আদেশ অমান্য করে ৬ মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত

শাস্তি ছাড়ায় পদোন্নতির চেষ্টা বিআরটিএর গোলাম হায়দারের

Passenger Voice    |    ০৫:০৪ পিএম, ২০২৪-০৬-৩০


শাস্তি ছাড়ায় পদোন্নতির চেষ্টা বিআরটিএর গোলাম হায়দারের

এইচ এম হোসাইনঃ আদেশ অমান্য করে ৫ মাস ১৯ দিন ধরে বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) গোলাম হায়দার সরকার এবার পদোন্নতি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। গত ১৯ জুন তিনি বিআরটিএতে যোগদানের জন্য পত্র জমা দিলেও সংস্থাটির সদ্য বিদায়ি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের আদেশ অমান্য করার কারণে তার যোগদানপত্র টি মঞ্জুর করেনি কর্তৃপক্ষ ।  গত ৩০ জুন এক আদেশে বিআরটিএর চেয়ারম্যান পদে গৌতম চন্দ্র পাল এর  যোগদান করলে পুনরায় তৎপর হয়ে উঠেন তিনি। এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বাড়ির পাশে গোলাম হায়দার সরকারের বাড়ী হওয়ায় এবার মন্ত্রণালয় থেকে জোর তদবির চালানোর প্রচেষ্টা করছেন তিনি। এতে মোটাদাগে তদবিরের পাশাপাশি গোলাম হায়দার সরকারকে যোগদান, উপপরিচালক পরে পদোন্নতি এবং সিনিয়রিটি প্রদানের জন্য বিপুল অংকের ঘুষ লেনদেন করতে চান বলেও বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত করেছে।  

সূত্র বলছে ২০২১ সালের ০২ জুন বিআরটিএর ২২৭ নং স্বারকের আদেশ মূলে যুক্তরাষ্ট্রের “লামার ইউরিভার্সিটি” তে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টে উচ্চশিক্ষার্থে অধ্যয়নরত ছিলেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) গোলাম হায়দার। মার্স্টাস কোর্সের জন্য দাখিলকৃত অফার লেটারে সময়সীমা ছিল ২০২৩ সালের ২০ মে পর্যন্ত। তবে এই কর্মকর্তা আরো ৬ মাসের ছুটির আবেদন করলে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা ২০২৩ এর ২৫ (ক) (র) অনুযায়ী প্রেষণে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে এই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পিএইচডি অধ্যায়নের জন্য আরো ২ বছরের ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করিলে বিদেশে অবস্থানরত থাকা অবস্থায় অন্যকোন কোর্সে ভর্তির আবেদন ও ছুটি মঞ্জুরীর কোন সুযোগ না থাকায় একই সালের ১৯ ডিসেম্বর ২৫৯৬ নং স্বারকে তাকে ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশনা দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে তিনি ২৪ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা ২০২৩ এর পরিপন্থি আরো ১ বছর সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন। এরপর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাকে ২৬৪৯ নং স্বারকের এক আদেশে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, জনপ্রশাসন ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা, ২০২৩ এর ২৫ (ক) (র) অনুযায়ী গোলাম হায়দার সরকারের ২০২১ সালের ২৩ মে তারিখে সম্পাদিত মুচলেকা (বন্ড) অনুযায়ী প্রেষনের আদেশ ১ বছর বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করার কোন সুযোগ নেই। এবং মঞ্জুরকৃত ছুটি শেষে দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য পুনরায় তাকে নির্দেশ প্রদান করে পত্র প্রেরণ করেন সংস্থাটির উপপরিচালক (প্রশাসন) সরদার মাহবুব রহমান। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর উপপরিচালক (প্রশাসন) রিপন কুমার সাহা প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) গোলাম হায়দার সরকার কিছুদিন পূর্বে চেয়ারম্যান বরাবরে যোগদানের আবেদন দিলে চেয়ারম্যান মহোদয় সেটা মঞ্জুর করেনি। তার আবেদনটি মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য প্রেরণ করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটা বাস্তবায়ন হবে। 

গোলাম হায়দার সরকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার ছুটি শেষে যখন কর্মস্থলে যোগদান করেনি, তখননি আমরা আইন অনুযায়ি বিষযটি মন্ত্রণালয়কে অবগত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয় কোন ধরনের নির্দেশনা না দেওয়ায় তার যোগদান পত্রটি মঞ্জুর করা হয়নি। যেহেতু সে আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেছে সেহেতু তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরে যোগদান প্রদান করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং এন্ড ট্রেনিং (সিপিটি) অনুবিভাগ বিদেশ প্রশিক্ষণ গবেষণা ইউনিট এর ২০২৩ সালের ১১ জুলাই প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা-২০২৩ এর ২৭ ধারায় গ উপধারায় বলা হয়েছে বিদেশে প্রশিক্ষণ শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ০৭ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে একটি কোর্স সমাপ্তির প্রতিবেদন এবং পরিবীক্ষণ দলের সদস্যগণ একটি সমন্বিত পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন সরকারী আদেশ ইস্যুকারী মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন। ঘ উপধারায় বলছে অনিবার্য কারণে যোগদানে বিলম্ব হলে এর জন্য ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। ব্যাখ্যা গ্রহনযোগ্য না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

তবে ২৮ ধারায় বলা হচ্ছে অনুচ্ছেদ ২৮ (ক) তে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় চাকরি না করে পদত্যাগ করলে অথবা চাকরি থেকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর প্রশিক্ষণ/উচ্চশিক্ষাকালে যে পরিমান বেতন ভাতা প্রাপ্ত হয়েছেন তার সমপরিমান অর্থ সরকারকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকিবে।