বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ৫৫৮ কোটি টাকা

Passenger Voice    |    ০৪:০৯ পিএম, ২০২২-০৭-০৫


বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ঘাটতি ৫৫৮ কোটি টাকা

বেনাপোল কাস্টম হাউজে সদ্যবিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। অর্থবছরটিতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা, বিপরীতে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এদিকে, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন পণ্য আমদানি কম হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ১৪ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছিল ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টন পণ্য।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দুই দেশের ব্যবসায়ীদের এ পথে বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। তবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় ব্যবসায়ী চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারেন না। এতেই বারবার রাজস্ব আয়ে ধস নামছে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, বেনাপোল কাস্টমস অন্য শুল্ক স্টেশনের তুলনায় বেশি শুল্ক আদায় করছে। আবার বন্দরে তীব্র জায়গা সংকট। পণ্য ওঠানামার ক্রেন ফর্কলিফট নষ্টের কারণে সঠিক সময়ে আমদানিকারকরা পণ্য নিতে পারেন না। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে পার্কিংয়ের নামে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে। এ কারণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। অনেক ব্যবসায়ী বন্দর ছেড়ে চলে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে বেনাপোল বন্দর উন্নয়ন, ভারতে হয়রানি বন্ধ হলে এ বন্দর থেকে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ রাজস্ব আয় কাস্টমসের পক্ষে সম্ভব।

যশোরের আমদানিকারক এজাজ উদ্দিন টিপু বলেন, ভারত থেকে একটি ট্রাক দেশে প্রবেশে করতে এক মাস সময় লেগে যাচ্ছে। একে তো পণ্য আসতে দেরি হচ্ছে, আবার ওপারে প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ২ হাজার রুপি দিতে হয়। এতে বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমিয়ে অন্য বন্দরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে রয়েছে জায়গা সংকট। এতে চাহিদা অনুযায়ী পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে না। যে কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বড় অংকের রাজস্ব আয় অনিশ্চিত। কারণ  নানা অব্যবস্থাপনায় আমদানি কমেছে এ বন্দর দিয়ে। বেনাপোল কাস্টমসে আমদানি পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেই। এতে খুলনা ও ঢাকা থেকে  পরীক্ষা করাতে মাসের অধিক সময় লেগে যায়। দীর্ঘ সময় পণ্য চালান আটকা পড়ে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। বেনাপোল কাস্টম হাউজে বিএসটিআই ও বিসিএসআইআরের শাখা স্থাপনের দাবি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এতে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন।

ভারত-বাংলাদেশ ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, ব্যবসায়ীরা যেখানে সুবিধা পাবেন সে পথে আমদানি, রফতানি বাণিজ্যে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক সুবিধা বিদ্যমান তাই ব্যবসায়ীরা দিন দিন সে পথে আমদানিতে ঝুঁকছেন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাস্টম ও বন্দরে বৈধ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা এ পথে আবার ফিরবেন।

বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় গত বছর আমাদের রাজস্ব আয় বেশি হয়েছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আয় কম হয়েছে। এর কারণ ৪ লাখ ৩০ হাজার টন পণ্য আমদানি কমেছে। বেনাপোল বন্দরে জায়গার সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। আবার ভারতের কালিতলায় অবৈধভাবে আমদানিবাহী গাড়ি আটকিয়ে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে আমদানিকারকরা অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর জানান, বেনাপোল বন্দরের উন্নয়নকাজ চলমান। এরই মধ্যে বন্দরে ৩৬৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। এতে নিরাপত্তা বাড়বে। জমি অধিগ্রহণ, নতুন পণ্যাগার নির্মাণ ও বন্দর এলাকায় রাস্তাঘাটের অনেকটা উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হলে এ বন্দরে বাণিজ্য আরো গতি পাবে।