খেজুরে কারসাজি, আমদানিকারকরা হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটি টাকা

Passenger Voice    |    ১১:৪২ এএম, ২০২৩-০৩-২৫


খেজুরে কারসাজি, আমদানিকারকরা হাতিয়ে নিয়েছে শতকোটি টাকা

রমজান উপলক্ষে আমদানি করা খেজুরে কারসাজির মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আমদানিকারকরা। আমদানি পর্যায়ে প্রতিকেজি খেজুর মাত্র ৮০ থেকে ১০০ টাকা হলেও ভোক্তা পর্যায়ে তা বিক্রি করা হচ্ছে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। অথচ কাস্টমসের কাছে খেজুর হিসাবে শুল্কায়ন হলেও বাজারে নানা নামে ভাগ করে বাড়ানো হয়েছে দাম। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে খেজুর নিয়ে কারসাজির এমন তথ্য।

চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোড এলাকার ফলমণ্ডির সব কটি দোকান-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গুদাম এখন খেজুরে পরিপূর্ণ। কার্টনের স্তূপ জমে আছে দোকানগুলোর সামনে। ছোট ছোট পিকআপে করে আনা হচ্ছে আমদানি করা কয়েকশ মেট্রিক টন খেজুর। বাজারে খেজুরের কোনো রকম ঘাটতি না থাকলেও দাম বিগত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি।

ক্রেতারা বলছেন, গত বছর যেসব খেজুর ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় পাওয়া যেত, সেগুলো এখন কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়।

আর চট্টগ্রাম ফলমণ্ডির মেসার্স তুহিন এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ডলার সংকটের কারণে এখন সব জিনিসের দাম বাড়তি। ফলে খেজুরের দাম তুলনামূলক বেশি। এতে বিক্রেতাদের কিছু করার নেই।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৫০ হাজার ২৫৭ মেট্রিক টন খেজুর। আর দাম হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ৪৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসেই রেকর্ড ১৫৪ কোটি টাকা মূল্যের ১৮ হাজার ৮৭১ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে।

মূলত দেশে রমজান উপলক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে অন্তত ২৬ ধরনের খেজুর আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ১৪ ধরনের খেজুর মানসম্মত হিসেবে ধরা হয়। তবে এসব খেজুরের দাম এখন লাগামছাড়া। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম।

এদিকে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে আমদানি থেকে শুরু করে খেজুরের ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত কারসাজি অনুসন্ধান করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন। কারসাজির মাধ্যমে আমদানিকারক থেকে শুরু করে মধ্যস্বত্বভোগীরা এই খেজুরের বাজার থেকে কয়েকশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে অনুসন্ধানকারী দল। শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের চারজন আমদানিকারকই আমদানি করেছেন ২২ হাজার মেট্রিক টন খেজুর।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাকিব হাসান বলেন, অভিযানে কোনো খেজুরের আমদানি মূল্য ১০০ টাকার বেশি পাওয়া যায়নি। তবে খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত দাম নেয়া হচ্ছে, যা একদমই অসংগতিপূর্ণ। মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকজন আমদানিকারকের মাধ্যমে এই কারসাজি চলছে।

এদিকে সরেজমিন আড়তগুলো ঘুরে দেখা যায়, দেশের বাজারে বর্তমানে অভিজাত খেজুর হিসেবে পরিচিত মিশরের মেডজুল খেজুর প্রতি কেজি পাইকারি পর্যায়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ইরানের মরিয়ম খেজুর ১ হাজার ২০০ টাকা, মেহেরাজ মাবরুম সাড়ে ৮০০ টাকা, মেহেরা আজুয়া ৭০০ টাকা, মায়াবী আজুয়া ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডলার সংকটে আমদানি তুলনামূলক কম হওয়ার পাশাপাশি সৌদি আরব থেকে অন্যান্য দেশও খেজুর আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে বলে খেজুরের দাম বাড়ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম ফলমণ্ডির মেসার্স আজওয়া ট্রেডার্সের মালিক রবিউল হাসান খান বলেন, দেশে এলসি ও ডলার সংকটের কারণে খেজুরের দাম বাড়ছে।

রমজান মাসে ইফতারের জন্য বাংলাদেশে ২৭ থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়।

প্যা/ভ/ম