জুনে সড়কে ৩৯৮ জনের প্রাণহানি

Passenger Voice    |    ০২:১৮ পিএম, ২০২১-০৭-০৭


জুনে সড়কে ৩৯৮ জনের প্রাণহানি

গত জুন মাসে দেশে ৩২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ৪২৩ জন। নিহতদের মধ্যে ৫২ জন নারী ও ৩৩ জন শিশু রয়েছে।

এছাড়া সড়কে ১৪২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৫১ জন। যা মোট নিহতের ৩৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ওই মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ছিল ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ৯৪ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৬৭ জন, অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এদিকে ওই সময়ে দুইটি নৌ-দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত এবং ১ জন আহত হয়েছেন। একটি রেলপথ দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে এক জনের।

বুধবার (৭ জুলাই) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া যায়। সংগঠনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজিকে।

প্রতিবেদনে দেখা যায় মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫১ জন, বাস যাত্রী ১৪ জন, ট্রাক-পিকআপ-ট্রলি যাত্রী ৩৮ জন, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ২০ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (সিএনজি-ইজিবাইক-অটোরিকশা-টেম্পো-লেগুনা) ৫৭ জন, নসিমন-মাহিন্দ্র-চান্দের গাড়ি-টমটম যাত্রী ৯ জন এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল ও ঠ্যালাগাড়ি আরোহী ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনাগুলোর ৭৮টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১১৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯৭টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৩৫টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ৪টি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় নিহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য ৩ জন, আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য ২ জন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ১ জন, স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষক ৮ জন, আইনজীবী ২ জন, আমিরাত প্রবাসী ১ জন, স্থানীয় সাংবাদিক ২ জন, ব্যাংক কর্মকর্তা ৩ জন, বিআরডিবি’র কর্মকর্তা ১ জন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ৪ জন, ওষুধ ও বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রয় প্রতিনিধি ১১ জন, স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ১৮ জন, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিক ১ জন, সেনা নিবাসের কর্মচারী ১ জন, রেল কর্মচারী ১ জন, পোশাক শ্রমিক ৬ জন, জুতা কারখানার শ্রমিক ২ জন, কৃষি শ্রমিক ৪ জন, মটর শ্রমিক ১ জন, নির্মাণ শ্রমিক ৩ জন, ইটভাটার শ্রমিক ৫ জন, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ২ জন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ৯ জন এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন ছাত্রসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫৩ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ১০টি সুপারিশ তুলে ধরে। সেগুলো হচ্ছে- দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়াতে হবে; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করতে হবে; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।