শিরোনাম
Passenger Voice | ০৫:০৬ পিএম, ২০২৫-০৬-২৩
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের রেলপথ ব্যবহার করে পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত নিজেদের ট্রেন পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছিল ভারত।
এর আগেই ভারত বাংলাদেশের তিনটি রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়, যেগুলো নেয়া হয়েছিল এই ‘ট্রানজিট করিডোর’ উন্নয়নের অংশ হিসেবে। প্রকল্পগুলো হলো বগুড়া-সিরাজগঞ্জে নতুন রেলপথ নির্মাণ, খুলনা-দর্শনায় ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ ও পার্বতীপুর-কাউনিয়ার মিটার গেজ রেল ডুয়াল গেজে রূপান্তর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রকল্প তিনটি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে ভারত।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের ৫-৬ মার্চ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রকল্প তিনটিতে অর্থায়নে অনাগ্রহ প্রকাশ করে ভারতীয় পক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা-দর্শনা ও পার্বতীপুর-কাউনিয়া প্রকল্প আপাতত স্থগিত এবং বিকল্প অর্থায়নে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পগুলোর ঋণ চুক্তি বাতিল করেনি। এ কারণে প্রকল্প স্থগিত বা বিকল্প অর্থায়নের কাজ রেলওয়ে শুরু করতে পারছে না।
ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) মাধ্যমে প্রকল্প তিনটিতে অর্থায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এগুলো বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০১৮ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। যদিও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খুলনা-দর্শনা রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পটির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আঞ্চলিক রেল যোগাযোগের সক্ষমতা বৃদ্ধি। ডাবল লাইনের রেলপথ নির্মাণ হলে মোংলা বন্দরের সঙ্গে উন্নত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। মোংলা বন্দর থেকে আসা পণ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ নেপাল ও ভুটান পর্যন্ত সরবরাহের পথ তৈরি হবে। প্রকল্পটি ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়। মেয়াদ ধরা হয় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা ভারতীয় ঋণ।
আওয়ামী লীগ আমলে দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত যে রেলপথ ভারত ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছিল, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। বর্তমানে এ অংশে রেলপথ না থাকায় পার্বতীপুর-চিলাহাটিগামী ট্রেনগুলো নাটোর-নওগাঁ ঘুরে যায়। বগুড়া-সিরাজগঞ্জের মধ্যে রেলপথ নির্মাণ হলে এ পথের দূরত্ব অনেকটাই কমে আসবে। প্রকল্পটিও ২০১৮ সালে একনেকে অনুমোদন হয়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৫ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৩ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ভারতীয় ঋণ। এরই মধ্যে এ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে প্রকল্পটির অনুকূলে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রায় ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পার্বতীপুর-কাউনিয়ার মধ্যে বর্তমানে মিটার গেজ লাইন রয়েছে। লাইনটি ডুয়াল গেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এলওসির একটি প্রকল্পের মাধ্যমে। রেলপথটি ডুয়াল গেজে উন্নীত হলে ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্মকর্তারা। পার্বতীপুর-কাউনিয়া মিটার গেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়াল গেজে রূপান্তরের জন্য ২০১৮ সালে প্রকল্পটি গৃহীত হয়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা ভারতীয় ঋণ।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প তিনটিতে ভারত অর্থায়নে অনাগ্রহ প্রকাশ করলেও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণ চুক্তি বাতিল করেনি। এ কারণে প্রকল্পগুলোর জন্য বিকল্প অর্থায়নের কাজটি এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথটি নির্মাণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি ইআরডির মাধ্যমে প্রকল্পটিতে নতুন বিনিয়োগকারী নিয়ে আসতে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ এগিয়ে রাখায় আশা করা যায় প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। খুলনা-দর্শনা ও পার্বতীপুর-কাউনিয়া প্রকল্প সরকার আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারতের তিন প্রকল্প বাতিলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘তারা (ভারত) তিন প্রকল্প থেকে সরে যেতে চেয়েছে। আমরা এ নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনো দ্বিমত পোষণ করিনি। এখন আমাদের লক্ষ্য বিকল্প উপায়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার। এ লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা প্রয়োজনীয় কাজগুলো গুছিয়ে নিতে শুরু করেছি।’
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত