স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন বিভাগ

১৯৬ গুণ বেড়েছে বিআরটিএর রাজস্ব আদায়, ২০-২১ অর্থবছরে ৩৫৪৩ কোটি টাকা

Passenger Voice    |    ০১:৩৫ পিএম, ২০২২-০৬-১৯


১৯৬ গুণ বেড়েছে বিআরটিএর রাজস্ব আদায়, ২০-২১ অর্থবছরে ৩৫৪৩ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ২৯১ জন জনবল নিয়ে ১৯৮৭ সালে পথচলা শুরু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ’র। চলতি বছরের সৃজনকৃত ৯০ টি সাংগঠনিক পদসহ বর্তমানে এই সংস্থাটির জনবল ৯১৩ জন। ১৯৮৭ সালে সারাদেশে নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৭৫ হাজার। এই সব মোটরযানের বিপরীতে লাইসেন্স প্রাপ্ত চালকের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৯০ হাজার। এইসব মোটরযান থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১৮ কোটি টাকা। বিআরটিএর বিভিন্ন শাখার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, বর্তমানে এই সংস্থার নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা ৪৮,০৫,৫২৪ (আটচল্লিশ লক্ষ পাঁচ হাজার পাঁচশত চব্বিশ) টি। তবে ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী মোটরযান চালকের সংখ্যা প্রায় ৩৮ লাখ। সূত্র বলছে সারাদেশে বিআরটিএর নিবন্ধিত ১০ লাখ গাড়ী এখন অবৈধ চালকের হাতে। তবে অনিয়মে ছড়াছড়ি এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে স্বচ্ছতা জবাবদীহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিআরটিএর সফলতাও প্রায়  প্রশংসনীয়। 

বিআরটিএর তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায় ১৯৮৭ সালের পরে বিআরটিএর নিবন্ধিত মোটরযানের সংখ্যা ২৭ গুণ বেড়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৯৬ গুণ । শুরুতে ১৮ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ৩৫৪৩.৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে। বিআরটিএ সৃষ্টির পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই সংস্থাটির কাজের পরিমান বেড়েছে প্রায় ১৬০০ গুণ। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল টেকসই ও আধুনিক সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং গ্রাহক হয়রানী ও আর্থিক লেনদেন বন্ধসহ দালাল মুক্ত পরিবেশে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে বিআরটিএকে ১০০ ভাগ ডিজিটালাইজ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি। 

১৯৮৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সাধারণ গ্রাহকদের বিআরটিএর সার্কেল অফিসে স্ব-শরীরে এসে প্রত্যাশিত সেবার তথ্যাদি সংগ্রহ করে ম্যানুয়াল আবেদন দাখিল করে সেবা গ্রহন করতে হতো। সেই সময়ে গ্রাহকদের যাতায়াত বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, সময় নষ্ট এমনকি অসাধু দালালদের খপ্পরে পড়তে হতো সাধারণ সেবা প্রত্যাশিদের। বর্তমানে বিআরটিএর সার্ভিস পোর্টালের (BSP) মাধ্যমে ঘরে বসেই শিক্ষনবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন দাখিল ও প্রিন্ট করা, মোটরযান রেজিষ্ট্রেশনের আবেদন দাখিল করা, রাইডশেয়ারিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেটের আবেদন দাখিল ও প্রিন্ট করা সম্ভব হচ্ছে। 

মোটরযানের মালিকগণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে মোটরযানের অগ্রিম আয়কর, ফিটনেস ও ট্যাক্সটোকেনের বৈধতার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার এবং ফি’র পরিমাণ জানতে পারছে। বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালের মাধ্যমে মোটরযানের অগ্রিম আয়কর, ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনসহ অনান্য ফির পরিমান জানতে পারছে। একই সাথে MASTER/VISA/NEXUS/AMERICAN EXPRESS CARD/BKASH/ROCKET মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে মোটরযানের বিভিন্ন কর ও ফি জমা প্রদান করা যায়। এতে সাধারণ গ্রাহক ঘরে বসে সেবা গ্রহন করতে পারছে। 

মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে গ্রাহকগণ ডিজিটাল রেজিষ্ট্রেশন (এসএমএস) সার্টিফিকেটের বায়োমেট্রিক প্রদান ও সার্টিফিকেটের সংগ্রহের এ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহন করতে এবং মোটরযানের রেট্রো রেফ্লেক্ট্রিব নাম্বারপ্লেট ও আরএফআইডি ট্যাগ প্রস্তুুতের স্ট্যাটাস জানতে ও সংযোজনের এ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহন করতে পারছে। এছাড়াও মোটরযানের ফিটনেস গ্রহনে সময় বাচাঁতে ঢাকা মেট্রো- ১,২,৩, ঢাকা জেলা সার্কেল ও পার্শবর্তী বেশ কয়েকটি সার্কেলে ফিটনেস নবায়নের অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহন করতে পারছে। 

মোটরযানের ফিটনেস কার্যক্রম সময়ক্ষেপণ ও ভিড় এড়াতে ২০২০ সালের ১৫ অক্টেবর অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়। একই সাথে মোটরকার, জীপ ও মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে তৈরির সন হতে ৫ বছর এবং পরবর্তী প্রতি ২ বছর অন্তর ফিটনেস নবায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। নিবন্ধিত মোটরযান সমূহ বিআরটিএর যেকোন সার্কেলে ফিটনেস নবায়ন সার্টিফিকেট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা আরও স্বচ্ছ ও হয়রানীমুক্ত করার লক্ষ্যে যেদিন পরীক্ষা হবে ঐ দিনে রেজাল্ট দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে । পরীক্ষা শেষে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার ফলাফল ঐদিনই বিআরটিএ আইএস সিস্টেমে এন্ট্রি দেয়া হয়। 

অনলাইনে প্রদেয় সেবাসমূহ পেতে অসুবিধা লাঘবে বিআরটিএর কলসেন্টার (১৬১০৭) চালু করা হয়েছে। 

বিআরটিএর কাজে আরো গতিশীলতা আনয়ন ও দালাল মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে মনিটরিং ব্যবস্থার জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। বিআরটিএ সদর কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএর মেট্রো সার্কেল ও বিভাগীয় সার্কেল অফিস গুলোতে সিসি ক্যামরা স্থাপন করে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। বিআরটিএর কর্মরত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটগণের মধ্যে ঢাকা মেট্রো- ০১, ০২, ০৩ ও চট্টমেট্রো-০১, ০২ সার্কেলে ০১ (এক) জন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে সার্বক্ষণিক ভাবে দালালমুক্ত গ্রাহকসেবা নিশ্চিতকল্পে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) যুগ্ন সচিব আজিজুর রহমান প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, বিআরটিএর কর্ম সম্পাদনে গতিশীলতা আনয়নে, মান সম্মত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে বিআরটিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক উপস্থিতি সিস্টেম চালু করা হয়েছে।  এতে কর্মকর্তা-কর্মচারি গণের অফিসে আগমন ও প্রস্তানের সময় রেকর্ডভুক্ত করা হয়। 

২০২১-২২ অর্থবছরে বিআরটিএর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারের এই যুগ্ন সচিব বলেন, করোনার মহামারিতে ২০২০-২১ অর্থবছরে আমাদের টার্গেট ছিল ৩৫০০ কোটি টাকা যা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমাদের টার্গেট ৪ হাজার কোটি টাকা। আমরা এবারও টার্গেট পূরণে সফল হবো।