ঘুমন্ত বিআরটিএ, বেপরোয়া বাগেরহাটের মোটরযান পরিদর্শক পর্ব-১

Passenger Voice    |    ০৬:৩৪ পিএম, ২০২১-০৩-০৪


ঘুমন্ত বিআরটিএ, বেপরোয়া বাগেরহাটের মোটরযান পরিদর্শক পর্ব-১

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মো. ফরহাদ হোসেন মোটরযান পরিদর্শক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ বাগেরহাট জেলা সার্কেলে কর্মরত। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারী ঢাকার হেমায়েতপুর, সাভার হাইওয়েতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সময় বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের আদালত-৯ এর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট কুষ্টিয়া-জ-১১-০০০৩ নং গাড়িটি আটক করে। পরে চলাচলের ফিটনেস প্রদর্শন করতে গিয়ে গাড়িটির চালক দেখায় গাড়িটি ২০২০ সালের ১১ই মার্চ বিআরটিএ বাগেরহাট সার্কেলের এই মোটরযান পরিদর্শক ফিটনেস সনদ ইস্যু করেছে। 

এই সময় বিআরটিএর এই ম্যাজিষ্ট্রেট দেখতে পায় গাড়িটির চলাচলের কোন রুট পারমিট নেই। এমনকি গাড়িটি এখনও ৪ ডিজিটের। কিভাবে ঢাকা সিটি সার্ভিসের এই গাড়িটি বিআরটিএ বাগেরহাট জেলা সার্কেলে ফিটনেস প্রদান করেছে বিষয়টির ব্যাখ্যা ১০ দিনের মধ্যে আদালতকে দিতে নির্দেশ দিয়েছে। 

এদিকে প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধান বলছে, এই মোটরযান পরিদর্শক শুধু এই গাড়িটি নই এমন বিভিন্ন জেলা ও মহানগরীর সিটি সার্ভিস গুলোকে অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে ফিটনেস প্রদান করেছে। 

সূত্র বলছে, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর ৩৫.০০.০০০০.০২০.২২.০৪১.১৮-৬৯৯ নং সংক্ষক প্রজ্ঞাপন জারি করে রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোটরযানের ফিটনেস যে কোন সার্কেল থেকে করার অনুমতি দিয়েছিল বিআরটিএ। এই আদেশের পরে বিআরটিএর বিভিন্ন সার্কেলের কতিপয় দুর্নীতিবাজ মোটরযান পরিদর্শক যানবাহন পরিদর্শন না করে মোটা টাকার ঘুষের বিনিময়ে লক্কর, ঝক্কর গাড়িকে ফিটনেস প্রদান করা শুরু করেছিল। এইসব দুর্নীতিবাজ মোটরযান পরিদর্শকদের বেপরোয়া স্বভাব দেখে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর ৩৫.০৩.০০০০.০০৩.২৫.০৩৬.১৯-২৬৯৮ নং স্বারকে আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এই কর্মকর্তাদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেছে বিআরটিএ। তবুও সংস্থার চেয়ারম্যান ও খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালককে ঘুমিয়ে রেখে বেপরোয়া ভাবে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান করে বাগেরহাট জেলা বিআরটিএর এই সার্কেলে। 

২০২০ সালের ৪ অক্টোবর বিআরটিএর চেয়ারম্যানের আদেশে স্পষ্ট উল্লেখ্য ছিল যে, যে গাড়িটির রুট পারমিট যে রুটে রয়েছে ওই গাড়িটি চলাচলের রুটের যে কোন সার্কেল উক্ত গাড়ির ফিটনেস প্রদান করতে পারবে। রুটে চলাচলের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন কোন গাড়ি অন্য সার্কেল ফিটনেস প্রদান করার কোন সুযোগ নেই। 

আরো পড়ুন >>>> বিআরটিএর ৪ ঘুষখোর কর্মকর্তার দুর্নীতির জবাবচাই আদালত

২০২০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে গতকাল ৩ মার্চ পর্যন্ত বিআরটিএর এই সার্কেলে সর্বমোট ফিটনেস সনদ ইস্যু করেছে ১৩৪১ টি যানবাহনের। তারমধ্যে অক্টোবর মাসে ১৬৬ টি, নভেম্বর মাসে ১৯৯ টি, ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ফিটনেস ইস্যু করেছে এই কর্মকর্তা সর্বমোট ৭০৬ টি। এছাড়া জানুয়ারী ২০২১ এ ১৫৫ টি, ফেব্রুয়ারীতে ১০৫ ও গত তিন দিনে ১০ টি ফিটনেস প্রদান করেছেন ফরহাদ হোসেন। 

এই ফিটনেস গুলোর মধ্যে ঢাকা মেট্রো-জ-১৪-২৭১৬ নং গাড়িটি রাজধানীর ফুলবাড়ীয়া থেকে গাজিপুর পর্যন্ত চলাচল করে এই গাড়িটিকে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারী ফিটনেস দিয়েছে এই মোটরযান পরিদর্শক। এছাড়া ঢাকা মেট্রো-জ-১৪-১৪০৭ নং সিটি সার্ভিসের এই বাসটি দোয়ারীপাড়া থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত চলাচল করে এই গাড়ি ২৪ ডিসেম্বর ফিটনেস দিয়েছেন তিনি। ঢাকা মেট্রো-জ-১১-১০৯৭, ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-০১৩৭, ঢাকা মেট্রো-ব-১৩-০০৫৫,   ঢাকা মেট্রো-জ-১৪-০১৫০ নং গাড়ি গুলোর কোন চলাচলের রুট পারমিট নেই।  ঢাকা মেট্রো-জ-১১-২৪০৩, ঢাকা মেট্রো-জ-১১-১৯৪০ এই গাড়ি গুলোর ঢাকা সিটির কাঁচপুর থেকে টঙ্গি পর্যন্ত রুট পারমিট রয়েছে। এছাড়া গত ২২ ও ২৭ ডিসেম্বর ইস্যু করা ফিটনেস থেকে জানা যায় ঢাকা মেট্রো-ব-১১-১৫৩৮, ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-০৪৮০, ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৮১৩৯,   নং গাড়ি গুলো মোহাম্মদপুর টু নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলের রুট পারমিট রয়েছে অথচ গাড়ি গুলো ফিটনেস পেয়েছে বিআরটিএ বাগেরহাট জেলা থেকে। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ বাগেরহাট সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক ফরহাদ হোসেন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমি প্রতিটি গাড়ি স্বশরীরে পরিদর্শন করে ফিটনেস প্রদান করেছি। এখানে কোন ধরনের কোন অনিয়ম হয়নি। আদালত কেন জবাব চাইলো বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের জবাব আদালতে দেয়া হয়েছে। 

বিআরটিএর চেয়ারম্যানের আদেশ অমান্য করে এইভাবে রুট পারমিটের শর্ত ভেঙ্গে ফিটনেস কিভাবে দিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন আমি পারমিট দেখিনি। বিআরটিএর আরেকটি আদেশে মোটরযান পরিদর্শনের সময় গাড়ির সামনে দাড়িয়ে মোটরযান পরিদর্শকের ছবি তোলার আদেশ দিলে সেটা মানা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি প্রতিটি গাড়ি পরিদর্শন করে ছবি তোলে সার্কেলের সহকারী পরিচালক ও বিভাগীয় উপ-পরিচালক বরাবরে  পাঠিয়ে থাকি। 

এই বিষয়ে বিআরটিএ খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মহসীন হোসেন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, এই বিষয়ে আমি বিআরটিএ বাগেরহাট সার্কেলের সহকারী পরিচালকের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি।