ট্রেনে হেফাজতের হামলা, নয় দিনেও মামলা করতে পারেনি রেলওয়ে

Passenger Voice    |    ১১:৩১ এএম, ২০২১-০৪-০৭


ট্রেনে হেফাজতের হামলা, নয় দিনেও মামলা করতে পারেনি রেলওয়ে

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের জনপ্রিয় বিরতিহীন সোনার বাংলা ট্রেনে গত ২৮ মার্চের হরতালে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একটি মালবাহী ট্রেনের তিনজন চালক আহত হন। ভাঙচুরের ট্রেনটি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাহাড়তলী কারখানায় মেরামতের জন্য আনা হয়। সেখানে ১৪টি কোচের ভেঙে যাওয়া ১০৮টি গ্লাস ও অন্যান্য ত্রুটি মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। ইঞ্জিন মেরামত করা হয়েছে পাহাড়তলী মার্শালিং ইয়ার্ডে। হেফাজতের ট্রেনে ভাঙচুর ও একদিন চলতে না পারায় প্রায় ২০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তবে ২৬ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির তদন্ত এখনো শুরু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে সোনার বাংলা ট্রেনে হামলার ৯ দিন পার হলেও মামলা দায়ের করতে পারেনি রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) দপ্তর মামলা দায়ের করার কথা। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি বলে জানা গেছে। মামলা না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রেলের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানা গেছে, ২৮ মার্চ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৪টি কোচের ২৭৫টি জানালা ছিল। এর মধ্যে হেফাজতের তা-বে ১০৮টি জানালা ভেঙে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে রঙ ওঠে যায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের প্রথম বিরতিহীন সুবর্ণ এক্সপ্রেস চালুর ১৮ বছর পর দ্বিতীয় বিরতিহীন ট্রেন হিসেবে ২০১৬ মালের ২৬ জুন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস যাত্রা শুরু করে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা লাল-সবুজের কোচ দিয়ে ১৮৭ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। এর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রথম বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণ এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ১৪ এপ্রিল।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোনার বাংলা ট্রেনের গ্লাস ও ইঞ্জিনে ভাঙচুরের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপককে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির তথ্য অনুযায়ী ওই ট্রেনের প্রায় ১৭ লাখ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ওইদিন ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন থেকে ঢাকা ফিরে যায়। তাই যাত্রীদের প্রায় আড়াই লাখ টাকা ফেরত (রিফান্ড) দিতে হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন জানান, সোনার বাংলার ১৪টি কোচের ১০৮টি গ্লাস ভেঙে দিয়েছে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। পরে সেটি মেরামতের জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কারখানায় আনা হয়। ট্রেনের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্লাসের ক্ষতি হয়েছে। পাথরের আঘাতে জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। এরই মধ্যে ট্রেনটি চলাচলের উপযোগী হয়েছে। তবে লকডাউনের কারণে বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ৫ বছর আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে কোচগুলো আমদানি করা হয়েছিল।

২৬ মার্চ জুমার নামাজের পরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পুলিশের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে ওইদিন বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা। এরপর থেকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

জুমার নামাজের পর ঢাকার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ওঠে বিভীষিকার নগরী। পুরো শহরে ভয়াবহ তা-ব চালায় হেফাজত কর্মীরা। হামলাকারীরা সরকারি-বেসরকারি অফিস, বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, স্বাধীনতার নানা স্থাপত্য, পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ পুড়িয়ে দেয় রেলস্টেশনও। রেললাইন উপড়ে আগুন দেওয়া হয়। লুট করা হয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। ফলে বিকাল ৪টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট ট্রেন চলাচল।