ডিসির পদক্ষেপ দেখে ভূয়সী প্রশংসা করলেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান

Passenger Voice    |    ০৩:৪০ পিএম, ২০২৫-০৯-০৫


ডিসির পদক্ষেপ দেখে ভূয়সী প্রশংসা করলেন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান

দেশে প্রথমবারের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলার পেশাদার গাড়িচালক ও হেলপারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রীন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির আওতায় গ্রীন আমব্রেলা উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষে পরিবহন শ্রমিকদের এই বিশেষ প্রশিক্ষণ শেষে ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রধানগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিকেএমইএ সভাপতি, চেম্বার অব কমার্স প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি ড্রাইভার ও হেলপার, বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধি, প্রেসক্লাব সভাপতি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের এই নতুন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিবহন সেক্টরে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে যে পরিবর্তন এসেছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক এত সুন্দর কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন, সেটা আমিও পারতাম না।

তিনি মালিকপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান যাতে পরিবহন চালকরা বিশ্রামের সুযোগ পান এবং বিশ্রাম নিয়ে কাজ করতে পারেন। পরিবহন শ্রমিকদের অবসরভাতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চাইলে এটা অসম্ভব নয়, তবে প্রশাসনিকভাবে করতে গেলে কিছু সংশোধন প্রয়োজন।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা রাস্তায় কোনো রক্ত দেখতে চাই না। কেউ আহত হয়ে সমাজে কিংবা পরিবারে বোঝা হয়ে থাকুক—এটা আমরা চাই না। আমাদের দেশের এত বড় একটি সেক্টরের মানুষ ১৮ কোটি মানুষকে নিরাপদে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যান এবং আবার ফিরিয়ে আনেন—তারা অবহেলিত থাকুক, সেটা চাই না।

তিনি আরও যোগ করেন, তাদেরকে কেউ ছোট করুক, এটাও আমরা চাই না। আজ যারা বিমান চালাচ্ছেন, তাদের মতো মর্যাদা কেন আমাদের ড্রাইভার ভাইরা পাবেন না?

উন্নত ও আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য পরিবহন শ্রমিকদের অবহেলা করা যাবে না উল্লেখ করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো প্রাণ যাতে রাস্তায় অকাতরে ঝরে না যায়, সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই উদ্যোগ।

পরিবহন শ্রমিকদের বিশেষ ইউনিফর্ম বিষয়ে তিনি বলেন, আশা করি পরিবহন শ্রমিকরা এই পোশাকের মর্যাদা দেবেন। পোশাকের পাশাপাশি তাদের আচরণেও পরিবর্তন আসবে। তিনি মালিকপক্ষকে আহ্বান জানান, ড্রাইভারদের দিয়ে ওভারড্রাইভিং করাবেন না। এই বিশেষ প্রশিক্ষণ তাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলা প্রশাসক নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সকলকে নাগরিক দায়িত্ব থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রস্তুতকৃত ডাটাবেজ অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি ড্রাইভার ও হেলপারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ-পরবর্তী ইউনিফর্ম ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। এছাড়া ১০ জন লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারকে লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলার গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ ও কার্যকর করতে Vehicle Management System (VMS) সফটওয়্যার তৈরি করছে জেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে হেলপার, সরকারি ও বেসরকারি পেশাদার চালক, বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত চার পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলায় এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ১০০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯২ জন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়েছেন। ফিটনেসবিহীন বাস, চালক ও হেলপারদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ড্রাইভারের পরিবর্তে হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা এবং বিরতিহীন ড্রাইভিং এসব দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।

এই প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জ জেলার পেশাদার গাড়ি চালক ও হেলপারদের বিশেষ প্রশিক্ষণ, পৃথক ইউনিফর্ম, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদানের মাধ্যমে পুরো সড়ক ব্যবস্থাপনাকে একই ছাতার নিচে আনা হয়েছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক আরও নিবিড় করা, ড্রাইভারদের চাকরির নিশ্চয়তা ও মনোবল বৃদ্ধি এবং অধিক পেশাদারিত্বপূর্ণ আচরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জনগণের কাঙ্ক্ষিত পরিবহন সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ।

এই কর্মসূচির আওতায় পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৫৪ জন বেসরকারি গাড়ি চালক ও ৫২ জন হেলপারকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে জেলাপুল ও মাস্টাররোলভুক্ত ২৮ জন গাড়িচালককেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

গাড়ি চালক ও হেলপারদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি কোম্পানির ২১৬ জন চালক ও ৭৬ জন হেলপারের তথ্যভিত্তিক ডাটাবেজ তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন।

গাড়ি চালক ও হেলপারদের পৃথক পোশাক এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসম্বলিত আইডি কার্ড প্রদান করা হয়েছে।

ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৩২টি বাস কোম্পানির গাড়িচালক ও হেলপারের প্রয়োজনীয় তথ্যসম্বলিত পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করবে জেলা প্রশাসন। জেলার সব রুটের গাড়িচালক ও হেলপারদের পৃথক পোশাক, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। তাদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে।