শিরোনাম
পানি-বিদ্যুৎ- গ্যাস সংযোগ অবৈধ, দেখার নেই কেউই
Passenger Voice | ০৫:৩৮ পিএম, ২০২৫-০৫-২৬
কামরুল হাসান: রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন এলাকায় ঢুকতেই চোখে পড়ে রেলওয়ে কোয়ার্টার বাণিজ্য। বরাদ্দকৃত রেলের কোয়ার্টারের পাশেই গড়ে উঠেছে টিনসেট ও সেমিপাকা বহু ভাড়া বাসা। আবার অনেকে এক ধাপ এগিয়ে বরাদ্দ কিন্তু কোয়ার্টারটি ভাড়া দিয়ে পরিত্যক্ত কোয়ার্টার দখল ও বরাদ্দ হয়নি এমন খালি কোয়ার্টার দখল করে নিজে বসবাস করেন এবং পাশাপাশি রেলের বহিরাগতদের বসবাস করতে দিয়ে আদায় করছেন মাসিক ভাড়া।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আমবাগান মসজিদের সামনের রাস্তার ঠিক বিপরীতে পাকা দেয়ালে ঘেরা লাল রঙের রেলওয়ে কোয়ার্টার। চারদিক টিনের ঝুপড়িঘর ও দোকানে ঘেরা কোয়ার্টারটি। ঘরগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, রাস্তা থেকে উঁকি দিলে কেবল কোয়ার্টারের ওপরের অংশই চোখে পড়বে। লোহার দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায় কোয়ার্টারের দেয়ালের পাশে শুধু চলাচলের জন্য সামান্য জায়গা রেখে ২৫ থেকে ৩০টি কক্ষ। রাস্তার দিকে রয়েছে একাধিক দোকান। রান্নার জন্য বাইরে রাখা হয়েছে গ্যাসের চুলা রয়েছে বাথরুমও।
ভাড়াটিয়াদের সাথে কথা বলে জনা যায়, আমরা ভাড়াটিয়া আমাদের থাকার জন্য জায়গার প্রয়োজন ছিলো কোয়ার্টারের আশপাশের বাসা ও কোয়ার্টার ভাড়া নিলে কম খরচে পাওয়া যায়। আর বসবাস করার জন্য সকল সুযোগ সুবিধা কম-বেশি পাওয়া যায়। আর এখন দ্রব্য মূল্যে যে ঊর্ধ্বগতি সেই দিকে কোয়াটার ভাড়ার পরিমাণ মোটামুটি শোচনীয়।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই বাসা বরাদ্দ নিয়ে এভাবে বাণিজ্য করছেন। তারা পুরো বাসা ভাড়াই দেননি, অনেকেই কোয়ার্টারের আঙিনা ও আশপাশের খালি জায়গায় নির্মাণ করেছেন কাঁচা-পাকা অনেক ঘর। এসব ঘর ভাড়া দিয়ে 'উপরি আয়' করছেন অনেকে। এমন আয়ের সুযোগ থাকায় রেলওয়ের বাসার চাহিদাও বেশি। তাই বরাদ্দ এবং পছন্দের বাসাটি পেতে ঘাটে ঘাটে দিতে হয় অর্থ। অবৈধভাবে ভাড়া দেওয়া এসব বাসায় থাকা পানি ও বিদ্যুতের সংযোগও অবৈধভাবে দেওয়া হয়েছে।
গোপন সূত্রে পাওয়া, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন চট্টগ্রামের ৩০টি কলোনিতে চার ক্যাটাগরিতে মোট পাঁচ হাজার ৩২৯টি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ১৫৩টি। দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য ২৩৭টি, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য দুই হাজার ২৫৫টি এবং চতুর্থ শ্রেণির জন্য দুই হাজার ৬৮৪টি বাসা রয়েছে।
চট্টগ্রামে রেলওয়ের অধীনে থাকা কলোনিগুলো হলো- স্টেশন কলোনি, স্টেশন রোড এলাকা কলোনি, পলোগ্রাউন্ড কলোনি, হাসপাতাল কলোনি, সিআরবি অফিসার্স কলোনি, টাইগারপাস কলোনি, ফ্লোরাপাস কলোনি, বয়নিউ কলোনি, লালখান বাজার কলোনি, পাহাড়তলী নিউ ঝাউতলা কলোনি, পাহাড়তলী ঝাউতলা কলোনি, পাহাড়তলী টিপিপি কলোনি, পাহাড়তলী ডিজেল কলোনি, পাহাড়তলী উত্তর আমবাগান কলোনি, পাহাড়তলী ওয়্যারলেস কলোনি, পাহাড়তলী দক্ষিণ আমবাগান কলোনি, পাহাড়তলী সেগুনবাগান ও রেঞ্জ রোড কলোনি, পাহাড়তলী এক্স-ই জন কলোনি, পাহাড়তলী ফিল্টার বেড কলোনি, পাহাড়তলী মাস্টার লেন কলোনি, পাহাড়তলী শহীদ লেন কলোনি, পাহাড়তলী নিউ শহীদ লেন কলোনি, পাহাড়তলী ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভেলুয়ার দীঘিরপাড় কলোনি, পাহাড়তলী সিগন্যাল কলোনি, পাহাড়তলী পাওয়ার হাউস ও বাজার কলোনি, পাহাড়তলী স্টেশন কলোনি, পাহাড়তলী লোকো কলোনি, পাহাড়তলী হাসপাতাল কলোনি, ফ্রান্সিস রোড কলোনি, ইঞ্জিনিয়ার কলোনি এবং রেলওয়ে পোর্ট কলোনি।
আমবাগান এলাকায় একটি কোয়ার্টারে ঢুকতেই দেখা যায়, পরিচয় গোপন রেখে বাসা ভাড়া নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে শাহিন নামের ওই যুবক নিজেকে ওই ঘরের ছেলে পরিচয় দিয়ে ভেতর থেকে মাকে ডেকে আনেন। তার বৃদ্ধ মা বলেন , কোয়ার্টার খালি নেই। এটি দু'ভাগ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তারা যে অংশে থাকেন তার ভাড়া ১১ হাজার টাকা।
কোয়ার্টারের গা ঘেঁষে থাকা টিনের তৈরি একটি ঝুপড়িঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ভাড়াটিয়া জানালেন, তারা তিনটি কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন। প্রতিটি কক্ষের ভাড়া ২ হাজার ২০০ টাকা করে ৬ হাজার ৬০০ টাকা। রান্নায় ব্যস্ত অন্য এক নারী বললেন, চার হাজার ৪০০ টাকা দিয়ে দুই কক্ষ ভাড়া নিয়ে তারা থাকছেন। রাস্তার দিকে মুখ করা একটি দোকানও দেখা গেল। 'এসএম রেফ্রিজারেটর অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস' নামের ওই দোকানের মালিক সোহেল রানা জানালেন, তিন হাজার টাকা ভাড়ায় তিনি দোকানটি নিয়েছেন। লিটন প্রতি মাসে ভাড়া তোলেন।'
আমবাগান কলোনির সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব বাংলো ও কর্মচারীদের কোয়ার্টারে দেখা গেছে প্রায় অভিন্ন চিত্র। রেলওয়ের সর্বোচ্চ সংখ্যক কোয়ার্টার রয়েছে খুলশীর পাহাড়তলী এলাকায়ও। পাহাড়তলী হাসপাতালের দু'পাশে গা ঘেঁষে রয়েছে এই কলোনি। আরেকটি কোয়ার্টারের ঢুকতে দেখা যায় আঙিনা হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাখা জায়গায় ছয়টি পাকাঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভাড়া দেওয়া হয়েছে কোয়ার্টারটিও। এখানে ছয়জন পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন। প্রতিটি ঘরের ভাড়া চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
গোপন সূত্র আরেকটি তথ্য পাওয়া যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে চট্টগ্রামে ৩১ রেলওয়ে কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোয়ার্টার বাণিজ্যের সত্যতা পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তদন্তে উঠে এসেছে বসবাসের জন্য কোয়ার্টার বরাদ্দ নিয়ে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এরপরই ৩১ কর্মচারীর কোয়ার্টার বাতিলে নির্দেশনা দেয় পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীনের সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসাবাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই বাসা ভাড়া দেওয়া হলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। এটা আইনের লঙ্ঘনও। রেলের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী এটা করছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত