৪৪ স্কুল ছাত্রের সড়কে লাশ হওয়ার এক যুগ

মিরসরাইয়ে নৌকার প্রার্থীর ইশতেহারে নেই সড়ক নিরাপত্তার অঙ্গিকার

Passenger Voice    |    ০৮:২৪ পিএম, ২০২৩-১২-২৫


মিরসরাইয়ে নৌকার প্রার্থীর ইশতেহারে নেই সড়ক নিরাপত্তার অঙ্গিকার

জয়নাল আবেদীন ঃ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতির একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ।  ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযোদ্ধা তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় হুইপ এবং ১৯৯৬ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। ২০০৮ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একজন সৎ, ভদ্র, নম্র, স্পষ্টবাদী ও উদার মনোভাবের মানুষ হিসেবে নিজ দলের নেতাকর্মীসহ চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের নিকট তার সুনাম রয়েছে। তবে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবার তিনি অংশগ্রহন করছেন না। চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসন থেকে এবার আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন প্রবীন এই নেতার পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেল। 

তবে অনান্য সময়ের চেয়ে এবারের মিরসরাই আসনের নির্বাচন হবে ভিন্ন। মোশাররফ হোসেনের দূর্গে এবার হানা দিতে চায় মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিনও নিয়েছেন এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক ঈগল। ঈগলকে সংসদে পৌঁছাতে মাঠে নেমেছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে নির্বাচনী ইমেজ, উৎকন্ঠা, উদ্দীপনা। তবে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মানুষ যতটা ভালবাসতো এবং পাশে থাকতো এবারের নির্বাচনের হয়তো তারপুত্র সবাইকে পাশে পাবে না। তবে নির্বাচনে যে আসুক তাতে সাধারণ মানুষের তেমন কোন ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন অনেকে। 

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশের সর্ববৃহৎ সড়ক দুর্ঘটনার স্থান মিরসরাই। ২০১১ সালের ১১ জুলাই বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলা দেখে বাড়ি যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ স্কুল ছাত্রসহ ৪৫ জনের মৃত্যু হয়। দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই সড়ক দুর্ঘটনায় শোকাহত পরিবারগুলোকে সান্তনা দিতে ছুটে মিরসরাই এসেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা , সেই সময়ে এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন বর্তমান নৌকার মাঝি মাহবুব উর রহমান রুহেল এর পিতা সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার  মোশাররফ  হোসেন। দেখতে দেখতে পার হলো বারটি বছর। তবে নিরাপদ হয়নি মিরসরাই এর সড়ক পথ। দীর্ঘ সময় ধরে এই জনপদের সড়ক নিরাপদ না হলেও এবারের নির্বাচনে নৌকার মনোনিত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেলের ইশতেহারে সড়ক নিরাপত্তার বেশ কিছু অঙ্গিকারের কথা থাকবে বলে আশা করেছিল মিরসরাইবাসী।

তবে গত ১৮ ডিসেম্বর মিরসরাই উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে মাহবুব উর রহমান রুহেল ২২ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষনা করেন। তার একদিন পরে ২৭ দফা প্রতিশ্রুতি নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর মিরসরাই লতিফিয়া সড়কের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন।

মিরসরাই-১ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইজনের নির্বাচনী ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় আলোচিত সমালোচিত এই দুই প্রার্থীর ঈগল প্রতিকের ইশতেহারে সড়ক নিরাপত্তার অঙ্গিকার দেখা মিললেও নৌকার প্রার্থীর ইশতেহারে নেই অতি গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গিকার।

১৬ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মিরসরাই উপজেলা। দেশের সবচেয়ে বৃহত্তর ইকোনমিক জোন এ অঞ্চলে অবস্থিত। এ ছাড়া নানা কারণে মিরসরাই উপজেলা সব সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এ  উপজেলার একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সারাদেশের মানুষকে কাঁদিয়েছিল। দেশের লাইফলাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশের ৩০ কিলোমিটারে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারাচ্ছেন আবার অনেকেই সুচিকিৎসার অভাবে অকালেই পঙ্গু হচ্ছেন তাই দুর্ঘটনায় আহতদের দ্রুত সেবা নিশ্চিতকরণে ট্রমা সেন্টার স্থাপনের অঙ্গিকার করেছেন গিয়াস উদ্দিন। 

তবে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ কল্পে স্কুল কলেজ ছাত্র/ছাত্রীদের সড়ক নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, সড়কে জেব্রা ক্রসিং, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস, ওভারপাস নিমার্ণের বিষয়ে গিয়াস উদ্দিনও তার ইশতিহারে বলেনি। 

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৌকার প্রার্থী মাহবুব উর রহমান রুহেল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন মিরসরাইবাসীকে সড়ক নিরাপত্তায় অঙ্গিকার করতে হবে যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে ৪৪ স্কুল ছাত্রের নিহতে দিনটি স্বরনীয় করে রাখতে ১১ জুলাইকে “যাত্রী অধিকার দিবস” পালন করা হবে। এবং সংসদে এই বিষয়টি উপস্থাপন করে ১১ জুলাইকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাবে। 

নৌকার মনোনিত প্রার্থী মাহবুব উর রহমান প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের চলমান পক্রিয়া। আমরা সব সময় টিনেজারদের মোটরসাইকেল চালানোর সময় মান সম্মত হেলমেট ব্যবহার, অতিরিক্ত গতিতে না চালানোর বিষয়ে, সড়ক ব্যবহার এবং গণপরিবহনের চালকদের সব সময় নিরাপদ যাত্রী সেবা প্রদানের বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলছি। এছাড়া  সড়কের উন্নয়নে যে সকল বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমি সেই বিষয়টিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিব। 

স্বতন্ত্র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আপনারা সকলে জানেন আমি সব সময় চট্টগ্রাম মেডিকেলে রোগিদের সেবায় নিয়োজিত থাকি আমি লক্ষ্য করেছি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিতে নিতে অনেক সময় বাঁচানো সম্ভব হয়না। আমি নির্বাচিত হলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও সড়কের বিশেষজ্ঞদের সমন্নয়ে একটি বিশেষ টিম গ্রঠন করে একটি ট্রমা সেন্টার তৈরি করবো। এবং সেখানে ২৪ ঘন্টা উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের নিশ্চিয়তা দিব। আমি নির্বাচিত হলে ৪৪ স্কুল ছাত্রের মৃত্যুকে স্বরণীয় করে রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১১ জুলাইকে সড়ক নিরাপত্তার জন্য জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করার অনুরোধ জানাবো। তরুন প্রজন্ম সড়কে নিরাপদ না হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা কিভাবে গড়বে তারা।