মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের সুপারিশ বিআরটিএর

Passenger Voice    |    ১০:৫৭ এএম, ২০২২-০৬-২০


মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধের সুপারিশ বিআরটিএর

বিগত ঈদুল ফিতরে সারা দেশে যত প্রাণঘাতী সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার একটা বড় অংশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল মোটরসাইকেল। ঈদ বা উত্সব ছাড়াও অন্য সময়ে দেশের মহাসড়কগুলোতে সিংহভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী থাকে মোটরসাইকেল। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের মহাসড়কগুলোতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। তবে যেসব জাতীয় মহাসড়কের পাশে ‘সার্ভিস রোড’ আছে, সেসব মহাসড়কের সার্ভিস রোডে মোটরসাইকেল চলতে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল বিআরটিএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এসব সুপারিশ করা হয়।

‘আসন্ন ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে সড়কপথে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত নির্বিঘ্ন এবং দুর্ঘটনা হ্রাসকরণের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় বলা হয়, বিগত তিনটি ঈদুল ফিতরের তুলনায় সর্বশেষ ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমের তথ্য পর্যালোচনায় সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ঈদের সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলকে দায়ী করা হয়েছে।

সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের আটদিনে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে প্রতিদিন গড়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১৩ জন। এর আগের ঈদুল ফিতরের তুলনায় গত ২৮ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত এবারের ঈদুল ফিতরের সময় সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে তুলনামূলক বেশি।

কর্মশালায় গত চারটি ঈদুল ফিতরের সময়কার সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়। বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের সময় ৬০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে নয়জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছিল আরো ১৬৫ জন। একইভাবে ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরে ৪১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিদিন গড়ে মারা যায় আটজন। ওই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয় ৫৩ জন।

২০২১ সালের ঈদুল ফিতরের সময় সারা দেশে ৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ৫৮ জন। প্রতিদিন গড়ে সাতজনের মৃত্যু হয়। আর সর্বশেষ চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে সারা দেশে ১০৬টি দুর্ঘটনায় ১০৬ জনের মৃত্যু হয়। আহতের সংখ্যা ১৫৬।

মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছে বিআরটিএ। এগুলো হলো মহাসড়কে অসতর্ক, দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো; চালকের অননুমোদিত/ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, পথচারীর অসাবধানতা, যেখানে সেখানে পারাপার এবং পথচারী কর্তৃক রাস্তা চলাচলে ডান পাশ ব্যবহার না করা; মহাসড়কে ধীরগতির যানবাহন এবং নিবন্ধনবিহীন যানবাহন চলাচল; মোটরসাইকেলে অতিরিক্ত আরোহী বহন, হেলমেট ব্যবহার না করা, চালকের অসচেতনতা ও ট্রাফিক আইন না মানা; সাইড রোড থেকে মূল সড়কে প্রবেশের ক্ষেত্রে মূল সড়কের গাড়িকে অগ্রাধিকার না দেয়া এবং মহাসড়কে ট্রাফিক সাইন, রোড মার্কিং ইত্যাদি স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী না থাকা।

দুর্ঘটনা রোধে জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা; দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে চলা মোটরযান এবং অননুমোদিত ওভারটেকিং করা মোটরযানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, জাতীয় মহাসড়কে হিউম্যান হলার, থ্রি-হুইলারসহ নছিমন, করিমনের মতো বাহন চলাচল বন্ধ করা, রাস্তা পারাপারে পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি, চালকদের প্রশিক্ষণ, খেলাপি ও কাগজপত্রবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করা এবং জাতীয় মহাসড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সুপারিশ করেছে বিআরটিএ।

সূত্র: বণিক বার্তা