শিরোনাম
নারী দিবস
Passenger Voice | ০২:০৬ পিএম, ২০২১-০৩-০৮
বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) বিকেল ৫ টা, আসাদগেট এলাকার সড়কে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত সার্জেন্ট পূজা গুপ্তা।
নারী দিবস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিবসটি নিয়ে বিশেষ কোনো ভাবনা নেই। লক্ষ্য থাকে, সঠিক সময়ে মানুষ যেন গন্তব্যে পৌঁছতে পারে সেজন্য সহযোগিতা করা। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজে অসুবিধা না হলেও চাকরি জীবনে প্রকৃতিই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আলাপচারিতায় পূজা আরো বললেন, ‘২০১৭ সালে চাকরি জীবন শুরু। প্রথম থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। পুরুষের সঙ্গে সমানতালে কাজ করতেও কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। সিনিয়র স্যাররা প্রতিনিয়ত সহযোগিতাও করছেন। ব্যস্ত সড়কে গাড়ি থামানো, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা, মামলা করার কোন সমস্যা নেই। তবে রোদ-বৃষ্টি, ঝড় তথা প্রকৃতিক দুর্যোগে অনেক সময় অসহায় করে ফেলছে।’
নারী দিবস প্রতিটি নারীর অহংকারের দিন অভিমত ব্যক্ত করেন কমলাপুরের সড়কে দায়িত্ব পালনরত সার্জেন্ট লাইলী আক্তার। বললেন, ‘নারী হলেও পেশাগত দায়িত্ব পালনে এখন আর জড়তা নেই। পুরুষের মতো আমরাও সড়কে থেকে ৮ ঘন্টা ডিউটি করছি। রোদ-বৃষ্টি, ঝড় তথা প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা সহজেই করা গেলে পথচারি বা যানবাহন নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি আন্তরিক হওয়া যেতো।’
আরো বললেন, ‘চাকরির সঙ্গে সংসারতো আছেই। আর এসব করতে গিয়ে দিবসটি তেমনভাবে পালন করা হয় না। কষ্টও লাগে।’
একাধিক সার্জেন্টের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, সড়কে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এসব নারীদের সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে হচ্ছে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময়। কেননা কোন ট্রাফিক বক্সেও নারীদের নেই আলাদা কোনো টয়লেট। এ কারণে আশপাশের কোন অফিস কিংবা বাড়িতে গিয়ে এ কাজ সারতে হচ্ছে। যা লজ্জার, তেমন সময়ও ক্ষেপণ হচ্ছে। অনেক সময় সড়কে যানজট লেগে যায়। এছাড়া প্রকৃতিক কোন দুর্যোগে হলেও নিজেকে নিরাপদে রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রোদ-বৃষ্টিও বেকায়দায় ফেলে দেয়। থাকে না আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা। সড়ক সামাল দিয়ে সংসার, স্বামী-সন্তান তথা পরিবারকেও সময় দিতে হয়।
সরেজমিন কমলাপুর, কাকলী, মোহাম্মদপুর, মহাখালি সিগন্যাল নিউমার্কেটসহ রাজধানীর প্রায় ৩০টি পয়েন্টে নারী সার্জেন্টরা দায়িত্ব পালন করছেন। হাতে ওয়াকিটকি নিয়ে সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানো, সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ, গাড়ির কাগজপত্র যাচাই এবং মামলা দেওয়ায় পুরুষের মতো সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের থেকে জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীতে ২০১৪ সালে নারী সদস্য নিয়োগ শুরু হয়। তারই অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে সার্জেন্ট পদে অংশ নেন ১ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে প্রথমে ৪৬ জন ছিলেন সার্জেন্ট পদের জন্য। যাদের মধ্যে ২৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। রাজশাহীর সারদায় ট্রেনিং নেওয়ার পর তাদের প্রথমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে (সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার সময়) সড়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্রমান্বয়ে আরও অনেককেই এ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রেও প্রতিদিন রাজধানীতে প্রায় ৩০ জন নারী সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া নারী সার্জেন্টরা জেলা শহরগুরোতেও কাজ করছেন।
সড়কে নারী সদস্যরা যেন স্বাচ্ছন্দে দায়িত্ব পালন করতে পারেন সেজন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি জীবনে সবাই সমান হলেও মানবিক কারণে নারীদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হয়। এ কারণে প্রথমদিকে অনেক সমস্যা থাকলেও তা অনেকটাই কেটে গেছে। নারী দিবসে তাদের প্রতি রইলো আমার শুভেচ্ছা।’
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.