পরিবহন শ্রমিকদের অংশ দালালির সঙ্গে জড়িত

বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন পরিবহন শ্রমিকরা

Passenger Voice    |    ১২:৫০ পিএম, ২০২১-০৫-১০


বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন পরিবহন শ্রমিকরা

ঢাকা-চাঁদপুর লাইনের পদ্মা সুপার সার্ভিসের পরিবহন শ্রমিক আবুল কাশেম। করোনার কারণে পরিবহন খাতের স্থবিরতায় সম্প্রতি তিনি বিকল্প পেশা হিসেবে চায়ের দোকান খুলেছেন।

চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মহামায়া বাজারে তার চায়ের দোকান। লকডাউনের কড়াকড়ির সময়ও লুকিয়ে দোকান করতেন। তিনি বলেন, যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে, আমাদের পরিবহন কবে চালু হবে তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। এদিকে সংসারও চলে না। তাই চায়ের স্টল খুলেছি। বেচাকেনা যা হয়, কোনো রকম খেয়েপড়ে চলতে তো পারছি।

এ গল্প শুধু আবুল কাশেমের নয়। দীর্ঘদিন দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন পরিবহন শ্রমিকরা। দেশের বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ এবং পরিবহন কবে খুলবে তা এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় ক্রমেই এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। কেউ সাময়িক সময়ের জন্য, কেউবা একেবারেই এ পেশা বদলে ফেলছেন। চক্রবৃদ্ধির সুদের বোঝায় ব্যবসা নিয়েও বিপাকে আছেন পরিবহন মালিকরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে ২০ বছর ধরে বাস চালাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার। তিনি বলেন, দীর্ঘ ড্রাইভিং জীবনে অনেক কোম্পানির গাড়ি চালিয়েছি। সর্বশেষ যে কোম্পানির গাড়ি চালাতাম, তারা ঠিকমতো বেতন দিতে পারছে না। কর্মহীন এ সময়টা কৃষিকাজ করে কাটাচ্ছি। কতদিন এভাবে চলবে জানি না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিকদের বড় একটা অংশ দালালির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে লকডাউনের আগে-পরে এবং বর্তমান ঈদের বাজারে যাত্রীদের ভাড়ায় প্রাইভেট কার ও অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করিয়ে দিয়ে ভালো পয়সা কামাচ্ছেন তারা। রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, গুলিস্তান, মাওয়া, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ঘরমুখো যাত্রীদের গাড়ি ঠিক করে দেয়াই এদের প্রধান কাজ।

সরেজমিন রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, ঘরমুখো যাত্রীরা গাড়ির খোঁজে টার্মিনালে এলে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের সঙ্গে দরদাম করে প্রাইভেট কার-অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে দিচ্ছেন। পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় রেন্ট এ কারের চালকদের সঙ্গে যাত্রী ঠিক করে দেয়ার চুক্তি হয়েছে তাদের সঙ্গে।

জুরাইনের শোভা রেন্ট এ কারের চালক আলমগীর বলেন, এখন ব্যবসা ভালো পরিবহন শ্রমিকদের। তারা ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাইভেট কার ভাড়া করে দেন যাত্রীদের। আর আমাদের চালকদের ৫-৭ হাজার টাকা দিয়ে বাকি পুরো টাকা নিজেরা রেখে দেন।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদের অনেক সহকর্মীই রিকশা চালিয়ে, ভ্যান চালিয়ে, বাসাবাড়িতে দারোয়ানের কাজ করেন, কেউ কেউ বিভিন্ন জেলায় জেলায় গিয়ে ধান কেটে পয়সা উপার্জন করছেন। অনেকে আবার যুক্ত হয়েছেন দালালির সঙ্গেও।

এদিকে কাজ না থাকায় পরিবহন শ্রমিকরা নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষ করে ঈদ উপলক্ষে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা আছে বলে মনে করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর্মহীন শ্রমিকদের একটা অংশ অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ার শঙ্কা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে কেউ যদি ঢালাওভাবে এ কথা বলে যে, কাজ না থাকায় সব শ্রমিক অপরাধের দিকে ঝুঁকছেন তা অবশ্যই ভুল বলা হবে। রাজধানীতে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন অপরাধী ধরা পড়ছে। কে কোন পেশা থেকে আসছে সেই শ্রেণীবিভাগ করা পুলিশের কাজ নয়। আমরা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখি।

বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু রায়হান বলেন, দেশে দূরপাল্লার গণপরিবহন ছাড়া সবকিছুই চলছে। দীর্ঘদিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার ফলে আমাদের শ্রমিকরা কর্মহীন বেকার জীবন যাপন করছেন। অনেকেই বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পরিবহন খাত হুমকির মুখে পড়বে।