযানটি চালকসহ পাঁচজন যাত্রী নিয়ে নির্বিঘ্নে ছুটে চলছে উত্তাল ব্রহ্মপুত্রের বুকে।

রাহাতের এই নৌযান তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় নয় মাস, খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। এক লিটার পেট্রোলে ঘণ্টায় ৮–৯ কিলোমিটার চলতে সক্ষম এটি। বিশেষভাবে বানানো আসনে বসতে পারে পাঁচজন।

ফুলছড়ির রতনপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড়ে রশি দিয়ে বাঁধা রয়েছে অদ্ভুত এক ‘ল্যাম্বরগিনি’। দেখতে ভিড় করছেন এলাকার মানুষ থেকে শুরু করে দূরের কৌতূহলী দর্শনার্থীরা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি, আবার কেউবা ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। অনেকে গাড়িতে চড়ে নদীতে ঘুরে বেড়িয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা তো সাধারণত গাড়ি দেখি রাস্তায়। কিন্তু এই গাড়ি নদীতে চলছে! বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হলেও চোখে দেখে অভিভূত হয়েছি। তার ওপর অবাক করার বিষয় হলো, এটি বানিয়েছে দশম শ্রেণির এক ছাত্র।’

অর্থাভাবের কারণে দামি স্পিডবোটের ইঞ্জিন কিনতে পারেননি রাহাত। তাই ঢাকার বাজার থেকে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে একটি পুরোনো প্রাইভেট কারের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন তিনি। গাড়ির বডি, ফাইবার কাঠামো, এমনকি বসার সিট পর্যন্ত বানিয়েছেন নিজের হাতে।

রাহাত বলেন, ‘পড়ালেখার ফাঁকেই ল্যাম্বরগিনির আদলে নৌযানটি দীর্ঘ পরিশ্রমে বানিয়েছি। সামনে পরিকল্পনা আছে চারটি চাকা লাগানোর। তখন শুকনা মৌসুমে রাস্তায়ও চলবে এটি।’

গাড়িটিতে নিরাপত্তার জন্য লাগানো হয়েছে আলোর ব্যবস্থা ও জরুরি সিগন্যাল সিস্টেম। এর আগেও রাহাত তৈরি করেছে ধান কাটা মেশিন, ফায়ার ফাইটার রোবট, এয়ার স্পিডবোট ও ব্যাটারিচালিত ইউনিসাইকেল। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতা তার প্রতিভার বিকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাহাতের মা রুপালি বেগম বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই মেশিন নিয়ে খুঁটিনাটি করতে ভালোবাসে। অনেক কিছু বানিয়েছে, কিন্তু অভাবের কারণে থেমে যাচ্ছে। যদি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পায়, তাহলে আরও বড় কিছু করতে পারবে।’

স্থানীয় শিক্ষার্থী শাপলা খাতুন বলেন, ‘ল্যাম্বরগিনি গাড়ি আমি ইউটিউবে দেখেছি। কিন্তু নদীতে এমন গাড়ি চলতে দেখছি প্রথম। সবচেয়ে আনন্দের বিষয়, আমাদের গ্রামের এক শিক্ষার্থী এটি বানিয়েছে।’

আকলিমা বেগম নামে এক গৃহবধূ বলেন, ‘প্রথমে আমরা কেউ বিশ্বাস করিনি। কিন্তু যখন দেখলাম এটি সত্যিই পানিতে চলছে, তখন গর্বে বুক ভরে গেছে।’

ভবিষ্যতে নৌপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা কিংবা নৌ প্রতিরক্ষা খাতেও এই আবিষ্কার কাজে লাগতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে রাহাত। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখছে সে।

স্থানীয়রা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রের ঢেউয়ের ওপর ছুটে চলা এই ভাসমান গাড়ি শুধু একটি মজার আবিষ্কার নয়- এটি কিশোর রাহাতের স্বপ্ন, সাহস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রতিচ্ছবি।