দৃষ্টিনন্দন আধুনিক বাস টার্মিনাল হচ্ছে সিলেটে, থাকছে ১ হাজার ৫০০ শিটের ওয়েটিং লাউঞ্জ

Passenger Voice    |    ০১:০৭ পিএম, ২০২২-০৫-১৬


দৃষ্টিনন্দন আধুনিক বাস টার্মিনাল হচ্ছে সিলেটে, থাকছে ১ হাজার ৫০০ শিটের ওয়েটিং লাউঞ্জ

কারুকার্যময় লাল ইটের দেয়াল, ইট রঙের স্টিলের ছাউনি, গাছপালা আবৃত গ্রিন জোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ। যাত্রীদের জন্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিটের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জ। এ যেন বিশ্বের উন্নত কোনো দেশের টার্মিনাল। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিক স্থাপত্য নিদর্শন হতে চলেছে সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল।

একসময় যে টার্মিনাল ছিল ময়লার ভাগাড় ও দুর্গন্ধময়। বর্ষায় পা ফেলাই ছিল দায়। সেই টার্মিনালের এমন অবকাঠামো উন্নয়নে উত্ফুল্ল যাত্রী-চালক সবাই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের এ আধুনিক বাস টার্মিনালে অর্থ ব্যয় করছে বিশ্বব্যাংক।

এমজিএসপি (মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় সিলেট সিটি করপোরেশন ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করছে নতুন বাস টানির্মাল কমপ্লেক্স। ছয়তলা ভিত্তির তিনতলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন।

পুরো টার্মিনালের নির্মাণকাজ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে পার্ট-১ বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। রয়েছে ৯৭০ শিটের যাত্রী বসার সুবিধাসম্পন্ন বিশাল হল। রয়েছে ৩০ শিটের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার ও ৫০ জন মুসল্লির ধারণ ক্ষমতার নামাজ কক্ষ। নারী-পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী পৃথক ছয়টি টয়লেট জোন। সেখানে হুইল চেয়ার নিয়েও একজন টয়লেট ব্যবহার করতে পারবেন। ওপরে ওঠার জন্য থাকবে লিফট, রেস্টুরেন্ট ও ফুড কোর্ট। থাকবে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া যাত্রীর জন্য সিক বেড, শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং জোন।

পার্ট-২ অংশ অ্যারাইভাল বিল্ডিং প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের। ডিপারচার বিল্ডিংয়ের মতো এখানে আছে বাস বে, যাত্রীর বসার জন্য ৫১০ শিটের ওয়েটিং স্পেস ও ৩০ শিটের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক টয়লেট সুবিধা, সিক বেড, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট, রেস্টরেন্টসহ যাত্রীদের সব সুযোগ-সুবিধা। পার্ট-১ ও পার্ট-২-এর মাধ্যমে ডিপারচার ও এ্যারাইভাল আলাদা করা হলেও করিডরের মাধ্যমে পুরো স্ট্রাকচার একটি চক্রাকার ভবনে পরিণত হয়েছে। এ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কর্নারে সড়কের সঙ্গে সঙ্গে গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার ভবনে রয়েছে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস। যেখানে থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি  কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস।

টার্মিনালের পেছনের দিকে পার্ট-৩ অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ বেডের বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন এবং মিটিং ও অনুষ্ঠানের জন্য বিশাল মাল্টিপারপাস মিলনায়তন।

নতুন এ টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের তিন সহকারী অধ্যাপক সুব্রত দাশ, রবিন দে এবং মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। তাদের একজন সুব্রত দাশ বলেন, সিলেটের ঐতিহ্য আসাম টাইপ বাড়ি, চাঁদনীঘাটের ঘড়ি বিবেচনা করে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয় ঘটানো হয়েছে নকশায়।

দক্ষিণ সুরমা কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও কদমতলী এলাকার ব্যবসায়ী মকসুদ আহমদ বলেন, নবনির্মিত এ টার্মিনাল খুব সুন্দর। ময়লা-আবর্জনা, দুর্গন্ধসহ নানা অস্বাস্থ্যকর অবস্থা থেকে সিলেট বাস টার্মিনালের এক আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন-আধুনিক টার্মিনাল থেকে মানুষ যেন সার্ভিস পায়।

স্থানীয় সিটি কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন বলেন, আধুনিক বাস টার্মিনাল স্থাপনে মূল সমস্যা ছিল ব্যস্ততম একটি বাস টার্মিনাল খালি করে কাজ শুরু করা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, প্রকৌশলী, পরিবহন ইউনিয়নের নেতা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সবার সম্মিলিত চেষ্টায় এ বিশাল কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল হক বলেন, দেশের মধ্যে সুন্দরতম ও আধুনিক বাসটার্মিনাল নির্মাণের পর আমরা যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে না পারি তবে তা হবে দুঃখজনক। যাত্রীদের নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে তদারকি থাকতে হবে। সিটি করপোরেশন তাদের লোক দিলে ভালো। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদারক করা হবে। টার্মিনাল চালুর আগে সিটি করপোরেশন মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ডালি কনস্ট্রাকশনের সিনিয়র সাইট ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন জানান, প্রকল্পের প্রতিটি কাজ অত্যন্ত যত্ন সহকারে করা হচ্ছে। ওপরের স্টিলের টিন আনা হয়েছে তাইওয়ান থেকে। স্টিল স্ট্রাকচারের জন্য লোহার বার আনা হয়েছে চায়না থেকে এবং প্রতিটি জিনিস বুয়েটে টেস্ট করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মতো বিশাল ওয়েটিং স্পেস রাখা হয়েছে। করোনার সময় কাজ বন্ধ না হলে আরো আগে কাজ শেষ হতো বলে জানান তিনি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, দৃষ্টিনন্দন আধুনিক বাস টার্মিনাল দেশে প্রথম সিলেটেই নির্মিত হয়েছে। এটি পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এখানে পার্কিং এলাকা ছাড়া গাড়ি দাঁড় করানো যাবে না, ইচ্ছামতো কাউন্টার বসানো যাবে না। এ টার্মিনাল আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের সৌন্দর্য আরো কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। আধুনিক এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষের পথে বলে জানান মেয়র।

 

সূত্র: বনিক বার্তা