সাংবা‌দিক অপূর্বর ওপর হামলার মামলায় ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

Passenger Voice    |    ০৩:৫৮ পিএম, ২০২৩-০১-১৩


সাংবা‌দিক অপূর্বর ওপর হামলার মামলায় ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ব‌রিশালে সময় টে‌লি‌ভিশনের ব‌্যুরো প্রধান ও সি‌নিয়র রিপোর্টার অপূর্ব অপুর ওপর হামলা সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই ঘটেছে বলে নি‌শ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকা‌রী কর্মকর্তা। ওই ঘটনায় ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পু‌লিশ।

এবার এ ঘটনায় জ‌ড়িত সব আসামির দৃষ্টান্তমূলক শা‌স্তি দা‌বি করেছেন সাংবা‌দিক নেতারা।

বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৭ মাস পর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। কয়েক আসামিকে গ্রেফতার হলেও মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পু‌লিশ। তারা জামিন নিয়ে বাইরে আছে। আমরা চাই মহামান্য আদালত সব আসামিদের শাস্তির আওতায় আনুক।

বরিশাল রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, অপুর ওপর হামলার ঘটনার শুরু থেকেই আমরা দেখেছি প্রভাবশালী একটি মহল ও প্রশাসন ঘটনাটি গুরুত্ব দিতে চায়নি, তবে আমরা মাঠে ছিলাম। অবশেষে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হলো অপুর ওপর সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই এই হামলা।

তদন্তকারী কর্মকর্তা ব‌রিশাল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প‌রিদর্শক ছানোয়ার হোসেন জানান, তদন্তে যেটা উঠে এসেছে সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন দা‌খিল করা হয়েছে। যেখানে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে সাংবাদিক অপূর্ব অপুকে হেনস্থা করতে এই হামলার ঘটনা হলেও অপহরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়‌নি‌। দীর্ঘ ৭ মাস তদন্ত করে ২০ নভেম্বর সিসি টিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়ে সাত জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, আসামি নুরে আলম হাওলাদার মামলার অন্য আসামি হাবিবুর রহমান ওরফে ট্যারা হবিবকে ইঙ্গিত করে সাংবাদিক অপূর্ব অপু সময় টেলিভিশনের অফিসে যাচ্ছে তা দেখিয়ে দেয়। তখন মামলার ৬নং আসামি হাবিবুর রহমান একটি রিকশায় করে নগরের শীতলাখোলা এলাকার অপূর্ব অপুর পথ‌রোধ করে তার ওপর হামলা চা‌লিয়ে হেনস্থা করে। একপর্যা‌য়ে অপু দৌড়ে গফুর সড়‌কের দি‌কে আস‌তে থাক‌লে প্রাইভেটকারের পাশে থাকা মামলার ১নং আসামি জিহাদুল ইসলাম জিহাদ সাংবা‌দিক অপূর্ব অপুর হাত ধরে। তখন অপু নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পুনরায় দৌড়ে চলে যায়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায়, আসামিরা বে-আইনি জনতাবদ্ধে পরস্পর যোগ-সাজসে ৭নং আসামি শাহিন হোসেন মল্লিক মামুনের পরিকল্পনায় এবং আসামি নুরে আলম হাওলাদারের ইশারায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসামি জিহাদুল ইসলাম জিহাদ ও হাবিবুর রহমান বাদীর পথরোধ করে সাংবাদিক অপুকে ভয়ভীতি হুমকি দেয় এবং হাবিবুর রহমান সাংবা‌দিক অপু‌কে মারধর করে বলে তদন্তে উঠে আসে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা প‌রিদর্শক ছানোয়ার হোসেন জানান, ২০২২ সালের ২৯ মে বিকেল সাড়ে ৩টায় সময় টিভির বরিশাল অফিসে যাওয়ার পথে ব্যুরো প্রধান অপূর্ব অপুর উপর হামলা চালায় একদল সন্ত্রাসী। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়। এ ঘটনার পর সাংবাদিক অপু বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে প্রথমে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় কোতয়াললি থানার সাব ইন্সপেক্টর সাইদুর রহমান। এরপর দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা শাখার প‌রিদর্শক হরিদাস নাগ। সবশেষে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। এ কারণে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমি পুরো ঘটনাটি বার বার তদন্ত করেছি। প্রতিবারই উঠে এসেছে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এই ঘটনা ঘটনোর কথা। তবে অপূর্ব অপুকে অপহরণ চেষ্টার কোনো প্রমাণ আমি পাইনি। চার্জশিট বা অভি‌যোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। সাক্ষ‌্য গ্রহণ শেষে আদালত বিচার করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব‌রিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক অপূর্ব অপুর মামলার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি। বারবার আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করেছি। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সেই হামলা হয়েছে বলে আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এই ঘটনায় আমরা কয়েক আসামিকে গ্রেফতার করেছি। আবার অনেককে করতে পারিনি। তবে যারাই এই মামলার আসামি তাদের ওপর আমাদের নজরদারি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, অপূর্ব অপুর উপর হামলার ঘটনায় মামলা দা‌য়ে‌রের পর পু‌লিশ বেশ ক‌য়েকজন‌কে গ্রেফতার ক‌রে‌ছি‌লো। হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ব‌রিশালসহ সারাদেশে বিক্ষোভ করে‌ছিলো সাংবা‌দিকরা।