শিরোনাম
৪ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত, বহাল তবিয়তে হাসান- ফেরদৌস
Passenger Voice | ১১:৫২ এএম, ২০২৫-০৩-০৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ৫ আগষ্ট ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পরেও বিআরটিএ’র দুর্নীতিবাজদের লাগাম টানতে পারছিলেন না কর্তৃপক্ষ। দেদারসে অপকর্ম চালিয়ে গেলেও এবার শক্ত হাতে দুর্নীতিবাজদের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছেন সংস্থাটি। দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালনে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানের মাঠ প্রশাসনের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন থাকলেও এবার তিনি নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রমান দিচ্ছে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার ও আনিছুর জামান কর্তৃক বিআরটিএ ঢাকা জেলা সার্কেল (ইকুরিয়া) কেরানিগঞ্জের ড্রাইভিং লাইসেন্স বোর্ড পরীক্ষা কেন্দ্র গাবতলী বিআরটিসি বাস ডিপোতে অভিযান পরিচালনা কালে মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ জমির হোসেনের ব্যবহৃত অফিস কক্ষ থেকে নগদ টাকাসহ ৮ জন দালালকে আটক করে এবং কারাদন্ড প্রদান করেন। এর আগে বিআরটিএ’র সদর কার্যালয়ের ০২ জানুয়ারী তারিখের নম্বর-৩৫.০৩.০০০০.০০১.৩৩.০৪৬.২৩-১৯ নং স্মারক মোতাবেক বিআরটিএ’র সকল সার্কেল অফিস থেকে দালালমুক্ত করণের জন্য পত্র প্রেরণ করে কর্তৃপক্ষ। উক্ত পত্রের নির্দেশনা অমান্য করে দালাল প্রবেশে সহযোগিতা করা এবং দালালদের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ২ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণ এবং একই বিধিমালার ৩ (খ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় সংস্থাটির ঢাকা জেলা সার্কেলে দায়িত্ব পালনরত মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ জমির হোসেন, মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট শাহরিয়ার হাসান শান্ত, মীর্জা মাহমুদুর রশিদ, উচ্চমান সহকারী মো. আরিফ হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিআরটিএ’র ইতিহাসে এমন বিরল ঘটনা আর ঘটেনি। এর আগে বিআরটিএ’তে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণের অভিযানে আটককৃত দালালদের বিরুদ্ধে জেল-জরিমানার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিলেও, দালালদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি সংস্থাটি। এই প্রথমবারের মতো বিআরটিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন ইতিহাস তৈরি করেছেন। এর পূর্বে সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংস্থাটির সদর কার্যালয়ে সংযুক্তি করা হলে তারা নিয়মিত সদর কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না। সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখভালের জন্য সদর কার্যালয়ে নির্ধারিত কোন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন না করায় তাদের বিরুদ্ধে তদারকিও করা সম্ভব হতো না, এছাড়া সদর কার্যালয়ে সংযুক্তি থাকার ফলে নিয়মিত তদবির চালিয়ে তদন্তে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পেত তারা।
গত ৪ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করা মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ জমির হোসেনকে ৪৪৬ নং আদেশমূলে সাময়িক বরখাস্তের পাশাপাশি বিআরটিএ’র বরিশাল বিভাগীয় অফিস কার্যালয়ে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। ৪৪৩ ও ৪৪৪ নয় আদেশমূলে মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট শাহরিয়ার হাসান শান্তকে মাগুরা সার্কেলে, মীর্জা মাহমুদুর রশিদকে রংপুর সার্কেলে, একই সাথে উচ্চমান সহকারী আরিফ হোসেনকে ৪৪৫ নং আদেশমূলে দিনাজপুর সার্কেলে শাস্তিমূলক বদলী করা হয়েছে। এই কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উক্ত সার্কেলে যোগদান করলেও শুধুমাত্র তাদের হাজিরা গ্রহণ করা হবে। তবে কোন ধরণের স্বাক্ষর করার ক্ষমতা থাকবেনা বরখাস্তকৃত এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
এদিকে ঢাকা জেলা সার্কেলে কর্মরত সাবেক আওয়ামীলীগ সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এর ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে প্রভাব বিস্তারকারী মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ হাসান এখনও উক্ত সার্কেলে বহাল তবিয়তে দালাল নিয়ন্ত্রণ ও ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই সার্কেলটির উচ্চমান সহকারী মীর মো. ফেরদৌস আলম। রুট পারমিট শাখায় দালাল নিয়ন্ত্রণ ও ঘুষ বাণিজ্যের বেশ কিছু অভিযোগ থাকলে ফেরদৌস আলমের ক্ষমতার জোড়ে তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নিতে পারেনা কর্তৃপক্ষ। সাম্প্রতিক এই কর্মচারীর ঘুষ গ্রহণের একটি ভিডিও প্যাসেঞ্জার ভয়েসের হাতে এসেছে।
এর আগে বিআরটিএ’র ময়মনসিংহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবীরুর বিরুদ্ধে প্রায় কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন প্রদান করার পরেও বিআরটিএ‘র কতিপয় সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা থাকায় এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়সারা তদন্ত ব্যতিত কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
তবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারী তারিখের ৩৮১ নং স্বারকমূলে এক আদেশে বিআরটিএ’র সাতক্ষীরা সার্কেলের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. সাইফুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. ইয়াছিন।
সদর কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, ১৯ ফেব্রুয়ারী তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম ছদ্মবেশে বিআরটিএ’র সাতক্ষীরা সার্কেলে অভিযান পরিচালনার সময় অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ায় আবুল হোসেন (বাবুল) নামের এক দালালকে আটক করে দুদক। সাতক্ষীরা সদর থানার মামলা নং- ৩২। এছাড়া দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম কর্তৃক যাচাই-বাছাই ও অনুসন্ধানকালে সার্কেলের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. সাইফুল ইসলামের মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে কিছু লার্নার এবং কয়েকজন-ব্যক্তির সাথে ড্রাইভিং লাইসেন্স বিষয়ক কথোপকথন করে দুদক দেখতে পায় উক্ত ব্যক্তিদের সাথে সাইফুল ইসলামের সাথে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন হয়।
এদিকে গত ৪ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মীর্জা মাহমুদুর রশিদসহ ৭ জন কর্মচারীকে মোটরযান পরিদর্শক পদে পদে পদোন্নতির জন্য গত ০২ ফেব্রুয়ারী বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবরে প্রস্তাব প্রেরণ করেন। উক্ত প্রস্তাবে মীর্জা মাহমুদুর রশিদ চাকরিতে স্থায়ী, এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয়/ফৌজদারী মামলার কোন তদন্তাধীন বা পেন্ডিং নেই বলে উল্লেখ করেছিলেন। এছাড়াও তার গত ৫ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন ও চাকরিকাল সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করেছেন।
মীর্জা মাহমুদুর রশিদের সাময়িক বরখাস্ত আদেশে কপাল খুলে গেল মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মো. জামান হোসেনেরঃ গত ০২ ফেব্রুয়ারী তারিখের নম্বর- ৩৫.০৩.০০০০.০০১.১২.০০৩.২২-২২৯ নং স্বারকের প্রস্তাবপত্র থেকে জানা যায়, বিআরটিএ’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ১০ম গ্রেডভুক্ত মোটরযান পরিদর্শকের ১৪৫ টি পদ রয়েছে । বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৯২ (সংশোধিত) অনুযায়ী ৪৫ % পদ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৫৫ % পদ সরাসরি পন্থায় পূরণযোগ্য। বর্তমানে মোটরযান পরিদর্শক পদে পদোন্নতি কোটায় ৫৯ জন কর্মরত রয়েছে , আরো ০৭ টি শূন্যপদ রয়েছে। সেই ০৭ টি পদে মেকানিক্যাল এসিস্ট্যোন্ট থেকে পদোন্নতি দেয়া হবে। বর্তমানে মেকানিক্যাল এসিস্ট্যোন্ট বা সহকারী মোটরযান পরিদর্শক পদে ৮৪ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। তারমধ্যে ৩৪ জন কর্মচারীর নিয়োগ বিধিমালার ধারা-৫ ও তফসিলের ক্রমিক ৩১ অনুযায়ী চাকরির মেয়াদ ৬ বছরের অধিক। জ্যেষ্ঠতার তালিকায় থাকা বেলাল হোসেন চাকরি থেকে বরখাস্ত, মো. সাঈদ সিদ্দিকির ২০১৯ ও ২০২০ সালের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন দাখিল করেনি, সাজেদুল ইসলাম চাকরিতে অস্থায়ী এবং পুলিম ভেরিফিকেশন সম্পাদন হয়নি। এছাড়া ফারদিন খান এই মুহুর্তে পদোন্নতি নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে তার পরের জনকে পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আবেদন করেছেন, সর্বশেষ গত ০৪ মার্চ মীর্জা মাহমুদুর রশিদ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে। এখন মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুযায়ী সাজ্জাদুর রহমান, সাব্বির আহমেদ, সফীকুল ইসলাম রাসেল, মো. মোশাররফ হোসেন, মো. মারুফ হোসেন ভুঞা, মো. রাকিবুর রহমান ভুঞা, এবং তালিকায় ১৫ নং তালিকায় থাকা জামান হোসেন পদোন্নতি পাচ্ছেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত