বিআরটিএতে ১১৯৬ সিএনজির স্ক্র্যাপকরণ শুরু বুধবার, আছে স্ক্র্যাপ টানা পার্টির আতঙ্ক

Passenger Voice    |    ১১:৫১ এএম, ২০২২-০৫-০৭


বিআরটিএতে ১১৯৬ সিএনজির স্ক্র্যাপকরণ শুরু বুধবার, আছে স্ক্র্যাপ টানা পার্টির আতঙ্ক

জাহাঙ্গীর আলমঃ চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিবন্ধিত ২০০৫ সালে তৈরি ১ হাজার ১৯৬ টি সিএনজি বা পেট্রলচালিত অটোরিকশা আগামী বুধবার (১১ মে) থেকে স্ক্র্যাপ করবে বাংলাদশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম সার্কেল। ‘সিএনজি বা পেট্রলচালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭’ অনুযায়ী এসব অটোরিকশার বিপরীতে নতুন গাড়ি প্রতিস্থাপন করা হবে। 

গত ০৫ মে চট্টগ্রাম মেট্রো এলাকার গ্যাস/পেট্রোলচালিত ৪ স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশা স্ক্র্যাপ কমিটির আহবায়ক ও বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ইঞ্জিঃ) শফিকুজ্জামান ভুঁইয়া স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। 

বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা যায়, চট্টমেট্রো-থ-১২-৩৯৭৬ নং সিএনজি অটোরিকশা থেকে শুরু করে চট্টমেট্রো-থ-১২-৪৩৭৫ নং গাড়ি ১১ মে বুধবার, চট্টমেট্রো-থ-১২-৪৩৭৬ নং সিএনজি অটোরিকশা থেকে শুরু করে চট্টমেট্রো-থ-১২-৪৭৮৮ নং গাড়ি ১২ মে বৃহস্পতিবার, সর্বশেষ চট্টমেট্রো-থ-১২-৪৭৮৯ নং সিএনজি অটোরিকশা থেকে শুরু করে চট্টমেট্রো-থ-১২-৫১৭২ নং গাড়ি ১৩ মে শুক্রবার স্ক্র্যাপ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) তৌহিদুল হোসেন প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য নিবন্ধিত টেক্সিগুলোর ইকোনমি লাইফ (সময়সীমা) ইতোমধ্যে ১৫ বছর হয়েছে। পরিবেশবান্ধক নগরী গড়তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক মেয়াদোত্তীর্ণ এসব টেক্সি স্ক্র্যাপিং করা হচ্ছে। স্ক্র্যাপ করার পর এসব সিএনজি টেক্সির নিবন্ধন নম্বর ও তথ্য সার্ভার থেকে মুছে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে গাড়ি মালিকদের নতুন করে গাড়ি পুনঃস্থাপনপূর্বক নতুন নিবন্ধন নম্বর দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, ২০০১-২০০৩ সালে প্রস্তুত হওয়া প্রায় সাড়ে ৮ হাজার সিএনজি অটো রিকশা নষ্ট করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০০৪ সালে প্রস্তুত মোট ৩ হাজার ৯৪৪টি অটোরিকশা নষ্ট করা হয়েছিল ২০২০ সালে। সর্বশেষ ২০০৫ সালে প্রস্তুত হওয়া অটোরিকশা স্ক্র্যাপের কাজে বুলডোজারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল সরবরাহ করবে বিআরটিএ। স্ক্র্যাপকালে অটোরিকশার সব যন্ত্রাংশসহ গাড়িটি আনতে হয়েছে। স্ক্র্যাপের পরদিন নতুন সিএনজি অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন নম্বরের জন্য মালিককে বৈধ কাগজপত্রাদি ও সরকারি ফি জমা দিতে হবে।        

দেশে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল শুরুর পর বিআরটিএ থেকে সেগুলোর চলাচলের মেয়াদ (ইকোনমিক লাইফ) ধরা হয়েছিল ৯ বছর। মালিকদের দাবির মুখে তিন দফায় ৬ বছর বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়।

এবারও সিএনজির স্ক্যাপ দখলে নিবে সাবেক ছাত্রনেতা আবছারঃ
২০২০ সালের  ১৬ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বিআরটিএতে ২০০৪ মডেলের মেয়াদোর্ত্তীন ৩৬১৬ টি সিএনজি অটোরিকশা স্ক্যাপকরন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সিএনজি অটোরিকশা মালিকদের জিম্মি করে নাম মাত্র টাকা দিয়ে স্ক্যাপ গুলো দখলে নিয়েছিল চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি নুরুল আবছার। এবারও একই কায়দায় স্ক্র্যাপ দখলের পরিকল্পনা করছে বলে বিভিন্ন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে অভিযোগ শুনা যাচ্ছে। 

সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির তথ্য বলছে, স্ক্যাপ করা সিএনজি অটোরিকশা গুলো ওজন হিসাব করে প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশার বাজার মূল্য আসে ৫ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে ১১৯৬ টি গাড়ির স্ক্যাপরে মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৫৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সাবেক ছাত্র নেতার এই সিন্ডিকেট গতবার প্রতিটি স্ক্যাপ সিএনজির মূল্য দিয়েছে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। এবারও গড়ে ১৫০০ টাকা করে মালিকদের প্রদান করলেও ১১৯৬ টি গাড়ির মালিককে তারা প্রদান করছে ১৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। হিসেব বলছে কব্জির জোড় দেখিয়ে সিএনজি মালিকদের প্রাপ্য আরো প্রায় ৪১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা চলে যাবে এই ছাত্রনেতার সিন্ডিকেটের পকেটে। 

চট্টগ্রাম সিএনজি অটোরিক্সা অটোটেম্পো ফোর স্ট্রোক মালিক সমিতির (রেজি নং ২২৩০) সভাপতি শেখ মোঃ তানভীর আহম্মেদ। তিনি প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, সিন্ডিকেটের এমন নৈরাজ্যর বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিআরটিএ কর্মকর্তাদের অবগত করলেও তারা এর কোন সমাধান দিতে পারেনি। তাই মালিকরা জিম্মি হয়েই কথিত নেতাদের হাতে পানির দামে স্ক্যাপ তুলে দিতে বাধ্য হয়।