নেত্রকোনা-সিধলি সড়ক বেহাল, প্রতিদিন দুর্ভোগ হাজারো মানুষের

Passenger Voice    |    ০১:০৩ পিএম, ২০২৫-০৯-২৫


নেত্রকোনা-সিধলি সড়ক বেহাল, প্রতিদিন দুর্ভোগ হাজারো মানুষের

নেত্রকোনার রাজু বাজার থেকে সিধলি বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখন সম্পূর্ণ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহারকারী হাজারো মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কে সৃষ্ট ২২টি বড় গর্তে বর্ষার পানি জমে প্রায় দুই ফুট গভীরতা সৃষ্টি হওয়ায় এটি এখন মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সড়কটির বড় অংশ নেত্রকোনা পৌরসভা, মেদনী ইউনিয়ন ও কলিয়ারা–গাবরাগাতি ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে গেলেও এটি কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নেরও একমাত্র ভরসা। কয়েক হাজার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। 

পর্যটনকেন্দ্র দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা যেতেও সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগে সিধলি বাজার থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী ১২-১৩টি বাস নিয়মিত চলাচল করত। কিন্তু এখন অসংখ্য গর্তে ভরা সড়কটিতে যাতায়াত ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ায় মানুষ বিকল্প পথে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

সড়কের কারণে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে ভয়াবহভাবে। আগে যে পথ আধা ঘণ্টায় অতিক্রম করা যেত, এখন লাগছে দুই ঘণ্টারও বেশি। একই সঙ্গে ভাড়া বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

সিধলি গ্রামের মো. কায়েস আহমেদ বলেন, ‘এই ভাঙা সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে কষ্টের শেষ নেই। বিকল্প রাস্তা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে রোগীরা। নেত্রকোনা বা ময়মনসিংহ হাসপাতালে যেতে অনেক রোগী পথেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। গর্ভবতী নারীদের অনেক সময় বাঁশে করে খাটিয়া বানিয়ে হাসপাতালে নিতে হয়।’

বারুয়ারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক নাজমুল হুদা বলেন, ‘এই ১৩ কিলোমিটারে আটটি প্রাথমিক ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি আমাদের দুজন নারী শিক্ষক ইজিবাইক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। হাঁটতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা কাদাপানিতে ভিজে যায়। বর্ষায় অনুপস্থিতি বেড়ে যায়।’

গাবরাগাতি গ্রামের কৃষক আনেয়ার হোসেন বলেন, ‘সবজি ও ফসল ফলাই ঠিকই, কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আর পাইকারেরা গ্রামে আসতে চান না।’ সিধলি বাজারের ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাক ও পিকআপ এখন এই সড়ক এড়িয়ে চলছে।

সিএনজি অটোচালক জীবন মিয়া, পিকআপচালক আল আমিনসহ অনেকে একই অভিযোগ করেন: ‘যাত্রী কমেছে, গাড়ির যন্ত্রাংশ বারবার নষ্ট হচ্ছে, দুর্ঘটনা লেগেই আছে। আয় কমার চেয়েও বেশি খরচ হচ্ছে গাড়ি মেরামতে, সংসার চালানো কঠিন।’

কালিয়ারা গ্রামের আলমগীর হোসেন গত সপ্তাহের এক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘গতকালই আমাদের অটো উল্টে পড়ে মায়ের হাত ভেঙে গেছে, আরও দুজন আহত হয়েছেন। এক সপ্তাহে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে অথচ কেউ কোনো সমাধানে এগিয়ে আসছে না।’

নেত্রকোনা সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শোয়াইব ইমরান বলেন, ‘প্রতিবছর পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় এ অবস্থা হয়। সাময়িক সংস্কার করা হলেও বর্ষায় তা টেকে না। পুনর্নির্মাণ ও প্রশস্তকরণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

নেত্রকোনা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২ কিলোমিটার মেরামত করা হয়েছে। বাকি অংশের জন্য আরটিআইপি-৩ প্রকল্পে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু হবে। এটি বড় প্রকল্প, সীমিত বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। আমরা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছি।’

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘বিষয়টি আগামী জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে। দ্রুত মেরামতের জন্য এলজিইডি প্রকৌশলীদের সঙ্গে কাজ করা হবে। মানুষের দুর্ভোগ কমাতে প্রকল্পটি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি তদারক করব।’