শিরোনাম
Passenger Voice | ১২:৪৭ পিএম, ২০২৫-১১-০৯
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির অংশ হিসেবে বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে যদিও এখনো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। বাংলাদেশ চাইছে, নতুন উড়োজাহাজগুলো হবে ‘ইকোনমি এয়ারক্র্যাফট’।
যত বেশিসংখ্যক আসন রাখা সম্ভব, ঠিক তত আসন থাকবে সেগুলোয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জন্য কিনতে যাওয়া উড়োজাহাজগুলোর আসন বিন্যাসসহ ভেতরের ইন্টেরিয়র কেমন হবে, বোয়িংয়ের সঙ্গে সে বিষয়েই চলছে আলোচনা। সেটি ফলপ্রসূ হলে আগামী ডিসেম্বরে ক্রয় চুক্তি হতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। মূলত বিমানের মধ্যপ্রাচ্যের রুটকে ‘টার্গেট’ করে কম ভাড়ায় চালাতে উড়োজাহাজগুলোর আসন বিন্যাসের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বোয়িংয়ের কোন মডেলের উড়োজাহাজ বাংলাদেশ কিনবে, তা এখনো প্রকাশ করেনি কোনো কর্তৃপক্ষই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেবল ‘ওয়াইড বডি’ উড়োজাহাজের বিষয়টি জানা গেছে। বর্তমানে বিমান
বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে বোয়িংয়ের ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ ও ৭৮৭-৯ সিরিজ এবং বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর সিরিজের ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ রয়েছে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বহরে থাকা ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজে মোট আসন রয়েছে ২৭১টি। এর মধ্যে ২৪টি বিজনেস ক্লাস, বাকিগুলো ইকোনমি ক্লাসের আসন। এয়ারলাইনসভেদে একই মডেলের উড়োজাহাজে আসন সংখ্যা ভিন্ন। যেমন কাতার এয়ারওয়েজের ৭৮৭-৮ মডেলে ২৫৪-২৬৭টি আসন রয়েছে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একই মডেলে আসন আছে কেবল ২১৪টি।
এভিয়েশন খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৭৮৭-৮ মডেলের উড়োজাহাজে যদি সব ইকোনমি ক্লাসের আসন রাখা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ ৩৮১টি পর্যন্ত রাখা সম্ভব। আর ৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজে আসন রাখা সম্ভব সর্বোচ্চ ৪২০টি পর্যন্ত।
অন্যদিকে বিমানের বহরে থাকা ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজে সব মিলিয়ে আসন রয়েছে ৪১৯টি। এর মধ্যে ৩৫টি বিজনেস ক্লাস। বিশ্বের কোনো কোনো এয়ারলাইনসে এ মডেলের উড়োজাহাজে ৫১৪টি পর্যন্ত আসন রয়েছে।
বাংলাদেশ বোয়িংয়ের কাছ থেকে যেসব উড়োজাহাজ কিনবে সেগুলোর আসন বিন্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সিংহভাগ উড়োজাহাজ যাত্রীর গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্য। একইভাবে সিংহভাগ যাত্রী অভিবাসী শ্রমিক। আমাদের উপদেষ্টা (বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন) চাইছেন, এ অভিবাসী শ্রমিকরা যেন কম খরচে দেশে যাতায়াত করতে পারেন। তারা শুধু দেশে টাকাই (রেমিট্যান্স) পাঠাবে, আর তাদের জন্য টিকিটের দাম হবে ১ লাখ টাকা—এটা তো হয় না। এজন্য বোয়িংয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। উড়োজাহাজগুলো হবে মূলত মধ্যপ্রাচ্যের রুটকে প্রাধান্য দিয়ে।
এসব রুটে যেন টিকিটের দাম কম হয়, সেজন্য আসন বিন্যাস এমনভাবে করতে হবে, যেন সর্বোচ্চসংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা যায়। এজন্য উড়োজাহাজগুলোর ইন্টেরিয়র আমাদের জন্য বিশেষভাবে কাস্টমাইজ করে দিতে হবে। এ বিষয়গুলো হয়ে গেলে বোয়িংয়ের সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করা হবে। এখন চুক্তি করা হলে আমরা খুব সম্ভবত ২০২৯ সালের আগে কোনো উড়োজাহাজ পাব না।’
নতুন উড়োজাহাজগুলোয় আসন বেশি থাকলেও সেগুলো বাজেট এয়ারলাইনসের মতো হবে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘অনেক এয়ারক্র্যাফটের আসনের সামনে পা রাখার জন্য প্রচুর জায়গা রাখা হয়। খালি স্পেস থাকে। আমরা যে উড়োজাহাজগুলো কিনব, সেগুলো ইকোনমিক্যালি চালানোর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু বাজেট এয়ার করা যাবে না। বাজেট এয়ার আর ইকোনমি এয়ারের মধ্যে পার্থক্য আছে। বাজেট এয়ারে কোনো খাবার দেয় না। ভ্রমণের অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় না। আমরা তেমনটি চাইছি না। আমরা চাইছি সিট সংখ্যা বাড়িয়ে অপটিমাম ইউজ করতে।’
চূড়ান্ত চুক্তি করার আগে বর্তমানে বোয়িংয়ের সঙ্গে এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা চলছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, ‘এয়ারক্র্যাফটগুলোর অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে কথা হচ্ছে। এতে কিছুটা সময় লাগছে। অ্যালাইনমেন্ট ঠিক হয়ে গেলেই চুক্তি হয়ে যাবে।’
উড়োজাহাজের প্রকৃত বিক্রয়মূল্য সাধারণত প্রকাশ করে না নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের একটি উড়োজাহাজের দাম ২৪ কোটি ৮০ লাখ থেকে ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ক্রেতা-বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান আলোচনার মাধ্যমে এ দাম কমিয়ে ১২-১৮ কোটি ডলারে নামিয়ে আনতে পারে। একটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের নতুন বিমানের দাম সাড়ে ৩৭ কোটি ডলার। তবে দরকষাকষির মাধ্যমে এর দাম ৫-৭ কোটি ডলার কমানো সম্ভব বলে জানা গেছে। সে হিসাবে একেকটি নতুন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের দাম পড়তে পারে ৩০ কোটি ডলারের মতো।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশের বহরে বর্তমানে ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এস এবং পাঁচটি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ।
এদিকে বোয়িংয়ের সঙ্গে ক্রয়াদেশ, উড়োজাহাজগুলোর আসন বিন্যাস নিয়ে আলোচনা ও সম্ভাব্য রুট পরিকল্পনা বাণিজ্য সচিবের কাছ থেকে জানা গেলেও এ বিষয়ে কিছুই ‘জানে না’ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস—এমনটাই দাবি করে সংস্থাটির মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম বলেন, ‘এ উড়োজাহাজগুলোর বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’
প্যা.ভ.ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত