শিরোনাম
Passenger Voice | ০৩:৫১ পিএম, ২০২৪-০২-১২
রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে পণ্য কেনার দরপত্র আহ্বান হয়নি। বিল পরিশোধ করতে পাঠানো হয়নি কোনো চিঠি। অথচ ভুয়া বিল দেখিয়ে ৯৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছে এক ঠিকাদার। বিল যাচাই-বাছাই, চেক হস্তান্তর, ব্যাংকে জমাদান এবং উত্তোলনের পর বিষয়টি জানতে পেরেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তার দপ্তর (এফএঅ্যান্ডসিএও)।
ভুয়া বিলে প্রায় কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনা রেলের ইতিহাসে প্রথম বলে আখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অতীতে ক্যাশ লেনদেন হতো; কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনা কর্তৃপক্ষ গত বৃহস্পতিবার জানতে পারে। তবে গতকাল রবিবার ঘটনাটি রেল অঙ্গনে জানাজানি হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিভাগের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন তারা।
নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছে নাবিল আহসান চৌধুরীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সাপ্লাইয়ার) কসমো পলিটন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচ কর্মচারীকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। চট্টগ্রামের বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তা (ডিএফএ) জয়শ্রী মজুমদারকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি; আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি থানায় জিডি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, পণ্য সরবরাহের বিপরীতে কসমো পলিটন প্রতিষ্ঠানের মালিক নাবিলের পক্ষে চারটি বিল দাখিল করা হয়। বিলগুলো যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে অর্থছাড়ও হয়েছে, কিন্তু ওই চারটি বিলের মধ্যে ৯৭ লাখ টাকার একটি বিল ছিল; কিছু দলিলাদি পরিবর্তন করে সেই বিলটি পুনরায় দাখিল করে। যাচাই-বাছাই শেষে বিলটি পাস হয় এবং সীমান্ত ব্যাংকের নগরীর আগ্রাবাদ শাখা থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভুয়া বিল দাখিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ঠিকাদারের সঙ্গে হিসাব ও স্টোরস শাখার একটি চক্র কাজ করেছে। অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা মো. রফিকুল বারী খানের ব্যক্তিগত সহকারী আসিফ এবং ওই অফিসের অস্থায়ী কর্মচারী হাবিব জড়িত। হাবিব রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক এক এফএঅ্যান্ডসিএওর ভাগিনা। সেই সুবাদে অস্থায়ী কর্মচারী হলেও তার কাছে অফিসের গোপন পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার টাকা উধাও হওয়ার ঘটনা প্রকাশের পর হাবিব আত্মগোপনে চলে যায়। অবশ্য তাকে গতকাল অফিসে হাজির করা হয়েছে। তবে তদন্ত চলমান থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মো. রফিকুল বারী খান। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে সব কেনাকাটা প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের (সিসিএস) দপ্তরের মাধ্যমে করতে হয়। সব বিভাগ তাদের চাহিদা পাঠানোর পর পণ্য ক্রয় করে স্টোরে জমা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে আহ্বানকৃত টেন্ডারের বিপরীতে বিল পাঠানো হয় বিভাগীয় হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রধান অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তার দপ্তরে পাঠানো হয়। সেখানে সব ধরনের যাচাই-বাছাই শেষে এফএঅ্যান্ডসিএও অনুমোদনের পর চেক ইস্যু করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে- ঠিকাদাররা বিল উত্তোলন করতে গেলে স্টোরস শাখা ও হিসাব শাখার একাধিক টেবিলে টাকা দিতে হয়। যে ঠিকাদার যতবেশি টাকা দেন তার বিল তত দ্রুত এগিয়ে যায়। কসমো পলিটনের মালিক নাবিল কর্মচারীদের চাহিদার চেয়েও বেশি ‘ঘুষ’ দিতেন। ফলে তার বিল প্রদানের কাজ চলত দ্রুত গতিতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার বিল যাচাই-বাছাইয়ে সময়ক্ষেপণ করায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেছেন তিনি। ফলে তার প্রতিষ্ঠানের বিল নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে চাইতেন না কেউ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কয়েকজনকে বদলির বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এফএঅ্যান্ডসিএওকে বলা হয়েছে।’
এফএঅ্যান্ডসিএও বলেন, ভুয়া বিলের বিপরীতে টাকা নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বদলি করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কসমো পলিটনের চারটি বিল ছিল, সেখানে একটি বিলের বিপরীতে দুইবার অর্থ ছাড় নিয়ে গেছে।
টাকা উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কসমো পলিটনের মালিক দাবি করছেন বিলটি তারা দেননি। তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। চেকটি কোন ব্যাংকে জমা হয়েছে এবং কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে সেই তথ্য চেয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি টাকা ছাড়ের আগে ব্যাংক থেকে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফোন দেওয়া হয়েছিল কিনা সেই বিষয়টিও আমরা দেখছি। কসমো পলিটনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার ধারণা বিল গ্রহণ, প্রক্রিয়ায় ডেসপাস শাখার কর্মচারীরা জড়িত থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, কসমো পলিটনের নামে ব্যাংক হিসাব থাকলেও ৯৭ লাখ টাকা নিতে নতুন একটি হিসাব খোলা হয়েছে সীমান্ত ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায়। সেই শাখা থেকেই টাকা উত্তোলন হয়েছে। ব্যাংক কীভাবে হিসাব খুলেছে সে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ব্যাংকের কেউ জড়িত কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছে। কারণ ১ লাখ টাকা উত্তোলন করতে অর্থছাড়ের আগে হিসাবধারীকে ফোন করা হয়। ব্যাংক সেই দায়িত্ব পালন করেছিল কিনা, কিংবা কাকে ফোন দিয়েছিল সে বিষয়টিও দেখা হবে।
প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সিসিএস) ফরিদ আহমেদ বলেন, আমরা কোনো বিল হিসাব শাখায় পাঠাইনি। সরঞ্জাম শাখার বাজেট থেকে কি টাকা চলে গেছে এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা হিসাব বিভাগ দেখবে। আমাদের কিছু করার নেই, আমার দপ্তরের কেউ জড়িত নন। সূত্র: আমাদের সময়
প্যা/ভ/ম
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2025 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত