ট্রলার মেরামত ও জাল বুননে ব্যস্ত উপকূলের জেলেরা

Passenger Voice    |    ০১:৪৪ পিএম, ২০২২-০৬-২২


ট্রলার মেরামত ও জাল বুননে ব্যস্ত উপকূলের জেলেরা

সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে বঙ্গোপসাগরে চলছে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এ নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। এরই মধ্যে ইলিশ শিকারের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পটুয়াখালীর প্রায় ৭০ হাজার জেলে। মৎস্য বন্দরগুলোতে ট্রলার মেরামত, জাল বুনন ও পুরোনো জাল রিপু করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। 

জানা গেছে, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, বাধাহীন প্রজননের লক্ষে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় সকল প্রকার মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার কারণে মহিপুর ও আলিপুর মৎস্য বন্দর ছাড়াও উপকূলে নোঙর করে আছে মাছ ধরার হাজারও ট্রলার। 

মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, পটুয়াখালী জেলায় এক হাজারের বেশি গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। এছাড়া পাঁচ শতাধিক নদীতে মাছ ধরার নৌকা রয়েছে। জেলায় নিবন্ধিত ৭০ হাজার জেলে রয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরে চলছে ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা। আর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এসব জেলেরা বর্তমানে ট্রলার মেরামত, জাল বুনন ও পুরোনো জাল রিপু করা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিনে পটুয়াখালীর আলিপুর ও মহিপুর মৎস্য বন্দর ও রাঙ্গাবালীর চরমন্তাজ ঘুরে দেখা যায়, শত শত ট্রলার ঘাটে বাঁধা রয়েছে। অনেক ট্রলারে মরিচা পড়েছে, কোনোটির রং জ্বলে গেছে আবার অনেক ক্ষেত্রে জাল ছিঁড়ে গেছে। তাই ডকইয়ার্ডে ট্রলার তুলে আলকাতরা দিচ্ছে কেউ। আবার কেউ নতুন ট্রলার বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া অনেকে পুরোনো জাল রিপু করছেন। 

রাঙ্গাবালী এলাকার জেলে আবুল হোসেন বলেন, এহন ইলিশ ধরা বন্ধ আছে। কয়েক দিন পরই নিষেধাজ্ঞা শেষ হইয়া যাইব। তহন আবার ইলিশ ধরা শুরু হইবে। এহন ট্রলার মেরামত করছি। মনে হয় এ বছর সাগরে ভালো ইলিশ পাওন যাইবে।

মহিপুর এলাকার জেলে হাসান মিয়া বলেন, হাজার হাজার জেলে বইয়া আছে অবরোধ দেইখা। ৬৫ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে কষ্ট হইতাছে। অবরোধ ভঙ্গ কইরা তো আর মাছ ধরতে যাইতে পারি না, তাই পুরোনো জাল ঠিকঠাক করছি। আশা করি এই বছর অনেক ইলিশ জালে ধরা পড়বে।

কুয়াকাটা ও আলিপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, সাগরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আলিপুরে ২৫ হাজার জেলে এখন বেকার। তবে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে মাছ শিকারে নেমে পড়বে। এ জন্য পূর্বপ্রস্তুতিও নিচ্ছে অনেকেই। এর মধ্যে কেউ ট্রলার মেরামত করছে, জালও ঠিকঠাক করতেছে। আশা করি নিষেধাজ্ঞা উঠলে সাগরে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, অবরোধ চলাকালীন সরকার ভিজিএফ চাল দিচ্ছে কিন্তু প্রকৃত জেলেরা পাচ্ছে না। জেলায় নিবন্ধিত ৭০ হাজার জেলে আছে। তবে সবাই প্রকৃত জেলে না। আমরা মৎস্য বিভাগকে অনেকবার বলছি, জেলেদের নিয়া বসে প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধন করেন। যাতে করে প্রকৃত জেলেরা সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা পায়।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম বলেন, মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধিতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে। এ সময় জেলেরা যাতে কোনো ধরনের মাছ শিকার না করে, তার জন্য বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত নিবন্ধিত জেলেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।