মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন

Passenger Voice    |    ০২:১৮ পিএম, ২০২১-০২-১৯


মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর ৫০ লাখ টাকা উৎকোচ দাবির বিষয়ে তথ্যপ্রমাণসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ করেছিল ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। অভিযোগ দায়েরের দুই মাসের মাথায় অভিযোগটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এ-সংক্রান্ত বিশেষ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডেল্টা লাইফের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটিতে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। গতকাল দুদকের কাছে এ-সংক্রান্ত আবেদন জমাও দেয়া হয়েছে।

দুদকের কাছে ডেল্টা লাইফের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির যুগ্ম নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট (জেইভিপি) পল্লব ভৌমিক আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উকোচ দাবির অভিযোগ করেছিলেন। আইডিআরএ কর্তৃক ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফে প্রশাসক নিয়োগ করা হয় এবং তিনি সেদিন বিকালেই প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেন। এজন্য ডেল্টা লাইফের নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কোম্পানিটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. মঞ্জুরে মাওলা, ডিএমডি ও কোম্পানি সচিব উত্তম কুমার সাধু এবং কনসালট্যান্ট মো. মাহবুব আলম খান।

তদন্ত কমিটি ১৭ ফেব্রুয়ারি জেইভিপি পল্লব ভৌমিকের সাক্ষাত্কার নেয়। কমিটির কাছে তিনি আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের কাছে অসত্য ও বানোয়াট অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি স্বীকার করেন। কমিটিকে তিনি আরো জানান যে ডেল্টা লাইফের অডিট কমিটির ৭৮তম সভার বিবিধ এজেন্ডার সিদ্ধান্ত অনুসারে তাকে দুদকে অভিযোগ দায়েরের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। তিনি ভীত ও চাকরিচ্যুত হওয়ার ভয়ে দুদকে অভিযোগটি দায়ের করেন। বিষয়টি তিনি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে এবং কারো মাধ্যমে প্ররোচিত না হয়ে তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন এবং দুদকে দায়ের করা অভিযোগটি প্রত্যাহার করতে চান বলে কমিটিকে জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি ডেল্টা লাইফের প্রশাসকের কাছে অভিযোগটি প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডেল্টা লাইফের প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা কোম্পানিটির পক্ষে অভিযোগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। এর ভিত্তিতে গতকালই পল্লব ভৌমিক দুদকের কাছে অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উেকাচ দাবির বিষয়ে দুদকের কাছে অভিযোগ করা এবং পরবর্তী সময়ে প্রশাসকের নির্দেশে সেটি প্রত্যাহারের আবেদন করার বিষয়ে পল্লব কুমার ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষের লিখিত আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমি দুদকে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। অন্যদিকে অভিযোগটি প্রত্যাহারের বিষয়টি কর্তৃপক্ষের লিখিত আদেশের ভিত্তিতেই করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেল্টা লাইফের প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, ডেল্টা লাইফ বীমা আইন ও বিধিবিধান তো মানছেই না, উল্টো তাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে তারা বীমা খাতের অভিভাবক আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছে। প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি অভিযোগকারী কর্মকর্তা পল্লব ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে ডেল্টা লাইফের অডিট কমিটির সভার বিবিধ এজেন্ডার আওতায়

আইডিআরএ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ দায়েরের জন্য পল্লব ভৌমিককে দায়িত্ব দেয়া হয়। তাও আবার দুদকের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর এটি অনুমোদন করা হয়। তাছাড়া আইডিআরএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে ডেল্টা লাইফের আরেক কর্মকর্তা আব্দুল আউয়ালের। অথচ দুদকে অভিযোগ করেছে পল্লব ভৌমিক। তিনি আমাদের কাছে স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন আগের পর্ষদের চাপের মুখে তাকে অভিযোগ দায়ের করতে হয়েছে এবং তিনি লিখিত আদেশ পেলে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবেন। প্রশাসক হিসেবে যেহেতু অডিট কমিটির দায়িত্ব আমার ওপর অর্পিত রয়েছে, তাই অভিযোগটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আইডিআরএ কর্তৃক বিশেষ ও অনুসন্ধানী নিরীক্ষা এবং প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা করে আসছে কোম্পানিটির আগের পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। তারা এরই মধ্যে উচ্চ আদালতের কাছে প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করেছেন। সর্বশেষ ডেল্টা লাইফ কর্তৃক আইডিআরএ চেয়ারম্যানের উেকাচ দাবির বিষয়ে দুদকে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহারের উদ্যোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির সদ্য সাবেক পরিচালক জিয়াদ রহমান বলেন, এ ধরনের কার্যকলাপের ফলে আমাদের আশঙ্কাই সত্য হয়েছে যে গায়ের জোরে অভিযোগ প্রত্যাহারের মাধ্যমে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যেই প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। আইডিআরএ চেয়ারম্যান যে অনৈতিক সুবিধা চেয়েছিলেন সেটি একাধিক অডিও রেকর্ডিং এবং তার স্বীকারোক্তির মাধ্যমেই প্রমাণ হয়েছে। সরকার ও দুদকের পক্ষ থেকে স্বচ্ছ ও যথাযথ তদন্ত করা হলে আমাদের অবস্থান যে সঠিক ছিল সেটি প্রমাণ হবে বলে আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে।

একদিকে ডেল্টা লাইফ কর্তৃক আইডিআরএ চেয়ার্যমানের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ, অন্যদিকে কোম্পানিটিতে আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের পাশপাশি দুই পক্ষই আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে। ডেল্টা লাইফ প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গিয়েছে। অন্যদিকে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাবসহ মিথ্যা অপবাদ দেয়া ও কূটকৌশলের মাধ্যমে মানহানি করার প্রচেষ্টার কারণে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান ও তার মেয়ে কোম্পানিটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমানসহ কোম্পানিটির আরো চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। আর একাধিক আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকাবস্থায় আইডিআরএ কর্তৃক নিয়োগকৃত প্রশাসক তার ক্ষমতাবলে ডেল্টা লাইফের মাধ্যমে দুদকে এর আগে দায়ের করা অভিযোগটি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেন, যেহেতু এটি বিচারাধীন বিষয় তাই সব পক্ষকেই সংযত হয়ে কথা বলা কিংবা যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা সমীচীন হবে বলে আমি মনে করি। সূত্র : বণিক বার্তা।