শিরোনাম
দুর্নীতিবাজদের চতুরতায় বোকা বনে যায় কর্তারা । পর্ব-০১
Passenger Voice | ০৯:১২ এএম, ২০২৪-১২-১০
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র একজন চৌকস দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। ৫ আগষ্টের পূর্বে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের একজন বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড ছিলেন। বিআরটিএ’র ঘুষের টাকায় বিলাতেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতার পেছনে। হটাৎ ভোল পাল্টে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার শুরু করেছে বিআরটিএ’তে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে সারাদেশে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ হলেও প্রায় কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন দিয়েছেন তিনি। তার বিশ্বস্ত সহযোগী ও ঘুষ বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবীরু। বিআরটিএ‘র কতিপয় সিনিয়র কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা থাকায় এই কর্মকর্তা যে কোন অনিয়ম করতে পারে। এই দুই কর্মকর্তার অপকর্ম ধরতে গিয়ে বোকা বনে যায় সিনিয়র কর্তা ব্যক্তিরা।
এই দুই কর্মকর্তা মিলে ৫ আগষ্টের বিপ্লবের আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় অনুমোদন বিহীন অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন প্রদান করেন বিআরটিএ‘র ময়মনসিংহ সার্কেলে। তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধান বলছে, পুরো ২০২৪ সাল জুড়ে অবৈধ স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছে এই সার্কেল অফিসে। ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ থেকে অনুসন্ধান করে দেখা যায় ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৫৬, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৫৭, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৫৯, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৬১, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৬৫, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৬৮, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৭৫, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৭৬, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৭৯, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৮০, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৮৪, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৯০, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৯৩, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৯৬, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৯৭, ময়মনসিংহ-ব-১১-০২৯৮ পর্যন্ত ১৬ টি স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন প্রদান করেছে বিআরটিএ। তবে নিবন্ধন নিয়ে এখানেই শেষ নয়। মোটা টাকার ঘুষের বিনিময়ে বিআরটিএ’র সদর কার্যালয় থেকে এই অবৈধ গাড়ি গুলো চলাচলের জন্য পেয়েছে রুট পারমিট। এই ১৬ টি মোটরযানের মধ্যে ১১ টি মোটরযানকে ঢাকা থেকে টেকনাফ রুটে চলাচলের জন্য রুট পারমিট দেয়া হয়েছে, বাকি ৫ টি স্লিপার বাস ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে চলাচল করার অনুমোদন পেয়েছে।

ময়মনসিংহ বিআরটিএ’তে এইসব অপকর্ম চলমান থাকা অবস্থায় মোটাদাগে ঘুষ দিয়ে বিআরটিএ যশোর সার্কেলে বদলীর জন্য সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের মাধ্যমে তদবির চালিয়ে গিয়েছেন। খরচও করেছেন অনেক টাকা, তবে নুর মোহাম্মদ মজুমদার এই দুর্নীতিবাজদের কাছে দুর্বল হন নি। তবে ৫ আগষ্টের পরে ভোল পাল্টে তিনি হয়ে যায় বৈষ্যমের শিকার কর্মকর্তা। বিআরটিএ‘র বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন যোগদানের পরে আবারো তিনি যশোর সার্কেলকে টার্গেট করেন। বদলি নিতে ওয়াজেদ হোসেন আবারো মোটা অংকের তদবির চালিয়েছেন। গত ২৬ নভেম্বর সকালে " বিআরটিএ'র বদলিতে তুঘলকি কাণ্ড, মোটা অঙ্কের লেনদেনে নীতিমালা ভঙ্গ" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্যাসেঞ্জার ভয়েস। সেখানে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে বিআরটিএ’র ময়মনসিংহ সার্কেল থেকে এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন যশোর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর দায়িত্বে বদলি হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। একই দিন বিকেলে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে বিআরটিএ প্রশাসন বিভাগ নম্বর-৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১৭৬.২৪-১৯৮১ নং স্বারকমূলে এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন (পরিচিতি নং- ২০০৬২০০০২৭) সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) কে বিআরটিএ ময়মনসিংহ সার্কেল থেকে যশোর সার্কেলে বদলি করা হয়। একই সাথে দেয়া হয় নড়াইল সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব। তবে এই বদলিতে ২০১৮ সালের ০২ অক্টোবর প্রকাশিত বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন গাইডলাইন এর প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বিআরটিএ ময়মনসিংহ জেলা সার্কেল খ ক্যাটাগরির সার্কেল থেকে গ ক্যাটাগরির সার্কেলে বদলির বিষয়ে নির্দেশনা ছিল। কিন্তু ওয়াজেদ হোসেন বিভিন্ন ভাবে কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে নীতিমালা ভঙ্গ করে সরাসরি ক ক্যাটাগড়ির সার্কেল যশোর ও নড়াইল জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে বদলি হয়ে যায়।
এর আগে ০৭ নভেম্বর ১৮৪৯ নং আদেশ মূলে সার্কেলটির মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবীরুকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সার্কেলে বদলি করে কর্তৃপক্ষ।
এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন বদলির জন্য ঘুষের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে আবারও দিয়েছেন অবৈধ স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন। বদলির আগে মোটা অংকের টাকা কামানোর জন্য মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবীরু আবারও গাড়ির অবকাঠামোর ক্রটি, যান্ত্রিক ক্রটি ও আসন বিন্যাসে ক্রটির বিষয়টি জেনেও ঘুষ গ্রহণ করে এই সব স্লিপার বাস নিবন্ধনের জন্য পরিদর্শন ছাড়পত্র প্রদান করেন।
৫ আগষ্টের পরে গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৬ দিনে ১৯ টি স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধন প্রদান করেন এই দুই কর্মকর্তা। ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩০২, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩০৩, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩০৫, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩০৬, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩০৯, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩১৪, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩১৫, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩১৬, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩১৭, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩১৮, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২০, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২৩, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২৫, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২৬, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২৭, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২৮, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩২৯, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩৩১, ময়মনসিংহ-ব-১১-০৩৩২ নং স্লিপার বাস গুলোর অবৈধ ভাবে রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্রদান করেছেন।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি স্লিপার বাস বানানো হয়েছে অশোক লিল্যান্ড ১২ এমএফই এবং ১২ মিটার চেসিসের ওপর। ১২ এমএফইর ক্যাটালগে আসন ধারণ ক্ষমতার বিষয়ে লেখা রয়েছে। ইকোনমি ক্লাস ফরমেশনে ৪৫টি আসন বা দু-এক ফরমেশনে ৩০টি ‘স্লিপার সিট’ করা যাবে। দোতলা বাস বানানোর বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। আর ১২ মিটার বা তার নিচের চেসিসের বাসের ক্যাটালগে সব একতলা হিসেবে সিট বসানো অবস্থায় দেখানো হয়েছে। কিন্তু এসবের কোনো নিয়ম না মেনে বাস মালিকরা বেশি মুনাফার আশায় এবং যাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে দোতলা বাস পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছেন। যার নিচতলায় দু-এক ফরমেশনে ‘বিজনেস ক্লাস সিট’ আর ওপরে বিছানা বসিয়ে স্লিপার বানানো হয়েছে। এতে সাধারণ স্লিপার বাসের তুলনায় এসব দোতলা বাসের উচ্চতা অনেক বেশি, যা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে দেখছেন সবাই।
এমন অধিক উচ্চতার দোতলা বাস বর্তমানে চলাচল করছে একে ট্রাভেলস, টুডে ট্রাভেলস হয়ে ঢাকা-কক্সবাজার-টেকনাফ রুটে। আর এসব বাসের অধিকাংশ তৈরি হচ্ছে রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর, আমিনবাজার এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে।
যদিও যানবাহনের নিবন্ধন দেয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) বলছে, বাংলাদেশে এ ধরনের স্লিপার বাস চলার অনুমতি নেই। যেসব চেসিসের ওপর স্লিপারগুলো তৈরি হচ্ছে সেটিও অবৈধ। তাহলে কীভাবে এসব বাস অনুমোদন পেল, সে বিষয়ে দায়সারা উত্তর দিয়েছেন সংস্থাটি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছেন, এই বাসগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। চেসিসের ধারণক্ষমতার বাইরে গিয়ে স্লিপার বাসগুলো বানানো হচ্ছে। ফলে রাস্তায় চলার সময় টাইপ অ্যাপ্রুভালে বর্ণিত উচ্চতা থেকে বেশি উচ্চতা হওয়ায় গতি বাড়ার সাথে সাথে এই বাসগুলো দুলতে থাকে এবং ভারসাম্যহনি হয়ে পরে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ, যে কোনো সময় এসব বাস দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। যে কোনো চেসিস দেশে আসার পর প্রথমে চেসিসের টাইপ অ্যাপ্রুভাল নিতে হয়। এরপর বডি হওয়ার পর আবার বডির অ্যাপ্রুভাল নিতে হয়। অর্থাৎ চেসিসের সঙ্গে বডি সামঞ্জস্য আছে কি না, তার একটা অনুমোদন নিতে হয়। এটা নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু যে চেসিসগুলোর ওপর এখন স্লিপার বাস বানানো হচ্ছে তা একতলা হিসেবে দেশে এসেছে। কোনো টাইপ অ্যাপ্রুভাল ছাড়াই এখন স্লিপার-দোতলা করা হচ্ছে।

স্লিপার কোচ নিবন্ধনের সময়ে পরিদর্শন করা হয়েছে নাকি শুধু চ্যাসিস নম্বরের উপর ঘুষের বিনিময়ে পরিদর্শন ছাড়পত্র দিয়েছে বিষয়টি সম্পর্কে মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল খাবিরুর কাছে জানতে চাইলে তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমি পরিদর্শনের সময় এই গাড়ি গুলো সিঙ্গেল ডেকার এসি বাস হিসেবে পরিদর্শন ও নিবন্ধন দিয়েছি। নিবন্ধন পেয়ে ১৫ দিনের মাথায় কিভাবে তারা স্লিপার বাস হয়ে গেছে আমরা জানিনা। পরিদর্শনের সময়ে তোলা কোন ছবি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিআরটিএ’র ময়মনসিংহ বিভাগের পরিচালক (ইঞ্জিঃ) অথবা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন।
স্লিপার কোচ নিবন্ধনে গাড়িগুলোর ফাইল ও পরিদর্শন ছবি তদারকি করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বিভাগীয় পরিচালক (ইঞ্জিঃ) প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বিআরটিএ’র কোন কর্মকর্তার দুর্নীতির দায় কর্তৃপক্ষ নিবে না। আমি বিষয়টি নিজে তদন্ত করে চেয়ারম্যান স্যারকে অবগত করিবো।
অবশ্য গোমর ফাঁস করেছেন স্লিপার বাসের মালিকরাই। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চেসিস বিক্রির আগেই মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ময়মনসিংহ বিআরটিএ থেকে বাসগুলোর নম্বর ম্যানেজ করেন। পরে চেসিস কিনে নিজেদের মতো স্লিপার বাস বানিয়ে ফেলেন মালিকরা। জানান, আমদানিকারকরা আগেই বিআরটিএ’কে টাকা দিয়ে রাখে যে, এসব চেসিসের বাস এলেই তার অনুমোদন দিয়ে দিতে।
দেশে তৈরি স্লিপার বাস কিংবা দোতলা বাসের চেসিস আমদানি করছে মূলত বি কে অটোমোবাইলস এবং ইফাদ অটোস নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। বৈধতা না থাকলেও নিজেদের ইচ্ছেমতো স্লিপার বাস নির্মাণ, ক্যাটালগের নিয়মনীতি না মানা ইত্যাদি বিষয়ে জানতে দফায় দফায় যোগাযোগ করেও বক্তব্য মেলেনি ইফাদ অটোসের কোনো কর্মকর্তার।
এইসব গাড়ির রুট পারমিট কিভাবে প্রদান করা হয় জানতে বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের রুট পারমিট শাখার উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) সুব্রত কুমার দেবনাথের মোবাইল ফোনে বারবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেন নি।
এদিকে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার নম্বর-৩৫.০৩.০০০০.০০৩.৩১.০২১.১৮(পার্ট-৩)-১০০২ নং স্বারকমূলে নতুন মোটরযানের রেজিষ্ট্রেশন প্রদান, মোটরযানের ফিটনেস প্রদান, মালিকানা পরিবর্তন, ইঞ্জিন পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রভৃতি সেবা প্রদানের সময় মোটরযান পরিদর্কশ মোটরযান পরিদর্শনকালে উক্ত মোটারযানের সাথে অবশ্যই তার নিজের ছবিও তুলতে হবে এবং সেই ছবি সংরক্ষণ করতে হবে। এবং সংশ্লিষ্ট মোটরযান পরিদর্কশ ছবির ফ্রেমে পাশাপাশি থাকে এবং ছবি তোলার দিন ও সময় যাতে ছবিতে উল্লেখ থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই বাস গুলো কোন ঝুঁকিপুর্ণঃ
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো: খাইরুল আলম এর নির্দেশনা মোতাবেক মিয়াবাজার হাইওয়ে থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ মে রাত অনুমান ১২ টা ৪০ মিনিটে ঢাকার আরামবাগ হতে রিলাক্স পরিবহনের একটি স্লিপার বাস চট্রগ্রাম জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করে। সকাল অনুমান ৬ ঘটিকায় কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোডে হোটেল শাহজাহানে রিলাক্স পরিবহন বাসটি ২০/২৫ মিনিটের যাত্রা বিরতির পর চট্টগ্রাম জেলার উদ্দেশ্যে পুনরায় রওনা করে এবং মিয়াবাজার হাইওয়ে থানাধীন চৌদ্দগ্রাম এর বসন্তপুর নামক স্থানে রিলাক্স পরিবহন যার রেজিষ্ট্রেশন নং যশোর-ব-১১-০২৫১ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার বাম পাশে বাঁশঝাড়ে নামিয়ে দিলে গাড়িটি বাম দিকে কাঁত হয়ে পড়ে এবং গাড়ির নিচে চাপা পড়ে গাড়িতে থাকা ১ জন সুপারভাইজার ১ জন হেলপার সহ সর্বমোট ৫ জন নিহত হয়।
উক্ত ঘটনায় দুর্ঘটনা কবলিত স্লিপার কোচ বাসটি পরিদর্শনে যায় বিআরটিএ কুমিল্লা সার্কেলের কর্মকর্তাগণ। সেই সময়ে দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে কুমিল্লা সার্কেলের সাবেক মোটরযান পরিদর্শক সাইফুল কবীর (বর্তমানে নারায়নগঞ্জ সার্কেলে কর্মরত) বলেছেন, স্লিপার কোচ বাসটির আসন বিন্যাস সঠিক ছিল না। বাসটিতে ঝুলন্ত কিছু আসন সন্নিবেশিত ছিল, যা অনুমোদিত ছিল না। দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, স্লিপার বাসটি বিআরটিএ‘র টাইপ এপ্রোভালের সাথে নিবন্ধিত বাসের আসন বিন্যাস মিল ছিল না, গাড়িটি পরিদর্শন ব্যতিত চ্যাসিস নম্বরের উপর রেজিষ্ট্রেশন প্রদান করা হয়েছে।
যেভাবে তদন্তে পরিচালক (ইঞ্জিঃ)কে বোকা বানাবে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এস এম ওয়াজেদ হোসেনঃ
তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জবাব প্রদানের ক্ষেত্রে সব সময় সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ)গন বলে থাকেন মোটরযান রেজিষ্ট্রেশন প্রদানের সময় মোটরযান পরিদর্শক কর্তৃক মোটরযানটি পরিদর্শনের ছাড়পত্র প্রদান করে থাকে। গাড়ির অবকাঠামো ও ইঞ্জিন চ্যাসিস সনাক্তকরণ, এবং যান্ত্রিক ক্রটি মুক্ত ছাড়পত্র প্রদানের দায়িত্ব মোটরযান পরিদর্শকের। আমি রেজিষ্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ হিসেবে আমদানী সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে নিবন্ধন প্রদান করে থাকি। গাড়ির অবকাঠামোগত ক্রটির বিষয়ে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর কোন দায়বদ্ধতা নেই।
তবে এমন জবাব প্রদান করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই এস এম ওয়াজেদ হোসেনের । কারণ ২০২০ সালের ০৬ ডিসেম্বর বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানের আদেশে স্পষ্ট যে, মোটরযান নিবন্ধনের সময় মোটরযানটি পরিদর্শন করে ছবি নথীতে সংরক্ষণ করতে হবে। মোটরযান পরিদর্শক কোন মোটরযানটি পরিদর্শক করেছে সেটা তদারকি করাও রেজিষ্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। ফলে অবৈধ স্লিপার কোচ বাসের নিবন্ধনে ঘুষ গ্রহণ ও দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) কোন অবস্থায় দায়িত্ব এড়াতে পারেনা।

বাংলাদেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। “ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে চলতি বছরের ৫ মার্চ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও সিন্ডিকেট এই খাতকে জিম্মি করে রেখেছে, ক্ষেত্র বিশেষে এই আঁতাতের সামনে সরকারও ক্ষমতাহীন হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিবহন ব্যবসায় শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে টিআইবি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত