আগামী অক্টোবরে উদ্বোধন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

Passenger Voice    |    ০২:০৪ পিএম, ২০২২-১১-২৯


আগামী অক্টোবরে উদ্বোধন কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ইতিমধ্যে ৪২.৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের অক্টোবরের মধ্যে এই বিমানবন্দর পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

২০১৭ সালের ৬ মে বিমানবন্দরের রানওয়েতে বোলিং ৭৩৭-৮০০ বিমান অবতরণের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সিভিল, ন্যাভ-এইড ও এজিএল কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্পের আওতায় ২৯০ হেক্টর ভূমি বন্দোবস্ত এবং ৮.৩৭ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে এবং চওড়া ১০০ ফুট থেকে ২০০ ফুটে উন্নীত করা হয়। এছাড়াও সুপরিসর বিমান উড্ডয়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান রানওয়ের পিসিএন ১৭ হতে ৯০ এ উন্নীতকরণসহ আইএলএস, ডিডিওআর, ক্যাট-১ এজিএল লাইট স্থাপন, নিরাপত্তা সীমানা প্রাচীর ও ড্রেনেজ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যাতে ঠিকাদারী কাজের ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫৩ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। 

২০২১ সালের ২৯ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমুদ্রগর্ভে আরও ১৭০০ ফুট রানওয়ে বর্ধিতকরণের লক্ষ্যে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরে রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন। এ প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়েতে পূর্নলোডে সুপরিসর বিমান তথা বি-৭৭৭-৩০০ ইআর, বি-৭৪৭-৪০০ বিমান উড্ডয়ন-অবতরন নিশ্চিত হবে। 

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিএএবি চীনের চ্যাংজিয়াং ইচ্যাং ওয়াটারওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো (সিওয়াইডব্লিউইবি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সমুদ্রগর্ভে ১০৫ একর ভূমি ভরাটের মাধ্যমে ১৭০০ ফুট রানওয়ে বর্ধিত করা হবে। এতে রানওয়ের দৈর্ঘ্য ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত হবে। যা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রানওয়ে হিসেবে কক্সবাজারকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলবে। 

কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় সমুদ্রগর্ভে আরও প্রায় ২ হাজার ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট প্রিসিশন এপ্রোচ লাইট স্থাপনসহ বিদ্যমান রানওয়েতে ক্যাট-২ এজিএল সিস্টেম স্থাপন করা হবে। যাতে সুষ্ঠু ও নিরাপদ বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ নিশ্চিত হবে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্নিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রভাব থেকে রানওয়ের সুরক্ষার্থে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রণীত ডিজাইন মোতাবেক সমুদ্রতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অপারেশনাল এলাকার চারপাশে নিরাপত্তা টহল রাস্তাও নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে সর্বমোট ব্যয় হবে ১৫৬৮৮৫.৫৬ লাখ টাকা। এ প্রকল্প কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৪২.৬৫%। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে এ প্রকল্প কাজ শেষ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।'

তিনি আরো বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নতুন ১৭০০ ফুটসহ এই বিমানবন্দরের রানওয়ে হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। তাই দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে সমৃদ্ধ বিমানবন্দর হবে কক্সবাজার। তখন সমুদ্র ছুঁয়ে বি-৭৭৭-৩০০ ইআর, বি-৭৪৭-৪০০ এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে। 

আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার লক্ষ্যে এ বিমানবন্দরে ২৭৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি আন্তর্জাতিক যাত্রী প্রান্তিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ১৪ হাজার বর্গমিটার বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক যাত্রী প্রান্তিক ভবন, একটি বোর্ডিং ব্রিজ স্থাপন, ৩৬ হাজার ৩০০ বর্গমিটার বিশিষ্ট সুপরিসর বিমান পার্কিং ও ১৯০টি অভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক যাত্রী এবং ৩৫ টি ভিআইপি ভেহিক্যাল পার্কিং বিশিষ্ট কারপার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ৮২ শতাংশ কাজ। 

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ জানান, আমরা খুবই উজ্জীবিত। সব ঠিক থাকলে ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার আগমন উপলক্ষে কাজের গতি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন প্রকল্পসহ কক্সবাজারে অনেক মেঘা প্রকল্প চালু রয়েছে। এসব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হলে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক পর্যটন এলাকা হিসাবে আরো পরিচিতি লাভ করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিতে কক্সবাজার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ পাবে।’

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ  থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতু বন্ধন এবং এভিয়েশন সেক্টরে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের সব বিমানবন্দর আধুনিকায়নের কাজ চলছে। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিমানবন্দর সমূহের মধ্যে অন্যতম এবং এ বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৩০টি যাত্রীবাহীসহ প্রায় ৪০টি বিমান উড্ডয়ন করছে। 

কক্সবাজার বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মতুর্জা হোসেন বলেন, 'কক্সবাজার বিমান বন্দরে এখন দৈনিক ৪০টি বিমান উঠা-নামা করছে। সামনে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। সব ধরনের বিমান উঠা-নামার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। রাতের বেলায় বিমান উঠানামার লাইটিং সিস্টেম রয়েছে এই বিমানবন্দরে।’ 

দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যাতায়াত ও রাজধানী ঢাকা ও অন্য শহরের মধ্যে যোগাযোগ সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে উন্নীতের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।


প্যা/ভ/ম