শিরোনাম
Passenger Voice | ০৫:১৩ পিএম, ২০২৫-১২-০১
তুরস্কের প্রথম মানবহীন যুদ্ধবিমান বায়রাকতার কিজিলেলমা আরও একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। রকেটচালিত একটি চলন্ত লক্ষ্যবস্তুকে দৃষ্টিসীমার বাইরে থেকে (বিভিআর) আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে আঘাত করে নতুন মাইলফলক গড়েছে এই যুদ্ধবিমান। গতকাল রোববার এই বিষয়টি জানায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বায়কার।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে। তুর্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এন–সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে বায়কার জানায়, ‘বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো মানবহীন যুদ্ধবিমান বিভিআর শ্রেণির এয়ার–টু–এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানল।’
বায়কারের বিবৃতিতে বলা হয়, কিজিলেলমা স্থানীয়ভাবে তৈরি ‘গোকদোয়ান’ নামে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং তা উচ্চগতির জেট লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত হানে। লক্ষ্য শনাক্ত ও অনুসরণ করা হয় তুরস্কের স্থানীয় প্রযুক্তিতে আসেলসান নামক কোম্পানি নির্মিত মুরাদ অ্যাকটিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড অ্যারে বা এইএসএ রাডার ব্যবহারের মাধ্যমে। এরপর কিজিলেলমার ডানার নিচে স্থাপিত পড থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি নিক্ষেপ করা হয়।
তুরস্কের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো যুদ্ধবিমান নিজস্ব রাডার ব্যবস্থাপনায় তৈরি দেশীয় আকাশ–থেকে–আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আকাশের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করল। এ সফলতায় কিজিলেলমা বিশ্বের প্রথম ও একমাত্র মানবহীন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আকাশযুদ্ধে সক্ষমতার স্বীকৃতি পেল। এ মাসে কিজিলেলমার ধারাবাহিক পরীক্ষার অংশ এটি। এর আগে একটি এফ–১৬ যুদ্ধবিমানকে লক্ষ্যবস্তু করেও পরীক্ষামূলক অভিযান চালায় এটি।
রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, কৃষ্ণসাগরের উপকূলীয় সিনোপ প্রদেশের আকাশে পরিচালিত এ পরীক্ষা ছিল ‘আরেকটি প্রথম’, যা তুরস্কের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ–বিমান কৌশলের প্রতিফলন। পরীক্ষায় মেরজিফন এয়ার বেসের পাঁচটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কিজিলেলমার সঙ্গে সমন্বিত বিন্যাসে উড্ডয়ন করে। মনুষ্যচালিত ও মানবহীন প্ল্যাটফর্মের এ যৌথ মিশন ভবিষ্যৎ আকাশযুদ্ধের নতুন ধারণা তুলে ধরে। মিশনে আকাশ থেকে দৃশ্য ধারণের জন্য বায়রাকতার আকিনচি নামক আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকেলও।
বায়কারের বিশ্বখ্যাত ড্রোন–উৎপাদন প্রযুক্তির শীর্ষ প্রদর্শনই হলো কিজিলেলমা। কম রাডার সিগনেচার ও উন্নত সেন্সর প্রযুক্তির কারণে এটি দূর থেকে শত্রু উড়োজাহাজ শনাক্ত করতে পারে, অথচ নিজে ধরা পড়ে না। মুরাদ এইএসএ রাডার, তয়গুন টার্গেটিং সিস্টেমসহ নানা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এতে সংযোজিত। আগে পরিচালিত পরীক্ষায় এটি তোলুন ও তেবের–৮২ নামক গোলাবারুদ দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছিল।
বায়কারের চেয়ারম্যান ও প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা সেলচুক বায়রাকতার এ উপলক্ষে প্রচারিত ভিডিওতে বলেন, ‘আজ আমরা উড্ডয়ন–ইতিহাসের নতুন এক যুগের দ্বার খুললাম।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনো মানবহীন যুদ্ধবিমান রাডার–নির্দেশিত এয়ার–টু–এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে নিখুঁতভাবে আকাশের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানল।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আল্লাহর রহমতে এ অর্জনে এই প্রযুক্তিতে তুরস্ক বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠল।’
বায়কারের সিইও হালুক বায়রাকতার ঘটনাটিকে এক বাঁক–পরিবর্তনকারী মুহূর্ত বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘নিজস্বভাবে তৈরি উড়োজাহাজ, রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র—এই তিনে গঠিত আকাশ–যুদ্ধ শৃঙ্খলের সমস্ত ধাপ আজ আমরা নিজেদের সক্ষমতায় সম্পন্ন করেছি।’ তাঁর ভাষায়, ‘এ গর্ব সমগ্র জাতির।’
তুরস্কের শিল্প ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মেহমেত ফাতিহ কাচির বলেন, এটি বৈশ্বিক প্রথম সাফল্য এবং প্রমাণ করে যে—দেশের জাতীয় প্রযুক্তি সক্ষমতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে ‘এরিয়াল–সুপিরিয়রিটির নিয়ম নতুন করে লেখা সম্ভব।’
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত