শিরোনাম
Passenger Voice | ০৮:০৮ পিএম, ২০২১-০৯-১৫
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিআরটিএতে কত মধু এমন প্রশ্ন বেশ কিছু বছর ধরে। রাজধানীর বিআরটিএর ৩ টি সার্কেল অফিস জুড়ে বেশ কয়েকজন সহকারী পরিচালক বছরের পর বছর দ্বায়িত্ব পালন করে আসছে। এই সকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডজন ডজন অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ থাকলেও বিআরটিএর প্রশাসন বিভাগ ঘুরে ফিরে সেই সব দুর্নীতিবাজদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ সার্কেল গুলোর দ্বায়িত্ব দিয়ে বদলি করেন। দীর্ঘ সময় ধরে মিরপুর বিআরটিএ সার্কেল অফিস দখল করে রাজত্ব ও ঘুষ বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন সহকারী পরিচালক ফারহানুল ইসলাম ও শামসুল কবির। ফারহানুল ইসলামকে গতবছরের শেষে নোয়াখালী সার্কেলে বদলি করলেও সহকারী পরিচালক শামসুল কবির কে মিরপুর বিআরটিএ থেকে সরাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
মাত্র আট বছর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেছিলেন ফারহানুল ইসলাম। এরমধ্যেই তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন তার ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে। তবু শেষ রক্ষা হয়নি তার। প্রাথমিক তদন্ত শেষে বিআরটিএর এই সহকারী পরিচালক ফারহানুল ইসলাম নামে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। মামলায় আসামি করা হয়েছে তার ভাই রায়হানুল ইসলামকেও।
আজ বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক রফিকুজ্জামান বাদী হয়ে ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ফারহানুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রাথমিক প্রমান হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় সহকারী পরিচালক শামসুল কবির। এছাড়াও আরেক সহকারী পরিচালক সুব্রত কুমার দেব নাথ রয়েছে বিআরটিএ ঢাকা মেট্রো-২ সার্কেলের দায়িত্বে। তিনিও কয়েক ডজন খানেক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এখনও বহাল তবিয়তে আছেন।
দুদক সূত্র জানায়, বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক ফারহানুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানাধীন রামদয়াল চরআলগী এলাকায়। ২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আয় করেন। দীর্ঘদিন ছিলেন মিরপুরের বিআরটিএ কার্যালয়ে। গত বছরের ২ নভেম্বর তিনি নোয়াখালী সার্কেলে বদলি হন। বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক এবং আইডিএলসিতে সঞ্চয়ী হিসাব, চলতি হিসাব ও ক্রেডিট কার্ড হিসাবসহ মোট দশটি হিসাব খুলে ১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেনদেন করেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব অর্থের কোনও বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় বছর আট মাসের মধ্যে ছয়টি ব্যাংক হিসাব খোলেন। এসব ব্যাংক হিসাবের মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের গুলশান শাখার একটি হিসাবে ছয় কোটি ৯২ লাখ টাকা, একই ব্যাংকের আরেকটি হিসাবে ১৪ লাখ টাকা, একটি ভিসা কার্ডের বিপরীতে ১৮ লাখ টাকা, একটি মাস্টার কার্ডের বিপরীতে ২৮ লাখ টাকা লেনদেন করেন। এছাড়া ফারহানুল ইসলাম তার আপন ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামের নামে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের একই শাখায় নতুন একটি হিসাব খুলে এক কোটি ১৩ লাখ টাকা, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বসুন্ধরা শাখায় আরেকটি হিসাব খুলে ১১ লাখ টাকা লেনদেন করেন।
দুদক সূত্র জানায়, ফারহানুল ইসলাম তার মা লুৎফুন নাহারের নামে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের মিরপুর-১০ নম্বর শাখায় একটি ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডে একটি হিসাব খোলেন। এই দুটি ব্যাংক হিসাবে মা লুৎফুন নাহারের নামে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকা লেনদেন করেন।
দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে রায়হানুল ইসলাম ও তার পরিবার সদস্যদের ১২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এসব অর্থের কোনও বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি তারা।
দুদক সূত্র জানায়, মামলার তদন্তে আরও তথ্য পাওয়া গেলে সেসব যোগ করে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.