শিরোনাম
Passenger Voice | ১১:২৮ এএম, ২০২৪-১০-২৩
সারা দেশে গত সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। তাছাড়া গত মাসে ঘটা ৫৮৩টি দুর্ঘটনার ১৩২টিই হয়েছে মোটরসাইকেলে।
সারা দেশে গত সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৬১ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১০৫ জনই প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। তাছাড়া গত মাসে ঘটা ৫৮৩টি দুর্ঘটনার ১৩২টিই হয়েছে মোটরসাইকেলে। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিতে দুই চাকার বাহনটির শীর্ষে থাকার এ তথ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একক যানবাহন হিসেবে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী এ দ্বিচক্রযান। শুধু দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি নয়, সড়কে বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার পেছনেও মোটরসাইকেল মুখ্য ভূমিকা পালন করছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো মোটরসাইকেলের মতো বাহনের জন্য খুব একটা উপযোগী নয় বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামছুল হক। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষক বলেন, ‘দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর মান খারাপ। ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতায় বিশৃঙ্খলা নিত্যদিনের ঘটনা। এসব সড়কে মিশ্র যানবাহন চলে। পথচারীর আধিক্য রয়েছে। সড়কের এমন পরিবেশের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে চার চাকার যানবাহন কিছুটা হলেও সামাল দিতে পারে। দুই চাকার মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে এ চাপ সামলানো কঠিন।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত ইঞ্জিন সক্ষমতার মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমোদন দেয়। উচ্চ ক্ষমতার এ যানটি বাজারজাত ও রাস্তায় চলাচলের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী হিসেবে উল্লেখ করে ড. সামছুল হক বলেন, ‘এটা অনেকটা আমাদের তরুণ প্রজন্মের হাতে আত্মহত্যা করার একটি উপকরণ তুলে দেয়ার মতো। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যে কর্তাব্যক্তিরা দেশে ৩৫০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল বাজারজাত ও চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন, প্রতিটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার জন্য তাদের দায়ী করা উচিত। উচ্চ ক্ষমতার মোটরসাইকেলের মধ্যে এক ধরনের নস্টালজিয়া রয়েছে, একটা আভিজাত্যের ভাব আছে। এই ভাব মানুষকে গতির ঝড় তোলার জন্য উন্মাদ করে তোলে। এ উন্মাদনা মোটরসাইকেল চালক বা আরোহীকে তো ঝুঁকিতে ফেলেই, পথচারী বা অন্যান্য যানবাহনের আরোহীদেরও বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।’
এ পরিবহন বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ‘অনেক সময় যানজট এড়াতে বিকল্প বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল ব্যবহারের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। কিন্তু উচ্চ ক্ষমতার মোটরসাইকেল তো যানজট এড়ানোর বিকল্প নয়, এগুলো হলো মৃত্যুফাঁদ, যা তরুণদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। আমরা যে দুর্ঘটনাগুলো দেখি, বলা হয় ৩৫ শতাংশই মোটরসাইকেলের আরোহী মারা গেছে। কিন্তু মোটরসাইকেলকে বাঁচাতে গিয়ে যে কত দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে তার কোনো পরিসংখ্যান নেই।’
বিআরটিএর তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত মোটরযান রয়েছে ৬১ লাখ ৭৫ হাজার। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৪৫ লাখের বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১ লাখ ৮৯ হাজারের বেশি এ দ্বিচক্রযানটির নিবন্ধন দিয়েছে বিআরটিএ, যা একই সময়ে নিবন্ধিত মোট মোটরযানের ৮৫ শতাংশ।
দেশে মোটরসাইকেলের সংখ্যার সঙ্গে বাহনটির দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামানও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মোটরসাইকেলের সংখ্যা যত বেশি হবে, বাহনটিতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও তত বাড়বে, এটা দেশে দেশে পরীক্ষিত। বাংলাদেশেও আমরা একই চিত্র দেখছি।’
দুর্ঘটনা কমাতে জাপান মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে দেশটিতে মোটরসাইকেল কমনো হয়েছে কমবেশি ২৫ লাখ। এর ফলও হাতে-নাতে পেয়েছে জাপান, দুর্ঘটনা কমে অর্ধেক হয়েছে। আর বাংলাদেশ হাঁটছে ঠিক এর উল্টোপথে। এখানে মোটরসাইকেলের সংখ্যা অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। এখনই এ সংখ্যায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াবে।’
অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বাংলাদেশে মোটরসাইকেল সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিলেও বিআরটিএর চেয়ার্যমান মো. ইয়াসিন বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, আপাতত এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাব বলছে, ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫২৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৮৭ জনের, যা দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। সংস্থাটি বলছে, দেশে মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। এ বাহনের চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা এবং না মানার প্রবণতার কারণে দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
এ বাস্তবতায় মোটরসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহী করে তোলে, এমন কোনো পদক্ষেপ সরকারের গ্রহণ করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যেকোনো চার চাকার যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল ৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ বাহনটি ব্যবহারে উৎসাহ দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। এখন মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো বিজ্ঞাপনে যে ধরনের ভাষা ব্যবহার করে, সেগুলো খুবই উত্তেজনাকর। এগুলোর মধ্য দিয়ে কিশোর-তরুণরা বেপরোভাবে মোটরসাইকেল চালাতে উৎসাহী হয়। মোটরসাইকেলকে কখনোই সৌখিন পণ্যে পরিণত করার সুযোগ দেয়া উচিত হবে না।’ মোটরসাইকেল প্রসার ঘটানোর চেয়ে সরকারের গণপরিবহনের দিকে নজর দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাহনটির দুর্ঘটনা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই গত সোমবার ৩৫০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার রয়েল এনফিল্ড মোটরসাইকেল বাংলাদেশের বাজারে এনেছে ইফাদ মোটরস লিমিটেড। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন মহলে রয়েল এনফিল্ডের মোটরসাইকেল বেশ আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত