সমালোচনার তোপে গাড়ি ফেরত দিচ্ছেন ট্রাস্টিরা

Passenger Voice    |    ১১:৩১ এএম, ২০২১-০৮-১৩


সমালোচনার তোপে গাড়ি ফেরত দিচ্ছেন ট্রাস্টিরা

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ট্রাস্টিদের প্রায় সবাই দেশের প্রতিষ্ঠিত বড় মাপের ব্যবসায়ী। অর্থবিত্ত থাকলেও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির টাকায় বিলাসবহুল রেঞ্জ রোভার গাড়ি ও মোটা অংকের সিটিং অ্যালাউন্সসহ নানা সুবিধা নিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন তারা।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও সম্প্রতি ট্রাস্টিদের নানা আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে একটি কমিটি গঠন করেছে। সব মিলিয়ে এনএসইউর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) সদস্যরা এখন বেশ চাপে রয়েছেন। অন্যদিকে তাদের নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেঞ্জ রোভারগুলোকেও এখন এনএসইউর পার্কিংয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে বিওটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ল্যান্ড রোভারের ‘রেঞ্জ রোভার ২০১৯’ মডেলের নয়টি গাড়ি কেনে এনএসইউ কর্তৃপক্ষ। একেকটি গাড়ি কেনায় খরচ হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। গাড়িগুলোর চালক, জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচও দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে। বিলাসবহুল এসব গাড়ি ব্যবহার করতেন বিওটি চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য বেনজীর আহমেদ, এমএ কাসেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, ফৌজিয়া নাজ, ইয়াসমীন কামাল ও তানভীর হারুন। প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এমএ হাসেম একটি গাড়ি ব্যবহার করলেও তার মৃত্যুর পর গাড়িটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত দেয়া হয়। এমএ হাসেমের মৃত্যুর পর তার ছেলে আজিজ আল কায়সার (টিটু) বিওটি সদস্য হিসেবে যুক্ত হলেও তিনি কোনো ধরনের গাড়ি সুবিধা নিচ্ছেন না। বাকি ট্রাস্টি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে এসব গাড়ি ব্যবহার করতেন। তবে সম্প্রতি এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে গাড়িগুলো একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কিংয়ে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে ট্রাস্টি সদস্য বেনজীর আহমেদ ও মোহাম্মদ শাহজাহানের গাড়ি পার্কিংয়ে যুক্ত হয়েছে।

গাড়ি ফেরত দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এনএসইউ ট্রাস্টি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, গাড়িগুলো তো আমরা ফুলটাইম ব্যবহার করতাম না। যখন লাগত নিতাম। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কিংয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিতাম। গাড়ি কেনা নিয়ে এত আলোচনার তো কোনো প্রয়োজন নেই। গাড়ি কেনার কারণে সরকার সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। ৮০ শতাংশ টাকা তো সরকার শুল্ক হিসেবে পেয়েছে। আসলে নর্থ সাউথ নিয়ে এখন বড় আকারের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশে-বিদেশে ভালো অবস্থান তৈরি হওয়ায় এটা অনেকে মেনে নিতে পারছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে এনএসইউ ট্রাস্টের সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের খবর শুনেছি। কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে এখনো কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি।

ট্রাস্টিদের গাড়ি ব্যবহার নিয়ে ভিন্ন তথ্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন সংক্রান্ত একজন কর্মকর্তা। নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে  তিনি বলেন, বিওটি সদস্যরা মাঝেমধ্যে গাড়ি ব্যবহার করতেন, এটা সত্য নয়। গাড়িগুলো তাদের জন্যই কেনা হয়েছে। তারা সেগুলো সার্বক্ষণিক ব্যবহার করতেন। এর মধ্যে কেউ নিজে আবার কারো পরিবারের সদস্যরা ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি আলোচনা-সমালোচনা শুরু হওয়ার পর তারা গাড়িগুলো পার্কিংয়ে রাখছেন। গাড়ি ফেরত দিলেও চাবি তো এখনো বিওটির সদস্যদের কাছেই রয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এনএসইউর পার্কিংয়ে আটটি গাড়ি পাশাপাশি বডি কভার দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আরেকটি গাড়ির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেটি মেরামতের জন্য গ্যারেজে পাঠানো হয়েছে।

বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার ছাড়াও বেশকিছু আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে নর্থ সাউথ ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিযোগগুলোর একটি হলো সিটিং অ্যালাউন্সের নামে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ। বিওটির সভায় প্রতি সদস্য ৫০ হাজার টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স নেন, যা কয়েক মাস আগে ১ লাখ টাকা ছিল। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর সমালোচনা শুরু হলে তা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়। এছাড়া সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটিসহ ২০টির বেশি কমিটির সভায় যোগ দিয়ে একেকজন ট্রাস্টি ২৫ হাজার টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স নেন, যা আগে ৫০ হাজার টাকা ছিল।

এ ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম বিষয়ে তদন্ত করতে সম্প্রতি একটি কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যে ট্রাস্টের অধীন প্রতিষ্ঠা লাভ করে, সেটি কিন্তু প্রাইভেট নয় পাবলিক। আইন অনুযায়ী, ট্রাস্টের উদ্যোক্তা দানকৃত অর্থ ট্রাস্টে দেয়ার পর সেখানে তার বা তাদের এতে হস্তক্ষেপের আইনত কোনো অধিকার নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালিত হবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ট্রাস্ট আইনের মাধ্যমে। ট্রাস্টিদের নিজেদের ডিড ও রেজল্যুশনে কী লেখা হয়েছে সেটি মুখ্য নয়। যদিও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের বিরুদ্ধে আইনের বাইরে গিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ উঠছে। এসব বিষয়ে প্রমাণ পেলে জনস্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।