ড্রাইভিং লাইসেন্স কেলেঙ্কারিতে জড়িত গাজীপুর-মুন্সিগঞ্জে প্রথম স্মার্টকার্ড দিবে বিআরটিএ

Passenger Voice    |    ০২:০০ পিএম, ২০২১-০৩-০১


ড্রাইভিং লাইসেন্স কেলেঙ্কারিতে জড়িত গাজীপুর-মুন্সিগঞ্জে প্রথম স্মার্টকার্ড দিবে বিআরটিএ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চার জেলায় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সে প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা চারটি হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর। বিআরটিএর বলছে, এ প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যদিয়ে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণে আর কোনো বাধা থাকছে না। বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ চেন্নাই ভিত্তিক মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড রোববার থেকে চারটি জেলার লাইসেন্স প্রার্থীদের আঙুলের প্রিন্ট নেওয়া শুরু করেছে। সামনের সপ্তাহেই স্মার্ট লাইসেন্স বিতরণ শুরু হবে এইসব সার্কেলে। এছাড়াও চার ধাপে সারা বাংলাদেশে চলবে ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য স্মার্ট কার্ড বিতরণের কার্যক্রম।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে, বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, আগে বিআরটিএর সঙ্গে চুক্তি ছিল টাইগার আইটির। সেটি বাদ যাওয়ার পর দু’বার টেন্ডার হয়। গত বছরের ২৯ জুলাই পাঁচ বছরের জন্য মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয়। প্রতিষ্ঠানটি মেশিনারিজ, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ার স্থাপনের কাজ শেষ করেছে। 

তিনি বলেন, আগে যারা আবেদন করেছেন অর্থাৎ বেশি সময় অপেক্ষায় থাকা প্রত্যাশীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আগে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। আমরা চার ভাগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। প্রথমে এই চার জেলায় শুরু হল। এরপর বিভাগীয় জেলা শহর, ঢাকা মেট্রো এবং সারাদেশে একযোগে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। আঙুলের ছাপ নেওয়ার পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স। 

এগারো লাখের বেশি লাইসেন্স প্রত্যাশী ইতোমধ্যে তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়েছেন এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। তবে সরবরাহ বন্ধ থাকায় অভিযোগ ও ভোগান্তি ছিল বিস্তর। যদিও বিআরটিএ বলছে, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সেবা বন্ধ ছিল। সেবা চালুর পর চাপ আরও বেড়েছে। তাছাড়া দীর্ঘসময় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রিন্টিং বন্ধ থাকায় ঝুলতে থাকা প্রত্যাশীর সংখ্যা এখন প্রায় ১২ লাখ। যদিও মেয়াদের ভিত্তিতে এ সময়ে প্রায় ২ লাখ কাগুজে ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হয়েছে।

বিআরটিএর ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি অনুসারে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড আমদানি, পার্সোনালাইজেশন সেন্টার, প্রিন্টিং স্টেশন, নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি, অন-লাইন ইউপিএস, ডাটা সেন্টার, সার্ভার, স্টোরেজ মেইনটেইন, লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্রাহককে এসএমএস পাঠানোসহ সব ধরনের সেবা দেবে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ১২০ কোটি টাকার চুক্তি পাঁচ বছরের। চুক্তি অনুযায়ী এ সময়ের মধ্যে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে প্রতিষ্ঠানটিকে। যদি খুব দরকার হয় তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিআরটিএর চাহিদা পূরণ করতে হবে। প্রতি আট ঘন্টায় ৬ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবে কোম্পানিটি। প্রতিষ্ঠানটির লজিক ফোরাম নামে বাংলাদেশি এজেন্ট প্রতিষ্ঠান এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

এদিকে পরীক্ষা বিহীন ভুয়া ড্রাইভিং কম্পিটেন্সি টেষ্ট বোর্ডের রেজুলেশন তৈরি করে ২ হাজারের অধিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করেছিল বিআরটিএ মুন্সীগঞ্জ সার্কেল। এই ঘটনায় উক্ত সার্কেলের সহকারী পরিচালক মঈদুর রহমানের অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য প্রমাণ হওয়ায় তাকে কর্তৃপক্ষ চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রদান শুরু হলেও এই সার্কেলের ভোগান্তি কমবে না বলে অনেকে মনে করেন। এবং তদন্তে প্রমাণিত ড্রাইভিং লাইসেন্সও ফিন্ট দিবে না বিআরটিএ। 

বিষয়টি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন বিআরটিএ ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালক শফিকুজ্জামান ভুইয়া। 

অন্যদিকে নাম মাত্র পরিক্ষা নিয়ে, এমনকি পরীক্ষা না নিয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করেছে বলে বিআরটিএ গাজিপুর সার্কেলের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগ। সূত্র বলছে GPC12967/19 Habibur Rahman, GPC014127/19 md dolu miah, GPC15507/19 jasim uddin, GPC13281/19 saidul islam, GPC12188/19 balal, GPC15457/19 saha alam, GPC 0939/19 md mamun, GPC 15591/19 md al amin, GPC 13554/19 iqbal hossain, GPC 13129/19 jony alam এমন রেফারেন্সের প্রায় তিন হাজার লাইসেন্সে অনিয়ম করেছে গাজিপুর সার্কেল। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করে তারপর এই সার্কেলের স্মার্ট কার্ড বিতরনের দাবী করছে অনেকে। 

তবে অভিযোগটিকে মিথ্যা বলে দাবী করেছে বিআরটিএ গাজিপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক এনায়েট হোসেন মন্টু। তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পেন্ডিং থাকা কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্স এ কিছু তথ্য ভুল ছিল এগুলো সংশোধনের কাজ চলছে। এছাড়া নতুন কোম্পানিটির কাছে অনেক রেফারেন্স নম্বর ভুল দেখাচ্ছে। তবে আমার সার্কেলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই।