চেয়ারম্যানের অপরিপক্কতার সুযোগ নিয়ে আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করছে উপপরিচালক ও পরিচালক প্রশাসন (পর্ব-২)

বিআরটিএ'র বদলিতে তুঘলকি কাণ্ড, মোটা অঙ্কের লেনদেনে নীতিমালা ভঙ্গ

Passenger Voice    |    ১১:০৬ এএম, ২০২৪-১১-২৬


বিআরটিএ'র বদলিতে তুঘলকি কাণ্ড, মোটা অঙ্কের লেনদেনে নীতিমালা ভঙ্গ

এইচ এম হোসাইনঃ ‘ঘুষ খাইলে কী হয়, জেল হয়, ফাঁসি তো আর হয় না’। এ মন্তব্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) এক কর্মকর্তার। এমন দৃষ্টিভঙ্গির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীতে ছেয়ে গেছে পুরো সংস্থাটি। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নাগরিক সেবা প্রদান, ভাবমূর্তি হারাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই দুর্নীতিবাজদের। তারা দেদার চালিয়ে যাচ্ছেন অপকর্ম। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও তাদের দোসর বিআরটিএ'র শীর্ষ কর্মকর্তারা এখনও বহাল তবিয়তে। আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করতে মহা ব্যস্ত তারা। বিআরটিএ'র বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন ২০১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত দীর্ঘ সময় মাঠ পর্যায়ে কাজ না করার ফলে কিছুটা অপরিপক্ক হওয়ায়, সেই সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে বিআরটিএ'র পরিচালক (প্রশাসন) কামরুল ইসলাম চৌধুরী ও উপপরিচালক (প্রশাসন) রিপন কুমার সাহা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় গুলোতে কাজ করার বেশ কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে এই কট্টর আওয়ামীপন্থী আমলাদের। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের দোসরদের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সখ্যতা। আওয়ামী দোসরদের সকল তথ্য উপাত্ত আদান প্রদান ও প্রশাসন শাখার কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে দেন সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর নিজস্ব অফিসার সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নবাব ফাহমে আজিজ।

গত ১৮ নভেম্বর বিআরটিএ'র ১৯৪৩ নং আদেশমূলে দেখা যায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করে ৩০ লাখ টাকার বেশি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ২০১৬ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বিআরটিএ'র সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আবু আশরাফ সিদ্দিকীকে সংস্থাটির ঝিনাইদহ সার্কেল থেকে সিলেট সার্কেলে বদলী করা হয়েছে। তার বদলীর বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রীতিমত হতবাক হয়েছেন তারা। ৫ আগষ্টের পরেও আবু আশরাফরা কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে সেটাই আতঙ্কের বিষয় বলে মনে করছেন অনেকে। এদিকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে বিআরটিএর ময়মনসিংহ সার্কেল থেকে এ এস এম ওয়াজেদ হোসেন যশোর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর দায়িত্বে বদলি হওয়ার চেষ্টা করছেন। 

বিআরটিএ'র একটি সূত্র বলছে, ২০১৬ সালে যখন দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে তখন আবু আশরাফ সিদ্দিকি বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের সহকারী পরিচালক(ইঞ্জিঃ) এর দায়িত্বে ছিলেন, জেল থেকে বের হয়ে তিনি সংস্থাটির কুমিল্লা সার্কেলের দায়িত্ব পেয়ে যায়। এই কর্মকর্তা কখনো কোন নীতিমালা মানতেন না। মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রদান করে তিনি সব সময় তার পছন্দের সার্কেলে বদলী হতেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা সার্কেল থেকে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে আবারো সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাবে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কেলে আবারো বদলী হয়ে যায়। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার সিএনজির রেজিস্ট্রেশন প্রদান করে হাতিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ। আগামী ৬ মাসের মধ্যে তিনি চলে যাবেন অবসরে। এই কর্মকর্তাকে বিআরটিএ'র বর্তমান চেয়ারম্যান যোগদানের পরে ১৪ অক্টোবর ১৬৭৭ নং আদেশ মূলে ১৫ জন সহকারী পরিচালককে বিভিন্ন সার্কেল থেকে বদলী করেন, তার মধ্যে আবু আশরাফ সিদ্দিকিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কেল থেকে ঝিনাইদহ সার্কেলে বদলী করেন। ২৭ অক্টোবর তাদের সবাইকে অবমুক্ত ঘোষনা করে আরো একটি আদেশ দেয় চেয়ারম্যান। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ সার্কেলে যোগদান করে আবারও উক্ত আওয়ামীপন্থী আমলাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে ২০ দিনের মাথায় তিনি সিলেট সার্কেলে বদলী হয়ে যায়। 

সিলেট সার্কেল কেন পছন্দ আবু আশরাফেরঃ ২০২১ সালে সিলেট সার্কেলে ৫ হাজার সিলেট মেট্রো সিরিজে সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধনের নামে ৬০ কোটি টাকা লোপাটের চেষ্টা করেন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রিয়াজুল ইসলাম, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী, মেক্যানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট সাদিকুর রহমান ও অফিস সহকারী সাইফুল ইসলাম। সেই সময়ে সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) শহিদুল আজমের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে তারা তীব্র বাঁধার মুখে পরেন। ফলে এখনও ঝুলে আছে ৫ হাজার সিএনজির রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া। ১৪ অক্টোবরের আদেশে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রিয়াজুল ইসলামকে বিআরটিএ কুড়িগ্রাম সার্কেলে বদলী করা হলে মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী আবারো ৫ হাজার সিএনজি অটোরিক্সা নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি চালু করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আব্দুল বারীর ধারণাছিল তাকে সিলেট সার্কেলের সহকারী পরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করবে কর্তৃপক্ষ। গত ১৪ নভেম্বর ‍‌‌''খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিআরটিএ, ভেঙ্গে পড়েছে নাগরিক সেবা'' শিরোনামে প্যাসেঞ্জার ভয়েস প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ১৭ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে বিআরটিএ ১৯২৪ নং স্বারকে একটি আদেশ জারি করেন। উক্ত আদেশে সিলেট বিভাগীয় অফিসের মোটরযান পরিদর্শক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে সার্কেলটির সহকারী পরিচালকের (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তবে প্রায় ২ বছর সময় ধরে সার্কেলটির ঘুষ বাণিজ্যের টাকার ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে রিয়াজুল ইসলাম, আব্দুল বারী ও জিল্লুর রহমানের মাঝে একটি মনমালিন্য ছিল, ফলে জিল্লুর রহমানকে মেনে নিতে পারেনি আব্দুল বারী। দায়িত্ব প্রদানের ১ দিনের মাথায় ১৮ নভেম্বর ১৯৪৩ নং আদেশমূলে আবু আশরাফ সিদ্দিকীকে সিলেটের দায়িত্বে বদলী করে সিএনজি অটোরিক্সা নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করছে তারা। 

মোটরযান পরিদর্শক আবদুল বারীর ক্ষমতার জোরঃ সিলেট সার্কেলে কর্মরত মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীকে ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর বিআরটিএ কুমিল্লা সার্কেল থেকে নং-৩৫.০৩.০০০০.০১.০১৯.০২২ (অংশ-১)/২০১৮-৪১১২ সংখ্যক স্বারক মূলে বিআরটিএ কুষ্টিয়া সার্কেলে বদলী করে কর্তৃপক্ষ। তবে পছন্দের সার্কেলে বদলী হতে না পেরে কব্জির জোর দেখিয়ে ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিআরটিএ কুমিল্লা সার্কেলে মোটরযান পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কুমিল্লা সার্কেলের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আবু আশরাফ সিদ্দিকী মান্নান এর সাথে সিন্ডিকেট গড়ে কুমিল্লা বিআরটিএ’র একচ্ছত্র দালাল নিয়ন্ত্রক বনে যান আব্দুল বারী। বদলী আদেশের প্রায় একবছর ধরে আদেশ উপেক্ষা করে কুমিল্লা বিআরটিএ'তে তার ঘুষ বাণিজ্য চালালেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি বিআরটিএ প্রশাসন বিভাগ। ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি কুষ্টিয়া সার্কেলে যোগদান করেন। পরবর্তীতে কব্জির জোরে বিআরটিএ’র প্রশাসন বিভাগকে ম্যানেজ করে  ২০ মাসের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ মে নম্বর-৩৫.০৩.০০০০.০০১.১৯.১০৬.২০-৮০৭ নং স্বারক মূলে বিআরটিএ কুষ্টিয়া সার্কেল থেকে বিআরটিএ সিলেট সার্কেলে বদলী হয়ে আসেন আব্দুল বারী।  এই কর্মকর্তা কুমিল্লা সার্কেল থেকে কুষ্টিয়া সার্কেল সর্বশেষ কুষ্টিয়া থেকে সিলেট সার্কেল কোন বদলীতে নীতিমালা মানা হয়নি।

নীতিমালা ভঙ্গ করেন যেভাবেঃ ১৮ নভেম্বর ইস্যু করা আদেশে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আবু আশরাফ সিদ্দিকী বদলি আদেশে শুধু নীতিমালা ভঙ্গ হয়েছে তা কিন্তু নয়। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সংস্থাটির চেয়াম্যানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ৪ টি বদলি আদেশে তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে আওয়ামীপন্থি বিআরটিএ'র আমলারা। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গাজীপুর ও বগুড়া সার্কেল গুলোকে ক ক্যাটাগরি হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ক ক্যাটাগরির সার্কেল থেকে নীতিমালা অনুযায়ী ঘ ক্যাটাগরির সার্কেলে বদলি করার কথা। কিন্তু গাজীপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) হারুন উর রশিদকে বগুড়া সার্কেলে বদলি করা হয়েছে। একই সাথে বগুড়া সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গাজিপুর সার্কেলে বদলি করা হয়।

একই সাথে দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার রাজশাহী সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) আব্দুর রশিদকে বিভাগীয় অফিস সিলেটে বদলি করার ক্ষেত্রে নীতিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে। বিআরটিএ’র সূত্র বলছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আব্দুর রশিদ বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, ২০২১ সালের শেষের দিক থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তিনি দেড় বছর ঢাকা মেট্রো-১ সার্কেলের ড্রাইভিং লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর দায়িত্ব পালন করেছেন। পরে ৬ মাস নেত্রকোনা সার্কেলের দায়িত্বে থাকার পরে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি আবারও সদর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল তাকে রাজশাহী সার্কেলে বদলী করে কর্তৃপক্ষ, ০৭ মাসের মাথায় আবারও তাকে বিআরটিএ বিভাগীয় অফিস সিলেটে বদলি করা হয়েছে। গত ১০ বছরের আব্দুর রশিদের বদলি আদেশে কর্তৃপক্ষ সবসময় নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন।   একই সাথে ১৬৭৭ নং আদেশে বিভাগীয় অফিস খুলনা থেকে রাঙ্গামাটি সার্কেলে বদলী করা মঈনুল ইসলামকে আবারও মাগুরা সার্কেলে বদলি করা হয়েছে। 

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) রায়হানা আক্তার উর্থী প্রায় ৯ বছর ধরে চট্টগ্রাম জেলা সার্কেল, চট্টমেট্রো-২ সার্কেল ও বিভাগীয় অফিস চট্টগ্রাম এই সার্কেল গুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। নীতিমালা অনুযায়ী এই তিন সার্কেল ক ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে। বিআরটিএ’তে দীর্ঘ সময় ধরে ফেনী ও নোয়াখালী জেলার চেয়ারম্যানরা দায়িত্ব পালন করার কারণে ফেনী জেলার এই কর্মকর্তা ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে ৯ বছর ধরে এই তিন সার্কেলের দায়িত্ব ভাগিয়ে নিয়েছেন। সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ক ক্যাটাগরির সার্কেল থেকে এই কর্মকর্তাকে ঘ ক্যাটাগরির সার্কেলে কেন বদলি করা হয়নি সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে সহকারী পরিচালকগণ। বিআরটিএ’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা মনে করে এবারও প্রভাব বিস্তার করে রায়হানা আক্তার উর্থী চট্টগ্রাম বিভাগের যে কোন একটি সার্কেল দায়িত্ব ভাগিয়ে নিবে। 

অন্যদিক বরিশাল সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা দেবাশিষ বিশ্বাসকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিভাগীয় অফিস বরিশালের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) খালিদ মাহমুদকে বরিশাল ও ভোলা জেলার দায়িত্ব প্রদান করেছেন। তবে তীব্র ক্ষোভের বিষয় হচ্ছে ২০১৪ সালে মেকানিক্যাল এসিস্ট্যান্ট পদে যোগদান করা হাবিবুর রহমান একসময়ে দেবাশিষ বিশ্বাসের জুনিয়র ছিল, সেই হাবিবুর বছর খানেক আগে মোটরযান পরিদর্শকের পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাকে বরগুনা সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এখন বিভাগীয় মিটিং চলাকালিন সময়ে পদবী বলে বরিশাল সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক দেবাশিষ বিশ্বাস হাবিবুর রহমানকে পদাধিকার বলে স্যার সম্মোধন করতে হবে যা দেবাশিষের চাকরি জীবনে এর চেয়ে বড় কোন লজ্জা হতে পারেনা মর্মে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে ৭ নভেম্বর ১৮৪৯ স্বারকে ৩৭ জন মোটরযান পরিদর্শককে বদলি করে বিআরটিএ। তবে তারা এখনও নতুন কর্মস্থলে কেউ যোগদান করেনি। এমন পরিস্থিতিতে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানের আদেশের গুরুত্ব হারিয়েছে কর্মকর্তাদের কাছে। তাদের মধ্যে অনেকে আদেশ বাতিলের জন্য আওয়ামীপন্থি আমলাদের কাছে দেন দরবার চালাচ্ছে। আবার অনেকে মানবিক বিবেচনায় নিজ নিজ বিভাগে নীতিমালা মেতে বদলি করার অনুরোধ জানিয়েছেন প্রশাসন শাখায়। অন্যদিকে বদলি আদেশাধীন কর্মকর্তাদের নিয়ে হ য ব র ল কাণ্ড করেছে বিআরটিএ। তাদের মধ্যে যশোর সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক ওমর ফারুককে উক্ত স্বারকে সুনামগঞ্জ সার্কেলে বদলি করা হয়। আবার ১৭ নভেম্বর ১৯২৪ নং আদেশমূলে ওমর ফারুককে যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত যশোর সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছেন। একই আদেশে ২০১৬ সালে মেকানিক্যাল এসিস্টেন্ট মো. ফরহাদ হোসেন অল্পকিছু দিন আগে মোটরযান পরিদর্শক পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাকে নড়াইল সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছে। এছাড়াও ১৭ নভেম্বর বিআরটিএ'র ঢাকা মেট্রো-০১ সার্কেলের উপপরিচালকের (ইঞ্জিঃ) দায়িত্ব প্রদান করেন ঢাকা বিভাগীয় অফিসের স্বদেশ কুমার দাসকে দায়িত্ব প্রদান করেন। তবে একই তারিখ রাতে তিনি প্রশিক্ষণের জন্য বিআরটিএ'র পক্ষ থেকে জাপানে গিয়েছেন। ফলে এখনও উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) ছাড়াই চলছে ঢাকা মেট্রো-০১ সার্কেল অফিস। এদিকে ঝিমিয়ে পড়া চট্টমেট্রো-১ সার্কেলের উপপরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) আইনুল হুদা চৌধুরীকে। এর আগেও তাকে চট্টগ্রাম মেট্রো-২ সার্কেলের উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করেছেন। ফলে পুরা চট্টগ্রামবাসী নাগরিক সেবা গ্রহণে হয়রানরি শিকার হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ আমলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় গুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন কামরুল ইসলামঃ এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আওয়ামীপন্থি বিআরটিএ'র পরিচালক (প্রশাসন) কামরুল ইসলাম চৌধুরী, ২০০৭ সালের ০৫ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত এই কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী সচিব পদে Finance Division, একই বছরে ১৯ অক্টোবর থেকে ২০১৩ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত Export Promotion Bureau এর ডেপুটি ডিরেক্টর, ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারী পর্যন্ত অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার শরিয়তপুর ডিসি অফিসে, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারী থেকে ২০১৫ সালের ০৬ এপ্রিল পর্যন্ত যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ে, ২০১৫ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপসচিব পদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে, ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চীফ এস্টেট অফিসার পদে, ২০১৮ সালের ২৫ মার্চ থেকে ০৮ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন ভুমি সংস্কার বোর্ডে, ৩০ জুলাই থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে, ২০১৮ সালের ০৭ নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের ০৪ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে, ২০২১ সালের ০৫ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১১ জুলাই থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিআরটিএ'র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

বিআরটিএ’তে অতিরিক্ত দায়িত্বের ছড়াছড়িঃ আওয়ামীপন্থি এই আমলাদের ম্যানেজ করতে পারলে অতিরিক্ত দায়িত্ব ভাগিয়ে নিতে পারছে অনেকে। এদিকে ২০১৪ সালে নিয়োগ পাওয়া মোটরযান পরিদর্শকগণ চাকরির বিধিমালা অনুযায়ী ৫ বছর পরে সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) পদে পদোন্নতি পাওয়ার কথা। প্রায় ১১ বছর একই পদে চাকরি করছে তারা। পদোন্নতির যোগ্য প্রার্থী ও সিনিয়রিটি লিষ্ট না মেনে চলতি দায়িত্ব বা পদোন্নতির ব্যবস্থা না করে যত্রতত্রভাবে উপপরিচালক (ইঞ্জিঃ) ও সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে। উক্ত অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানে মোটা অঙ্কের লেনদেনও হচ্ছে বলে লোকমূখে অভিযোগ রয়েছে। 

বিআরটিএ’র আওয়ামীপন্থি আমলা পরিচালক (প্রশাসন) কামরুল ইসলাম চৌধুরী, উপপরিচালক (প্রশাসন) রিপন কুমার সাহা ও সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) নবাব ফাহমে আজিজ খানের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে।  এই হ য ব র ল পরিস্তিতিতে বিআরটিএ’র নাগরিক সেবা প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে বলে অনুসন্ধান বলছে।