২৫০ কোচ কেনায় রেলের সাশ্রয় ২১৯ কোটি টাকা

Passenger Voice    |    ০৩:৪০ পিএম, ২০২১-১০-২৮


২৫০ কোচ কেনায় রেলের সাশ্রয় ২১৯ কোটি টাকা

২০১৫ সালের নভেম্বরে ২৫০টি কোচ কেনায় প্রকল্প নেয় রেলওয়ে। প্রকল্পটির আওতায় ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়েছে। তবে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অনেক কম ব্যয় হয়েছে কোচগুলো কেনায়। পাশাপাশি ভ্যাট ও অন্যান্য খাতেও ব্যয় কম হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ২১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাই সংস্থাটিতে ফেরত দেয়া হয়েছে বেঁচে যাওয়া ঋণের অংশও।

তথ্যমতে, প্রকল্পটির আওতায় ২৫০টি কোচ ছাড়াও ২টি অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট কেনা হয়েছে। এগুলো কেনায় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৭৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১৫৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এতে সাশ্রয় হয়েছে ২১৯ কোটি ছয় লাখ টাকা, যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ১৬ শতাংশ। ফলে প্রকল্প ব্যয় কমাতে সংশোধিত প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। গত মাসে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

প্রকল্প ব্যয় হ্রাসের প্রস্তাব নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠক ব্যয় কমানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এক চিঠিতে রেলওয়ে থেকে জানানো হয়, ২০০ মিটারগেজ কোচ কেনায় ব্যয় হয়েছে ৭৬৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনায় ব্যয় হয়েছে ২৬৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট কেনায় ব্যয় হয়েছে ১২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১৫৫ টাকা ৪৪ লাখ টাকা।

প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা খাতে ব্যয় হচ্ছে ৯০৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আর সরকারি তহবিল খাতে ব্যয় হয়েছে ২৪৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগে এ দুই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছিল যথাক্রমে এক হাজার কোটি ৮৬ লাখ টাকা ও ৩৭৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বৈদেশিক সহায়তা সাশ্রয় হয়েছে ৯৪ কোটি ছয় লাখ টাকা আর সরকারি তহবিল সাশ্রয় হয়েছে ১২৫ কোটি তিন লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটির জন্য ৩৫ শতাংশ সিডি/ভ্যাট ধরা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ২৫ শতাংশ হারে সিডি/ভ্যাট পরিশোধ করতে হয়েছে। এতে ১১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে, যার পুরোটাই সরকারি তহবিলের। আর ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইন্ডাস্ট্রির কাছে কোচগুলোর ডিজাইন আগে থেকেই ছিল। ফলে এ খাতেও ব্যয় সাশ্রয় হয়। এছাড়া পোর্ট চার্জ ৬০ লাখ টাকা থেকে কমে সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

এদিকে কোচগুলো কেনার জন্য প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন ফি খাতে তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকা, সার্ভে ফি খাতে ৭০ লাখ টাকা, মিটারগেজ কোচগুলো ট্রান্সশিপমেন্ট খাতে দুই কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ৪২ লাখ টাকা, স্টাডি ট্যুর খাতে ১১ লাখ টাকা, ট্রাভেল খরচ ১০ লাখ টাকা, কমিশনিং খাতে ১০ লাখ টাকা ও অফিস স্টেশনারি খাতে ২ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে। এই মধ্যে এসব ব্যয় সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে সমন্বয় করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানা যায়, প্রকল্পটিতে এডিবির ঋণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা। তবে ব্যয় সাশ্রয় হওয়ায় তা কমিয়ে ৯৩৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা করা হয়েছে। বেঁচে যাওয়া প্রায় ৬১ কোটি টাকা এডিবিকে ফেরত দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পিটি ইন্ডাস্ট্রি থেকে ২০১৫ সালে ১২০টি কোচ কিনেছিল রেলওয়ে। এডিবির অর্থায়নে ওই প্রকল্পের আওতায় ১০০টি মিটারগেজ ও ২০টি ব্রডগেজ কোচ কেনা হয়। তখন তারা বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য কোচের ডিজাইন প্রণয়ন ও অনুমোদন করিয়ে নিয়েছিল কোম্পানিটি। ফলে তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা এ প্রকল্পে ব্যবহার করে। এতে নতুন করে ডিজাইন প্রণয়নে বাড়তি কোনো ব্যয় হয়নি। এ জন্য অনেক কম দাম প্রস্তাব করেছিল পিটি ইন্ডাস্ট্রি।

তিনি আরও বলেন, কোচগুলোয় পরবর্তী বায়ো-টয়লেটসহ আরও কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়। তারপরও ব্যয় অনেক কম হয়েছে। বেঁচে যাওয়া অর্থ এরই মধ্যে এডিবিকে ফেরত দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সংশোধন প্রস্তাবও পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে প্রকল্প শেষ করতে সময় বেশি লেগেছে। এজন্য প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, প্রকল্পটির অত্যধিক ব্যয় নিয়ে বিভিন্ন সময় শেয়ার বিজে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেসব প্রতিবেদনে কোচগুলো কেনায় আন্তর্জাতিক বাজারদরের চেয়ে বেশি দর প্রাক্কলনের তথ্য তুলে ধরা হয়। যদিও সে সময় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে।